আব্দুল্লাহ আল মানছুর :
গত ৭ নভেম্বর বিকেলে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় ০৫ বছরের শিশু ফাহিমা আক্তার নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ সংক্রান্ত বিষয়ে শিশু ফাহিমার পিতা আমির হোসেন(২৫) দেবিদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে যার ডায়েরী নাম্বর ৪৬৪ তারিখ- ১১ নভেম্বর ২০২১। নিখোঁজের পর ভিকটিমের পিতা আমির হোসেন ০৭ ও ০৮ নভেম্বর ২০২১ইং তারিখে উপজেলার আশ-পাশের বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে এমনকি গত ০৮ নভেম্বর ২০২১ইং তারিখ ঝার-ফুঁক দিয়ে মেয়েকে খোঁজার জন্য একজন কবিরাজকেও খবর দেওয়া হয়। পরবর্তীতে গত ১৪ নভেম্বর ২০২১ তারিখ পুলিশ কর্তৃক কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর জনৈক নজরুল মাস্টারের বাড়ির সামনে কালভার্টের নিচে সরকারি খালের ডোবা থেকে নিহত ভিকটিমের বস্তা বন্দী লাশউদ্ধারকরা হয়। এপ্রেক্ষিতে আমির হোসেন ভিকটিমের লাশটি তার মেয়ে ফাহিমা আক্তার এর বলে সনাক্ত করে। উক্ত বিষয়ে ভিকটিমের বাবা ঘাতক আমির হোসেন বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে, যার মামলা নং-১১, তারিখ- ১৪নভেম্বর ২০২১ইং, ধারা- পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩০২/২০১/৩৪। উক্ত নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকরে ও বিভিন্নসংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। র্যাব বর্ণিত ঘটনার প্রেক্ষিতে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং হত্যাকান্ডেররহস্য উৎঘাটন ও আসামী গ্রেফতারের নিমিত্তে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১ এরঅভিযানে গত ১৬ নভেম্বর ২০২১ইং তারিখ রাতে কুমিল্লার দেবিদ্ধার ও রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ভিকটিমের পিতা ঘাতক (১) আমির হোসেন (২৫), দেবিদ্বার, কুমিল্লা, (২) রবিউলআউয়াল (১৯), দেবিদ্বার, কুমিল্লা, (৩) রেজাউল ইসলাম ইমন (২২), দেবিদ্বার, কুমিল্লা, (৪) লাইলি আক্তার (৩০), দেবিদ্বার, কুমিল্লা এবং (৫) সোহেল রানা (২৭), দেবিদ্বার, কুমিল্লাদের’কে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা এই নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, ভিকটিমের বাবা আমির হোসেন এর সাথে গ্রেফতারকৃত লাইলি আক্তার(৩০) এর পরকিয়ার সম্পর্ক ছিল। গত ০৫নভেম্বর২০২১ তারিখে লাইলি আক্তার ও আমির হোসেনকে মেয়ে ভিকটিম ফাহিমা আক্তার আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলে। এতে লাইলি আক্তার ও আমির হোসেন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে এবং লাইলি আক্তার এই বিষয়টি যেন কেউ জানতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমির হোসেনকে চাপ দিতে থাকে। লাইলি আক্তারের প্ররোচণায় গত ০৬নভেম্বর ভিকটিমের পিতা ঘাতক আমির হোসেন গ্রেফতারকৃত অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে ভিকটিম শিশু ফাহিমা আক্তারকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করে এবং আমির হোসেন লাইলি আক্তারকে পরিকল্পনা বাস্তাবায়নের বিষয়টি জানায়। গ্রেফতারকৃত ঘাতক আমির হোসেন লাইলি আক্তারকে নিয়ে আরো পরিকল্পনা করে মেয়েকে হত্যা করার পর সে তার স্ত্রীকে ডিভোর্স অথবা প্রয়োজনে হত্যা করে হলেও লাইলি আক্তারকে বিয়ে করবে।