বাগীশ্বরীর কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জয়ন্তী অনুষ্ঠিত

অন্যান্য

মিলন বৈদ্য শুভ চট্টগ্রাম :
নজরুলের সৃষ্টি মর্মবাণী আমাদের জীবনে সত্য ও সুন্দরের পথ চলার দিক নির্দেশিকা দেয়। নজরুল সংগীত শোনলে মানুষের ভাবনা উন্নত হয় এবং উৎসাহ ও রোমাঞ্চ জাগে। তাঁর গানের ভাষা, সাহিত্যিকথা এবং দেশপ্রেমের মেলবন্ধন খুঁজে পাওয়া যায়। নজরুলের চিন্তা চেতনা প্রধানত দীর্ঘস্থা, স্বাধীনতা, দেশপ্রেম, মানবতা, ধর্ম, সমাজতান্ত্রিক পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে ভরপুর। নজরুল আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার অনন্য বাতিঘর।
থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তন চট্টগ্রাম (টিআইসি) তে বাগীশ্বরী সংগীতালয় এর আয়োজনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীতে বাগীশ্বরী সঙ্গীতালয়ের অধ্যক্ষ, শাস্ত্রীয় সংগীত গ্রন্থ প্রণেতা, বাংলাদেশ বেতার ও টিভি শিল্পী রিষু তালুকদারের একক সংগীতানুষ্ঠান ” সুরে ও বাণীর মালা” অনুষ্ঠানে আলোচনা সভায় বক্তারা একথা বলেন।
নজরুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন আমন্ত্রিত অতিথি উদ্বোধক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আবু তাহের। প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম’র সভাপতি কবি সোহেল আনোয়ার এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগীতশিল্পী রিয়াজ ওয়ায়েজ। বাগীশ্বরী সংগীতালয়ের সভাপতি লায়ন কৈলাশ বিহারী সেনের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নজরুল জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের সমন্বয়ক ও বাগীশ্বরী সংগীতালয়ের সাংগঠনিক সম্পাদক যীশু সেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বাচিকশিল্পী বিপ্লব কুমার শীল। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাগীশ্বরী নজরুল জয়ন্তী উদযাপন পরিষদের আহবায়ক প্রকৌশলী রিমন সাহা, সদস্য সচিব প্রিয়তোষ নাথ, ব্যাংকার উৎপল চক্রবর্তী, শিক্ষক সমীরণ সেন, শিক্ষক পলাশ দে, এড. প্রবীর ভট্টাচার্য, আয়কর আইনজীবী দিলীপ ভট্টাচার্য,
সানি ধর, সংগঠক মহিউদ্দিন ইমন, চুমকি সেন, বৃষ্টি ঘোষ, অমর্ত্য চক্রবর্তী, নয়ন গুহ সহ অসংখ্য গুণী সংগীত পিপাসুবোদ্ধারা।
সংগীতানুষ্ঠানে ছিল একক সংগীত, একক আবৃত্তি, সমবেত সংগীত ও দলীয় নৃত্য। মুলতঃ দর্শকদের মুল আকর্ষণ ছিলো শিল্পী রিষু তালুকদারের একক সংগীতানুষ্ঠান। তবে অনুষ্ঠানের ফাঁকেই একক আবৃত্তিতে আবৃত্তিশিল্পী সোহেল আনোয়ার তার একক পরিবেশনায় বুঝিয়ে দেন নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় কিভাবে ভেদাভেদহীন একটি সভ্যতা বেড়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে শিল্পী রিষু তালুকদার পরদেশী মেঘের ঘনঘটা কিংবা তুুমি যদি রাধা হতে শ্যাম, আমারি মতন…। এই গানগুলো শিল্পীর সুরেলা কন্ঠের সাথে নুপুরের ছন্দে দলীয় নৃত্যে দেখে মুহুর্মুহু করতালিতে শিল্পীকে অভিনন্দন জানালেন দর্শক-শ্রোতারা। শিল্পী যেন এক পূর্ণিমার আলোয় মনোজ্ঞ সংগীতানুষ্ঠান উপহার দেন। এসময় সমঝদার শ্রোতারা কখনো কখনো শিল্পীর সাথে কণ্ঠ মেলান। এসময় শ্রোতারা শিল্পীর মনের বাঁক ছুঁয়ে গেয়ে উঠে “মোরে ভালোবাসায় ভুলিয়ো না, পাওয়ার আশায় ভুলিয়ো.., পদ্মার ঢেউরে মোর শুন্য হৃদয় পদ্মা নিয়ে যা, যা রে…দোলন চাঁপা বনে দোলে, দোল-পূর্ণিমা রাতে চাঁদের সাথে…, আধখানা চাঁদ হাসিছে আকাশে, আধখানা চাঁদ নিচে… এমনি অনেক নজরুল গীতিতে। কিন্তু শ্রোতারা বাড়ি ফিরে যেতেই গুণগুণ করেন শিল্পীর শেষ পরিবেশনা আরেক নজরুলগীতি ” আমায় নহে গো ভালবাস, শুধু ভালবাস মোর গান…। শিল্পী রিষু তালুকদারের একক নজরুলের গানে মুগ্ধ দর্শক-শ্রোতা।
এমনি মন্ত্রমুগ্ধকর সংগীতের রাতে সুরের রোশনাই বাগীশ্বরী সংগীতালয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত প্রত্যেক অতিথি শাস্ত্রীয় সংগীতের গ্রন্থ, ফুলেল শুভেচ্ছা ও স্মারক সম্মাননা তুলে দেন।
নৃত্যে অংশগ্রহণে ঘুঙুর নৃত্যকলা কেন্দ্র’র দলপ্রধান স্বপন দাশ, “নাট্যশাস্ত্রম’র হৃদিতা দাশ ও সুরতীর্থ’র সঞ্চিতা দস্তিদারের দলপ্রধান হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া।যন্ত্রে সহযোগিতায় ছিলেন কীবোর্ডে নিখিলেশ বড়ুয়া, বেহেলায় শ্যামল চন্দ্র দাশ, তবলায় প্রীতম ভট্টাচার্য ও অক্টোপ্যাডে রনি চৌধুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published.