বিশেষ প্রতিবেদক :
কুমিল্লায় ছোট বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আপন বড় ভাই তোফায়েল আহমেদ রাসেল (৩৫) এর বিরুদ্ধে। নিজেকে সেইভ করে জন্য এই ঘটনা জেনে যাওয়ায় সেই নারীর স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ওই বড় ভাই। জেলার লাকসামের কান্দিরপাড় ইউনিয়নের রনচৌ গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।
ভুক্তভোগী ওই স্বামী ভাবকপাড়া গ্রামের মকবুল আহমেদের ছেলে শরীফুল ইসলাম (২৮)। আর ভাইয়ের ধর্ষণের শিকার ওই নারী লাকসামের কান্দিরপাড় ইউনিয়নের রনচৌ এলাকার মৃত শামছুল হকের মেয়ে নুসরাতুল জান্নাত স্বর্না (২০)।
ভুক্তভোগী ওই স্বামী জানান, গত ১৮ মার্চ পারিবারিকভাবে স্বর্ণার ও আমার বিয়ে হয়। বিবাহের প্রথম দিকে আমার স্ত্রী শারিরিক ভাবে অসুস্থ থাকে। পরবর্তী সময় আমাদের মধ্যে যখন শারিরিক সম্পর্ক হয় স্ত্রীর শারিরিক অবস্থা দেখে আমার কাছে সন্দেহ হয়। কিন্তু আমি বিষয়টি বুঝে ওঠতে পারিনি। পরে গত ৮ মে দিবাগত রাতে আমার শ্বশুর বাড়িতে আমার স্ত্রী শারিরিক সম্পর্কে আমাকে আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে আমি তাকে তার শারিরিক অবস্থা এমন কেন হলো সত্য কথা বলার জন্য অনুরোধ করি। সে আমাকে উত্তরে বলে, তার আপন মেজো ভাই তোফায়েল আহমেদ রাসেল(৩৫) আমাদের বিয়ের পূর্বে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন যাবত শারিরিক সম্পর্ক করতো। যার কারণে সে একাদিক বার অসুস্থ হয়ে পরেছে। এমন কথা শুনে আমার কাপুনি চলে আসে। আমি অনেক অসুস্থ হয়ে যাই। সকালে আমার স্ত্রী আমাকে বলে, আমি চাইলে সে তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করবে। কিন্তু আমি তাকে নিষেধ করি। তার কাছ থেকে ভবিষ্যৎ ঝুঁকি এড়াতে একটি লিখিত এবং ভিডিও সাক্ষাৎকার প্রমাণ হিসেবে রাখি। সকাল প্রায় ৯ টার সময় আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে স্ত্রী ও অন্যান্য সদস্যদের সাথে বিদায় নিয়ে চলে আসি।
পরবর্তিতে আমি তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলি তাড়া বিষয়টি স্বীকারোক্তি দেয়। কোন প্রকার হস্তক্ষেপ ছাড়াই বিষয়টি মেনে নিতে বলে। আমি আলেমদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আমার কি করনীয় তা জানতে চাই। আলেমদের পরামর্শক্রমে আমার স্ত্রীকে আমার শ্বশুর বাড়ির সাথে সাময়িকভাবে সম্পূর্ণ সম্পর্ক ত্যাগ করে আমার বাড়িতে আসতে বলি আমার স্ত্রীও আমার কথায় সম্মত হয়। কিন্তু তার একদিন পর আমার স্ত্রী আমাকে কল দিয়ে তার উপর জোর করে তার স্বীকারোক্তি পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে জানায় সে বলে তাদের সামাজিক কারণে তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে চায়না। প্রয়োজনে আমাদের সম্পর্ক ভেঙে গেলেও সে যেন তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা না বলে। তার পরিবারের লোকজন আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে আসতেছিল যার কারণে আমার এবং আমার পরিবারের সম্মানহানী হচ্ছিল। এসব ঘটনায় আমি দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে ৪ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আমি সামান্য সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর ২৩ জুন ধর্ষক তোফায়েল (স্ত্রীর বড় ভাই) আমার বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে মিথ্যা মামলা করে। আমি তাদের স্থানীয় মেম্বর ও চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু মামলা হয়ে যাওয়ায় তারা আদালতের সিদ্ধান্তকে দেখতে বললেন। তোফায়েল মামলায় লিখে আমি তার বোনকে নির্যাতন করেছি। অথচ আমি মামলায় উল্লেখের তারিখে বাড়িতেই ছিলাম না। তাছাড়া আমার স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে ছিল। ১৪ জুলাই পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে আমি ২০ জুলাই আমি জেল থেকে বের হই। এবং আদালতে আমার মামলা মিথ্যা বলে দাবি করে কাগজপত্র জমা দেই। পরে ২৪ জুলাই আদালতে আমার সকল কাগজপত্র সত্য বলে প্রমাণ হওয়ায় আদালত মামলাটি খারিজ করে আমাকে মুক্তি দেয়। তখন তার ভাই তাকে ধর্ষণ করেছে তাই প্রমাণিত হয়। পরে আমি তাকে ডিভোর্স দিই।
শরীফুলের ব্যবসায়িক এলাকা লাকসামের মুদাফরগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, শরীফুলের সমস্যা সে পারিবারিকভাবে মিমাংসা করতে বলেছিল সবাইকে। আমরাও রাজি ছিলাম। এত ঝামেলা হতো না। সে চেয়েছিল যত যাইহোক মেয়েটার যেহেতু দোষ নেই তাকে ক্ষমা করে দিয়ে তার সাথেই সংসার করবে। কিন্তু তারা শরীফুলের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মামলায় তাকে খালাস দিয়েছে আদালত। তার বড় ভাই লোকটা ভালোনা এলাকার মানুষও বললো।
এবিষয়ে অভিযুক্ত তোফায়েলকে কল দিলে তিনি প্রথমেই এই প্রতিবেদককে প্রশ্ন করেন তার বোনের রেকর্ড ও লিখিত অভিযোগ গুলো কোথায় পাওয়া গেছে। এসময় তিনি তার পরিচয় লুকানোর চেষ্টা করেন। পরে একাধিক প্রশ্ন করায় তার বোন ভুল করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সব মিথ্যা অভিযোগ। তাই তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছি। মামলা খারিজ করে দিয়েছে এমন তথ্যে তিনি বলেন, আমার বোনকে কাবিনের টাকা দিতে বলেছে শরিফুল তাই করেছে। এর চেয়ে বেশি কিছুনা।
তাছাড়া আমরা ১০ ভাই বোন। স্বর্না সবার ছোট। আমি আমার বোনের সাথে এমন কিছু করবো এটা কেউ বিশ্বাস করবে!
এই বিষয়ে স্বর্না আক্তারকে কল দিলে তার মোবাইলের কল রিসিভ করেন পারভেজ নামের একজন। তিনি স্বর্নার বড় ভাই পরিচয়ে বলেন, মামলাটি খারিজ করেছে আদালত। এ বিষয়ে আর কোন কথা নেই।
ঘটনার বিষয়ে কান্দিরপাড় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বলেন, ছেলের পক্ষ আমার কাছে এসেছিল। আমি পরে মেয়ের পক্ষকে নোটিশ দিয়েছি একসাথে বসার জন্য। কিন্তু মেয়ের পক্ষ আমার কথা না মেনে আমাকে না জানিয়ে মামলা করেছে। ওই মামলায় ছেলেকে খালাস দিয়েছে।