
বিশেষ প্রতিবেদক :
কুমিল্লার হোমনা থানায় সাম্প্রতিক এক মাদক মামলায় চাঞ্চল্যকর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে, একটি পিকআপ ভ্যান থেকে ২০ কেজি গাঁজা জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে উঠে এসেছে—সেদিন প্রকৃতপক্ষে ১০০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হলেও তা গোপন করে মাত্র ২০ কেজি দেখিয়ে মামলা রুজু করা হয়।
গত ২৫ আগস্ট ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ, সকালে হোমনা থানার এসআই (নিরস্ত্র) জীবন বিশ্বাস সঙ্গীয় ফোর্সসহ নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালান। এজাহার অনুযায়ী, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হলুদ রঙের একটি টাটা কোম্পানির পিকআপ ভ্যান আটক করে তল্লাশি চালিয়ে ২০ কেজি গাঁজা জব্দ করা হয়। গ্রেফতার করা হয় একজন মাদক ব্যবসায়ীকে, যার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮-এর অধীনে মামলা দায়ের করা হয়।
তবে প্রকৃত চিত্র ভিন্ন!
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী ও গোয়েন্দা সূত্র দাবি করছে, সেদিন একটি নয়, দুটি হাই-এক্স মাইক্রোবাস আটক করা হয়েছিল। একটি গাড়ি সামনের দিক থেকে ‘ক্লিয়ারেন্স’ দিচ্ছিল, অপরটিতে মাদক বহন করা হচ্ছিল। যৌথ তল্লাশিতে প্রায় ১০০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয় এবং দুটি টিআর এক্স মডেলের মাইক্রোবাস ও দুইজন চালক আটক করা হয়।
তবে পরে রহস্যজনকভাবে গাড়ি ও চালকদের ছেড়ে দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, আটককৃতদের ছেড়ে দিতে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি অংশ বিকাশের মাধ্যমে, আর বাকিটা নগদে গ্রহণ করেন এসআই জীবন বিশ্বাস। ঘুষের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয় টিআর এক্স গাড়ি দুটি এবং তাদের চালক। এরপর, মামলার রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যায়, আসল ঘটনা আড়াল করতে একটি ভুয়া পিকআপ ভ্যান সংগ্রহ করে তাতে মাত্র ২০ কেজি গাঁজার কথা উল্লেখ করে মামলা রুজু করা হয়।
গাঁজার বড় অংশ কোথায় গেল?
সূত্র আরও জানায়, বাকি ৮০ কেজি গাঁজা এসআই জীবন বিশ্বাসের ব্যবহৃত একটি ব্যক্তিগত নোয়া মডেলের গাড়িতে করে ঢাকার কমলাপুর এলাকার একটি বড় মাদক সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। স্থানীয়দের দাবি, এই ঘটনা নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই জীবন বিশ্বাস এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
আগেও ছিল বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত-
জানা যায়, কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে এসআই জীবন বিশ্বাস এক সিআর মামলার সূত্র ধরে ৩৭৫ লাখ টাকার ফেনসিডিল সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তখনকার জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান তাকে শোকজ করেন এবং ডিবির কার্যক্রম থেকে সরিয়ে মিডিয়া সেলের দায়িত্বে রাখেন।
পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। নতুন জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান ডিবির সদস্যদের রোটেশন অনুযায়ী অন্যত্র বদলির নির্দেশ দিলেও জীবন বিশ্বাস সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে আরও ৬–৭ মাস পর্যন্ত ডিবিতে বহাল ছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি প্রকাশ্যে বলেন, ২০ লক্ষ টাকা খরচ হলেও আমি আবার ডিবিতে ফিরবো।
আবারও আলোচনায় জীবন বিশ্বাস
বর্তমানে তিনি হোমনা থানায় কর্মরত এবং আবারও মাদক সংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, আইনের রক্ষক হয়েও কিছু পুলিশ কর্মকর্তা মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে তাদের ছাড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে মাদক সিন্ডিকেট আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নীরব, উদ্বেগ বাড়ছে আইনি মহলে
ঘটনার বিষয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে আইন সচেতন মহলের মত, যদি সত্যিই ১০০ কেজি গাঁজা জব্দ হয়ে থাকে অথচ এজাহারে ২০ কেজি দেখানো হয়, তবে এটি ভয়াবহ দুর্নীতির উদাহরণ। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি এবং দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন।
এসআই জীবন বিশ্বাসের বক্তব্য চেয়ে তার মুঠো ফোনে কল দিলে তিনি জানান,আমি কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাংবাদিক শাহাআলম ভাই,খায়ের ভাই,ফারুক ভাইদের মাধ্যমে সব সমাধান করে প্রতিবাদ দিয়ে দিয়েছিন বলে জানান।