পাঁচ অসহায় প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে চরম মানবেতর দিন কাটছে বিধবা মায়ের

জীবন যাপন

বিশেষ প্রতিনিধি :
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার জানাইয়া নোয়াগাঁও গ্রামের আলিমুন নেছা। গৃহীনির কাজ করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করেন। তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়েসহ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৯ জন।

কিন্ত দুই ছেলে ও ছোট মেয়ে ছাড়া সবাই বুদ্ধি, বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী পাঁচ সন্তান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন হতদরিদ্র ওই নারী।

জানা যায়, উপজেলার ৬নং বিশ্বনাথ ইউনিয়নের জানাইয়া নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মৃত আং জলিলের স্ত্রী আলিমুন নেছার স্বামী পেশায় কৃষক ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি মারা যান। এরপর থেকেই ৮ সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন আলিমুন নেছা।

এতিম অসহায় এই প্রতিবন্ধীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে তাদের জীবন। কখনো একবেলা খেয়ে আবার কখনো না খেয়ে থাকতে হচ্ছে এই পরিবারের সদস্যদেরকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সামান্য জমির ওপর টিনশেডের ঘরে সপরিবারে বসবাস আলিমুন নেছার। হতদরিদ্র এই নারীর জীবন চলে গৃহকাজ ও সমাজের বিত্তবানদের সাহায্যের মাধ্যমে। তিন ছেলের মধ্যে বড় মেয়ে হাজেরা (৩০), রুবেনা (২৮), সুবেনা (২৪), সাবিনা (২২) এবং বড় ছেলে আব্দুল অজীজ (২৬) বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। মেজ ছেলে আব্দসু সামাদ বিশ্বনাথ ডিগ্রী কলেজে ও জামিল আহমদ স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছে। আর সবার ছোট মেয়ে তাসলিমা অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী।

প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে মা আলিমুন নেছা জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর খুব কষ্টে খেয়ে না খেয়ে সন্তানদের নিয়ে জীবনযাপন করছি।

তিনি আরো জানান, আমার ছেলে-মেয়েরা কানে শুনে না। কথা বলতে পারে না। ওরা বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদের প্রতিবন্ধী ভাতায় এবং প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় কোন মতে চলছে আমাদের সংসার। আমরা কখনো খাই আবার কখনো উপোষ থাকি। আমাদের ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছুই নেই।

আর্থিক সহায়তায় সরকারি কোন উদ্দ্যোগ নেয়া হয়েছিল কী এমন এ পশ্নের জবাবে আলিমুন নেসা জানান, দুই তিন বছর আগে বিশ্বনাথ উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার সরেজমিনে এসে নগদ বিশ হাজার টাকা দিয়ে যান।

এ সময় প্রতিবন্ধীদের আর্থিক স্বচ্ছলাতার জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু তিন বছেরেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। এব্যাপারে এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরণা দিয়েও কোন কাজ হয়নি।

আলিমুন নেসার দেবর গিয়াস উদ্দিন জানান, সরকারি সামান্য ভাতা দিয়ে ৯ জনের পরিবার চালিয়ে যেতে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছেন তাদের মা। পরিবারে রোজগার কোন ব্যক্তি না থাকায় অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে তাদের জীবন। এ পরিবারের দুঃখ-কষ্টের সীমা নেই।

তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানের পাশাপাশি যদি সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এই প্রতিবন্ধী পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করা হয় তাহলে অনেক উপকার হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা বড় প্রয়োজন বলেও তিনি জানান।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ছয়ফুল হক আমার সংবাদকে বলেন, ওই পরিবারের তিন জনকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড অপ্রতুল হওয়ায় তাদের সবার ভাতা দেওয়া যাচ্ছে না। সরকার একই পরিবারে শতভাগ প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করলে তাদের সবাইকে ভাতার আওতায় আনা হবে।

বিশ্বনাথ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের বলেন, বর্তমানে কোনো পরিবারে শতভাগ প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রতিশ্রুতি আছে দেশের শতভাগ প্রতিবন্ধীদের ভাতার আওতায় আনা হবে। সেটি হলেই ওই পরিবারের সবাইকে ভাতা দেওয়া সম্ভব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.