
” আসামীদের কাউকে চিনিনা সমন্বয়ক আর পুলিশের সহযোগীতায় আমি কুমিল্লায় আসছি বললেন বাদী রানু মিয়া “
এম শাহীন আলম :
গত ২০২৪ সালে দেশব্যাপী জুলাই আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় একজন হোটেল কর্মচারী হত্যার দোহাই দিয়ে বিএনপির নেতা, দালাল সাংবাদিক, বৈষম্য বিরোধী সমন্বয়ক ও এনসিপি’র নেতাদের যোগসাজশ আর কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের সহযোগিতায় দীর্ঘ ৮ মাস পর গায়েবী মামলা বাণিজ্য থেকে রেহাই পায়নি পেশাদার সাংবাদিকও।
এই গায়েবী হত্যা মামলায় আওয়ামী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ব্যক্তিগত রেষারেশির জেরে হয়রানির উদ্দেশ্যে বাদ যায়নি পেশাদার
সাংবাদিক,প্রবাসী,ঠিকাদার,ছোটখাটো ব্যবসায়ী সহ নিরহ জনসাধারণের নামও।
সরজমিনে অনুসন্ধান ও মামলার এজাহারের তথ্য থেকে জানা যায়, মামলাটিতে একজন হোটেল কর্মচারী হত্যার অভিযোগ এনে আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি বাহারকে প্রধান আসামী ও সাবেক সিটি মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা,আবদুল হাই বাবলু সহ ১৪৭ জনকে আসামী ও অজ্ঞাত আরো ১০০/১৫০ জনকে আসামী করে মামলা এজাহার গ্রহণ করেন কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ। সরজমিনে অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, গত ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় হোটেল ক্যাফে আল বাইক এর কর্মচারী মামুন আহমেদ রাফসান (১৮) কে হত্যা দেখিয়ে দীর্ঘ আট মাস পর যে হত্যা মামলাটি দায়ের করা হয়েছে প্রত্যেক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকদের বক্তব্য অনুযায়ী ৫ আগস্ট এমন ধরণের হত্যার কোন ঘটনায় ঘটেনি এবং ঐদিন পুরো কুমিল্লা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড,কোটবাড়ী বিশ্বরোড,আলেখারচর বিশ্বরোড সহ ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সকল এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের দখলে ছিলো এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে উল্লেখিত এলাকার পরিবেশ ছিলো অত্যান্ত সু-শৃঙ্খল। হোটেলের আশপাশের লোকজন ও সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী মামুন আহমেদ রাফসান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাকে কেউ হত্যা করেননি। এছাড়া তার লাশের মেডিক্যাল ময়না তদন্ত রিপোর্টেও ধোঁয়াশায় এবং পুলিশের নিকট রিপোর্ট আছে বলে এখনো যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
গায়েবী হত্যা মামলাটির অনুসন্ধানের সূত্র ধরে মোবাইল ফোনে কথা হয় মামলাটি বাদী মৃত মামুন আহমেদ রাফসান এর বড় ভাই রানু মিয়া (৩২) এর সাথে। রানু মিয়া জানান,আমাকে প্রথমবার খবর দিয়ে আনে কুমিল্লার সমন্বয়করা। যখন শুনি মামলা তদন্তের জন্য আমার ভাইয়ের লাশ আবার কবর থেকে উঠানো হবে তখন আমি মামলা করবো না বলে চলে যাই। পরক্ষণে আমার হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার গ্রামের বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়ে আমাকে কুমিল্লায় নিয়ে এসে আমাকে পুলিশ এবং এনসিপি ও সমন্বয়কদের তত্ববধানে রেখে ৩ দিনের মাথায় মামলাটি করেন বলে জানান বাদী রানু মিয়া। বাদী রানু মিয়াকে আসামীদের চিনেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,আমাকে পুলিশ এবং সমন্বয়করা আনছে তারাই আসামীদের নাম দিয়েছে আমি আসামীদের কাউকে ছিনি না। রানু মিয়াকে পুনরায় জিগ্যেস করা হয় ১৪১ নং আসামী শাহিন আলমকে আপনি চিনেন কিনা রানু মিয়া উত্তরে বলেন, আপনি এনসিপি ও সমন্বয়কদের সাথে যোগাযোগ করেন বলে জুয়েল নামের এনসিপি’র একজনের মোবাইল নাম্বার দেন মামলার বাদী রানু মিয়া।
