আগামীকাল থেকে বন্ধ হচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বিমানবন্দরে অপেক্ষায় অগণিত শ্রমজীবি মানুষের

আন্তর্জাতিক

বিশেষ রিপোর্ট :
মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক পূর্বে ঘোষিত আগামীকাল ৩১ মে-২০২৪ থেকে বাংলাদেশীদের জন্য শ্রমবাজারের দরজা বন্ধ। কাল শুক্রবার থেকে আর কোনো বাংলাদেশী শ্রমিক মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে পারবে না। এতে অপেক্ষমান কর্মীদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে বলে জানা যায়। দুই দেশের সরকারের মধ্যে আন্তরিক সু-সম্পর্ক বজায় রেখে শ্রমজীবি মানুষের স্বার্থে সময় বৃদ্ধি না হলে অপেক্ষামাণ প্রায় ৪০ হাজার কর্মীর মালয়েশিয়া যাওয়া এবং তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশী কর্মীরা ইদানীং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানে উল্টো পথ হয়ে বাংলাদেশি কর্মীরা স্রোতের মতো মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করেছে। এরেই মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কুয়ালালামপুরস্থ দু’টি আন্তর্জাতিক টার্মিনালে প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী পৌঁছে ফ্লোরে অবস্থান করছে বলে জানা যায়। শেষ মুহূর্তে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে কর্মীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। এতে দুর্ভোগ বাড়ছে কর্মী ও নিয়োগকর্তাদের। নিজেদের কর্মী শনাক্তে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নিয়োগকর্তাদের। আর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে কর্মীদের।

এদিকে দেশটির অভিবাসন বিভাগ আজ ৩০ মে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দৈনিক বিদেশি কর্মীদের আগমন হয় ৫শ’ থেকে ১ হাজারের মধ্যে। কিন্ত গত ২২ মে থেকে আগমনের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এ পরিস্থিতিতে যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত ও যানজট নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় অতিরিক্ত কাউন্টার খোলা হয়েছে ও অভিবাসন কর্মকর্তার সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও বিদেশি কর্মীদের পানি ও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে বলেও জানানো হয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের এই বিবৃতিতে।

একটি সূত্র থেকে জানা যায়, বর্তমানে প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমজীবি/কর্মী বর্হিগমন ছাড়পত্র ইস্যু হলেও কর্মীদের প্রবেশের সময় আর মাত্র একদিন বাকি থাকায় বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীরা উল্টো পথে দুবাই, কাতার, চীন, হংকং, সিংগাপুর, ইন্দোনেশিয়া হয়ে মালয়েশিয়াতে ঢুকছে।

শ্রমজীবি কর্মীদের অভিযোগ,বিমানের টিকিটের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে কয়েকটি সিন্ডিকেট চক্র মালয়েশিয়ার ৩০ হাজার টাকার ওয়ানওয়ে টিকিটের দাম এখন ৯৫ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৮ হাজার টাকা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে যে এসব দেখার কেউ নেই। এ ব্যাপারে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় নিরব ভূমিকা পালন করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নির্ধারিত ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এফডব্লিউ সিএমএস প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের দেশটিতে প্রবেশের সবশেষ সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় ৩১ মে।

এদিকে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশটিতে থাকা বাংলাদেশি কর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী বলেন, সিন্ডিকেট চক্রের অনিয়ম দুর্নীতি এবং অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের কারণে আগামীকালের পর থেকে জনশক্তি রফতানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দালালদের হাত বদল হয়ে প্রায় চার থেকে ৫ লাখ টাকা ব্যয় করে কর্মীরা দেশটিতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ১০ লাখ কর্মীর মেডিকেল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। দেশটিতে প্রবেশের সময় বৃদ্ধি না হলে প্রায় ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া গমনে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি কর্মীরা মালয়েশিয়ায় গিয়ে শোষণের শিকার হচ্ছে। দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীরা অস্থিতিশীল ও অসম্মানজনক অবস্থায় রয়েছে। শোষণকারী নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি অপর্যাপ্ত।

মালয়েশিয়ার নিউ স্ট্রেইট টাইমস জানায়, ১ জুন থেকে বর্তমান কোটার অধীনে নতুন কোনো শ্রমিক নেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দীন নাসুশন ইসমাইল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.