কুমিল্লার তিতাসে দুই গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় ৪ গ্রামের লোকজন আতঙ্কেঃ যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

অপরাধ

হালিম সৈকত, তিতাস (কুমিল্লা)থেকে :
কুমিল্লার তিতাস উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়নের দুলারামপুর- মানিককান্দি গ্রামের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে।

ঘটনাটি গতকাল মঙ্গলবার ইদের দিন সন্ধ্যা থেকে রাত প্রায় ৯ টা পর্যন্ত চলে। ভিটিকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্লা ও সাবেক মেম্বার সাইফুল ইসলাম গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এতে আবুল হোসেন মোল্লার অফিসসহ এলাকার ৮ টি ঘর ভাংচুর হয় এবং কিছু ঘরে লুটপাটও হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। দফায় দফায় সংঘর্ষে ভাংচুর হয় সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আবুল হোসেন মোল্লার দুলারামপুর বাজারের ব্যক্তিগত অফিস, বর্তমান মেম্বার হাজি আঃ রবের বাড়ি,রমিজ উদ্দিনের বাড়ি, সেকান্দার মাষ্টারের বাড়ি, দাউদ মিয়ার বাড়ি, আ’লীগ নেতা মরহুম মাজহারুল ইসলামের স্ত্রীর ঘর, কালন বিবির বাড়ি ও মোল্লার সমর্থক তানভীর হাসানের ঘর।

এগুলো সাইফুল মেম্বারের সমর্থকরা ভাংচুর করে বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।

অপরদিকে সাবেক মেম্বার সাইফুল ইসলামের ঘর বাড়ি ভাংচুর করে মোল্লার সমর্থকরা। সিসি ক্যামেরা ও হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে যায়।

এই বিষয়ে হাজি আঃ রব মেম্বার বলেন, সাইফুল মেম্বারের ছেলে শাহিন, স্বপন, সুমন, সোহরর, মুর্শিদ মিয়ার ছেলে মাছুম,সালামতের ছেলে আকাশ, আলালের ছেলে শাহাদাত, মেরাজ, মোস্তফা, আরিফের নেতৃত্বে ২০০-২৫০ জনের একটি দল রাত আটটার দিকে আমার বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বাসায় এসে আমার ছেলে মিজানুর রহমান ও শোভনকে খুঁজতে থাকে। দেশীয় লাঠিসোঠা, হকিস্টিক, রাম দা নিয় মহড়া দিতে থাকে এবং আমাকে বলে তোর ছেলেরা কই?

মিজান আর শোভনকে হত্যা করা হবে। হত্যার উদ্দেশ্যে তারা ঘরের ভিতর তান্ডব চালায়। ঘর থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে যায় এবং ব্যাপক ভাংচুর চালায়। আমাদের অপরাধ আমরা আবুল হোসেন মোল্লার নির্বাচন করেছি!

অপরদিকে সাইফুল মেম্বারের ছোট ছেলে সোহরাব ভাংচুর ও লুটপাটের কথা অস্বীকার করে বলেন, আবু মোল্লা বিগত ১০ বছর এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে। এখনও সে এবং তার ছেলে জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে বিনা উস্কানিতে আমার বাড়ি ঘর, সিসি ক্যামেরা এবং মোটরসাইকেল ভাংচুর করেছে। এখনও পর্যন্ত মোটর সাইকেলটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আবুল হোসেন মোল্লার বেয়াইর বাড়ি থেকে ব্যাপক পরিমান দেশীয় অস্ত্র পুলিশ উদ্ধার করেছে। এগুলো কি উদ্দেশ্যে রাখা হয়েছে? আত্মরক্ষার্থে কি এত অস্ত্র কারো বাড়িতে থাকতে পারে?

আবুল হোসেন মোল্লার ছেলে জহিরুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা এলাকায় থাকি না, ইদ করতে এলাকায় এসেছি। আমরা বড় আতঙ্কে আছি। ঘর থেকে বের হতে পারছি না সাইফুল মেম্বারের ছেলেদের ও তাদের ভাড়া করা সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে। বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড়া করে মহড়া দিচ্ছে। ২০০৫ সালের বিএনপির আমলের তান্ডব শুরু হয়েছে বলে এলাকাবাসী মনে করেন।

থানায় যাব সেটাও যেতে পারছি না। তাদের হামলার ভয়ে কিছু লাঠি ও লোকজন নিয়ে বসে ছিলাম আত্মরক্ষার্থে। তবে ফেইসবুক লাইভে যে পরিমাণ দেখানো হয়েছে, সেগুলো সাইফুল মেম্বারের ছেলেদের সাজানো নাটক। তারা নিজেরাই এগুলো জানালার ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢুকিয়েছে। পরে লাইভে এসে আমাদেরকে সন্ত্রাসী সাজানোর চেষ্টা করেছে।

সাইফুল মেম্বারের বাড়ির সিসি ক্যামরার হার্ডডিস্কের ব্যপারে জহিরুল ইসলাম কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সাইফুল মেম্বারের ঘর থেকে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে আক্রমনের ভিডিও চিত্র ফ্লাস হবে বলেই নিজেরা সিসি ক্যামরার হার্ডডিস্ক লুকিয়ে রেখেছে।

তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুধীন চন্দ্র দাস বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। স্পটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার জন্য বলা হয়েছে। ঘটনা শোনার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোন পক্ষই মামলা দায়ের করেনি।

ভিটিকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাংবাদিক বাবুল আহমেদ বলেন, গন্ডগোলের কথা শুনেই আমি পুলিশসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজার রাখার জন্য অনুরোধ করি। তবে একটি ঘর থেকে যে পরিমান দেশীয় অস্ত্র পাওয়া গেছে তা শান্তির লক্ষে কিংবা আত্মরক্ষার্থে হতে পারে না। বিষয়টি কুমিল্লা ২ আসনের এমপি সেলিমা আহমাদ মেরী দেখছেন। তিনি এই বিষয়টি সমাধানের লক্ষে কাজ করছেন।
তবে বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোন মূহুর্তে ঘটতে পারে অঘটন।

মুলত তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করেই এত বড় ঘটনাটি ঘটেছে। আবুল হোসেন মোল্লার নাতি মেহেদী হাসান

তিতাস উপজেলা আ’লীগের সহ সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আনোয়ারকে গালি দেয়। তা শুনে মোয়াজ্জেম হোসেন আনোয়ারের ভাতিজা আকাশ আহমেদ সম্রাট এবং প্রতিবাদ করে। পরে মেহেদী হাসান বিষয়টি আবুল হোসেন মোল্লাকে জানালে তিনি এসে আকাশকে বলে আমাকেও তো তোর চাচা আনোয়ার গালাগালি করে, তুই কি সেটার বিচার করতে পারবি? তখন আকাশ বলে প্রমাণ দিতে পারবেন? আর এই বিষয়টি থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ছড়িয়ে পরে পুরো ইউনিয়নে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.