আগামী রবিবার থেকে বিনামূল্যে সরবরাহ হবে দেশেই তৈরি করোনার ঔষধ

জাতীয়

অনলাইন নিউজ ডেস্ক :
 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে এসেছে মহামারী করোনা ভাইরাস। দেশে দেশে চলছে লকডাউন, ঘরে বন্দি মানুষ। তারপরেও প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় সাড়ে ১৬ লাখেরও বেশি মানুষ। মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় লাখ ছুঁই ছুঁই। কার্যকর কোন ওষুধ নেই, নেই কোন প্রতিষেধক।

তবে গবেষকরা দাবি করলেন, করোনাকে কাবু করার সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র তৈরি করে ফেলেছেন তারা। করোনা থেকে রক্ষা পেতে ওষুধ আবিষ্কারের দাবি করেছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। আশার কথা হলো- এটি এখন বাংলাদেশেও তৈরি হচ্ছে।

জাপানের ফুজিফিল্ম তয়োমা ফার্মাসিউটিক্যালস লি. তৈরি করেছে ফ্যাভিপিরাভির ‘অ্যাভিগান’ নামে ট্যাবলেট। যা কিনা করোনা ভাইরাসকে কার্যকরভাবে মেরে ফেলতে সক্ষম। এরই মধ্যে অন্তত ডজনখানেক ওষুধ যেমন- ফ্যাভিপিরাভির, রেমডেসিভির, ইন্টারফেরন আলফা টুবি, রিবাভিরিন, ক্লোরোনকুইনিন, লোপিনাভির এবং আরবিডল কভিড-১৯ চিকিৎসার সারিতে জমা হয়েছে। সরাসরি নভেল করোনাভাইরাসের জন্য তৈরি না হলেও অন্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করা ড্রাগ করোনাভাইরাস ঠেকাতে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার শুরু হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় ট্যাবলেট অ্যাভিগান তৈরি করছে জাপানের ফুজি ফিল্ম কোম্পানির সাবসিডিয়ারি ওষুধ কোম্পানি তয়োমা কেমিক্যাল। ট্যাবলেটটির জেনেরিক নাম ফ্লাভিপাইরাভির। ওষুধটি এখন বাংলাদেশের বেক্সিমকো ও বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস তৈরি শুরু করছে বলে দেশের একটি জাতীয় পত্রিকার অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস আগামী রোববার (১২ এপ্রিল) ওষুধটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসনে হস্তান্তর করবে। ওষুধ‌টি সরকারকে সরবরাহ করার পাশাপাশি যে সমস্ত হাসপাতালে করোনা রোগী আছে সেখানেও সরবরাহ করা হবে। তবে এখনই ফার্মেসিতে সরবরাহ করা হবে না। ম্যাটেরিয়াল স্বল্পতার কারণে মাত্র ১০০ রোগীর জন্য ওষুধটি তৈরি হবে, তবে এ মাসের মধ্যেই ওষুধটি উৎপাদন বাড়াতে পারবে বলে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস যে সমস্ত হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি আছে সেখানে ওষুধটি পৌঁছে দেবে। প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম ৪০০ টাকা হলেও এখন এটি বিনামূল্যে আক্রান্ত রোগীদের সরবরাহ করা হবে।

ওষুধটি প্রস্তুতের পেটেন্ট জাপানের হলেও অনুন্নত দেশ হিসেবে তারা বাংলাদেশকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধটি প্রস্তুতের অনুমোদন দিয়েছে।

ফ্লাভিপাইরাভির ওষুধটি কভিভ-১৯ রোগের সুনিশ্চিত চিকিৎসা নয়, তবে ১২০ জন রোগীর ওপরে পরীক্ষা করে সাফল্য পাওয়া গেছে। আক্রান্ত তরুণ রোগীদের ওপর ওষুধটি ব্যবহার করে সাত দিনে এবং বয়স্কদের ওপর ব্যবহার করে নয় দিনে কোভিড-১৯ নেগেটিভ হয়েছে। ফ্লাভিপাইরাভির ওষুধটির সাথে ওরভেসকো নামক আরও একটি ওষুধ মিলিয়ে ট্রায়ালগুলো করা হয়েছে।

জাপান, তুরস্ক এবং চায়না ওষুধটি ব্যবহার করছে। কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের তিনটি পর্যায়- সাধারণ, মাঝারি ও মারাত্মক। এই তিন ক্ষেত্রেই ওষুধটি কার্যকর। গর্ভস্থ শিশুর ওপর ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।

প্রসঙ্গত, গত ৮ এপ্রিল অসম্পাদিত ‘মেডিকেল আর্কাইভ’ নামে এক প্রি-প্রিন্ট জার্নালে প্রকাশিত চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিংহুয়ান ওয়াং-এর নেতৃত্বে এক গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অ্যাভিগান জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট আর এক ওষুধ আরবিডলের সাথে তুলনায় কার্যকরী যা করোনাভাইসের চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

তাদের গবেষণা বলছে, অ্যাভিগান ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত চীনের উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের জংগান হাসপাতাল উহান লেসেশান হাসপাতাল এবং হুবেই প্রদেশের আর একটি হাসপাতালে ২৩৬ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত মাত্র সাত দিনের মধ্যে অন্তত ৬১ শতাংশ রোগী ৭ দিনে জ্বর, কাশি থেকে মুক্ত হোন। এছাড়া এইসব রোগীদের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য কৃত্রিম অক্সিজেন সরবরাহ করার প্রয়োজন পড়েনি।

এন্টিভাইরাল ওষুধের মধ্যে অন্যতম জাপানের ফুজিফিল্ম তয়োমা ফার্মাসিউটিক্যালস লি.-এর তৈরি ফ্যাভিপিরাভির অ্যাভিগান। যেটি ২০১৪ সাল থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হয়। চীন উহানে কোভিড-১৯ ব্যাপক প্রাণহানির পর সেই দেশের সরকার গত মার্চে দাবি করে, এভিগান ওষুধ ‘কোভিড-১৯’ প্রতিরোধে ভাল কাজ দিয়েছে। চীনের দাবির এক মাসের মধ্যে জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রী কাতসুনোবু কাতো ইঙ্গিত দেন যে ‘এভিগান’ কোভিড -১৯-এর বিরুদ্ধে পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করছে।

আর এরপরই মূলত কোভিড-১৯ জন্য অ্যাভিগানকে প্রস্তুত করতে উঠে পড়ে লাগে জাপান। এর মধ্যে গত ৩১ মার্চ ফুজিফিল্মর প্রেসিডেন্ট জুনিজি ওকাদা এক বিবৃতিতে, ফ্যাভিপিরাভিরের জেনরিকের অ্যাভিগান তৃতীয় ধাপে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছে দাবি করেন। কোভিড-১৯ মহামারি রুখতে বিশ্বের অন্যন্য দেশের চাহিদা অনুযায়ী জাপান সরকারের পরামর্শক্রমে তারা এই ওষুধ সরবরাহ করবে জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.