তারই প্রেক্ষিতে গত ০৬ নভেম্বর ২০২১ইং তারিখ রাতে রেজাউল ইসলাম ইমন এর ফার্নিচার দোকানে ভিকটিমের পিতা আমির হোসেন টাকার বিনিময়ে রবিউল আউয়াল,রেজাউল ইসলাম ইমন ও সোহেল রানা’কে সঙ্গে নিয়ে ভিকটিম ফাহিমা আক্তারকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যা করার জন্য ধারালো ছুরি ও হত্যার পর লাশটি লুকানোর জন্য দুইটি প্লাস্টিকের বস্তা সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে তারা ফাহিমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গত ০৭নভেম্বর২০২১ তারিখ বিকাল আনুমানিক ৩টার সময় কৌশলে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে ভিকটিমকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় ও চাঁপানগর রাস্তার মোড়ে সোহেল রানার সিএনজিত করে ঘাতক আমির হোসেন ও তার অন্যান্য সহযোগীরা ভিকটিমকে নিয়ে রওনাকরে। তারা সিএনজিতে বিভিন্ন স্থানে ঘুরা ফেরা করে রাত ৮টার সময় দেবিদ্বার পুরান বাজারের দক্ষিণে নদীর তীরবর্তী নির্জন স্থানে ভিকটিম ফাহিমাকে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর লাইলি আক্তার এর উপস্থিতিতে আমির হোসেন তার মেয়ে ভিকটিম ফাহিমার মুখে চেপে ধরে রাখে ও সবর্ প্রথম নিজে নিজ মেয়েকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে, রবিউল ভিকটিমের পায়ে ছুরি দিয়ে আঘাতকরে, রেজাউল ইসলাম ইমন ছুরি দিয়ে ভিকটিমের পায়ে ও শরীরেরবিভিন্ন স্থানে আঘাত করে, সোহেল ছুরি দিয়ে ভিকটিমের পিছনে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত কওে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। পরবর্তীতে সহযোগীরা ভিকটিমের হাত-পায়ে চেপে ধরে রাখে এবং পিতা আমির হোসেন তার মেয়ে ভিকটিম ফাহিমা আক্তার এর গলায় চেপে ধওে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। হঠাৎ কওে ঘটনাস্থলের আশে পাশে সম্ভাব্য লোকজনের চলাচল আচ কওে অতিদ্রæত ভিকটিমের লাশটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে সিএনজিতে করে রওনা করে।পথিমধ্যে সুবিধাজনক স্থাননা পেয়ে তারা লাশটি রেজাউল ইসলাম ইমনদের গরুর ঘরের একটি ড্রামের ভিতর লুকিয়ে রাখে। গত ০৯নভেম্বর২০২১ইং তারিখ রাত আনুমানিক ৯টার সময় সোহেল রানার সিএনজিতে করে আমির হোসেন, রবিউল আউয়াল, রেজাউল ইসলাম ইমন ভিকটিমের বস্তাবন্দি লাশটি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের কাচিসাইর জনৈক নজরুল মাস্টারের বাড়ির সামনে কালভার্টের নিচে সরকারি খালে ডোবার পানিতে ফেলে আসে। ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কোম্পানীগঞ্জে একটি শিশুর লাশপাওয়া গেছে এমন সংবাদ পেয়ে আমির হোসেন তার পরিবারের লোকজনকে নিয়ে তাদেও মনে বিশ্বাস স্থাপন করার উদ্দেশ্যে সেখানে যায় এবং বিষয়টি গুজব বলে পরিবারের সদস্যদের জানায়। পরবর্তীতে গত ১৪নভেম্বর২০২১ ইং তারিখে ভিকটিমের লাশ পাওয়ার পর ভিকটিমের বাবা ও হত্যাকারী আমির হোসেন (২৫) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামীকরে দেবিদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ভিকটিম নিখোঁজ হওয়ার পর সন্ধানের উদ্দেশ্যে এবং লাশ পাওয়ার পর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিপ্রদানের জন্য প্রকৃত হত্যাকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার পোস্ট করে, যাতে তাদেও উপর কারো সন্দেহ না হয়।গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।