এই ঘটনার অনুসন্ধানে বাদী রানু মিয়ার বক্তব্যের সূত্র ধরে (বৈষম্য বিরোধী) এনসিপি’র নেতা কুমিল্লা শাসনগাছা এলাকার জুয়েলের সাথে মুঠো ফোনে কথা হয় সাংবাদিক শাহীন আলম এর। জুয়েল জানান,আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলো বাদীকে দেখভাল করার আমি জাস্ট দায়িত্ব পালন করেছি। আর মামলার আসামীদের নাম দেওয়ার বিষয়ে জুয়েল সাংবাদিক শাহীন আলমকে জানান,সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ভাইয়ের ছোট ভাই বিএনপির নেতা এডভোকেট রিংকু ভাই সহ আরো বেশ কিছু নেতার সমন্বয়ে আমরা ফ্যাসিস্টদের ১২৬/১২৭ জনের নামের লিস্ট আমরা দিয়েছি বাকি লিস্ট গুলা ১২৭-১৪৭ নং পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগর নেতা আবু রায়হান গংরা দিয়েছেন। এনসিপি’র নেতা জুয়েলকে প্রশ্ন করা হয় ১৪১ নং আসামী শাহিন আলম এর নামটি কে দিয়েছেন তা কি আপনি জানেন? জুয়েল জানান, আমার জানামতে মামলা করার দিন বিকেলে সমন্বয়ক আবু রায়হান এখন টেলিভিশন এর প্রতিনিধি খালেদ সাইফুল্ল্যাহ্ সহ আরো দুইজন মুরুব্বিকে নিয়ে থানায় ঢুকেন আবু রায়হান।জুয়েল আরো জানান,আমি শিউর ১২৭ শের পরে বাকি সব গুলো নাম সমন্বয়ক আবু রায়হান এবং এখন টিভির সাংবাদিক খালেদ সাইফুল্ল্যাহ্ সহ মিলে ১৪৭ নং আসামীদের নাম গুলা তারাই দিয়েছে। আপনি আমার কথা না বিশ্বাস করলে থানার সিসিটিভি ফুটেজ গুলা দেখলে সব বুঝতে পারবেন ঐদিন মামলার এজাহার জমা দিতে শেষ পর্যন্ত কে কে ছিলেন। জুয়েল জানান,আমি সাংবাদিক জাকির ভাইযের নামটা বাদ দিয়েছি,মামুন চেয়ারম্যান নাম না দিতে আমার কাছে মোটা অংকের টাকার অফার আসছিলো তবে কে ১৪১ নং আসামী শাহিন আলম এর নামটি দিয়েছে আপনি আবু রায়হানকে ভালো ভাবে ধরেন আপনি তার কাছে সব তথ্য গুলা পাবেন বলে জুয়েল জানান। জুয়েলের সাথে কথা বলার পর যখন সাংবাদিক শাহীন রানু মিয়াকে মোবাইল ফোনে বলেন, আপনি যে মিথ্যা মামলা করেছেন এই মামলার তদন্তের জন্য তো আপনার ভাইকে কবর থেকে আবার উঠিয়ে পরীক্ষা নিরিক্ষা করবে। তার কিছু সময় পর এনসিপির নেতা জুয়েল এবং বাদী রানু মিয়া সাংবাদিক শাহিনকে দুইজন দুই জায়গা থেকে মোবাইল ফোনে বলেন, ভাই আপনি এই নিয়ে বাড়াবাড়ি করার দরকার নেই, আমরা মিলে কোর্টে এভিটডেভিট করে আপনার নামটা মামলার এজাহার থেকে বাদ দিয়ে দেবো আপনি কোথায় আছেন বলুন প্রয়োজনে আমরা আপনার সাথে দেখা করে কথা বলে সব সমাধান করবো । সাংবাদিক শাহিন জুয়েল এবং বাদী রানু মিয়াকে বলেন, মামলা শেষ করবেন পরে এখন আগে বলেন ১৪১ নং আসামী শাহিন আলম এর নামটা কে দিয়েছে? জবাবে বাদী রানু মিয়া জানান, আমি আসামীদের কাউকে ছিনি না, আপনি কুমিল্লার বিএনপির নেতা,এনসিপির নেতা এবং সমন্বয়কদের সাথে যোগাযোগ করেন তারাই বলতে পারবে আসামীদের নামের ব্যপারে। অন্যদিকে এনসিপির নেতা জুয়েল বলেন, ১২৭ নং আসামীর তালিকার পর এক প্রকার জোর পূর্বক আবু রায়হান সাংবাদিক খালেদ সাইফুল্ল্যাহ্কে সাথে আরো দুইজনকে নিয়ে নাম গুলা আসামীদের লিস্টে অর্ন্তভূক্ত করেন তখন কুমিল্লার কোতয়ালী মডেল থানার ওসি উপস্থিত ছিলেন। জুয়েল জানান,আপনি কুমিল্লায় এসে আবু রায়হান এবং আমাদের সাথে দেখা করে কথা বলেন সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
হত্যা মামলার ঘটনায় অনুসন্ধানে এনসিপির নেতা জুয়েল এর বক্তব্যের সূত্র ধরে এখন টিভির সাংবাদিক খালেদ সাইফুল্ল্যাহ্ কে তার মুঠো ফোনে কল করে মামলার এজাহারের দিন থানায় তার উপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক খালেদ সাইফুল্ল্যাহ্ জানান, আমি অন্য একটি কাজে ঐদিন থানায় গিয়েছিলাম গিয়ে দেখি থানায় একটি মামলার কার্যক্রম চলছে বলে জানান। তিনি এই মামলা দেওয়ার সাথে তিনি কোন ভাবে জড়িত নন বলে জানান। এনসিপি’র নেতা জুয়েলের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিক খালেদ সাইফুল্ল্যাহ বলেন,জুয়েল আমার ব্যপারে আপনাকে ভূল তথ্য দিয়েছেন। আমি জুয়েলের সাথে কথা বলবো।
সর্বশেষ এই মামলার ১২৭ নং এর পর ১২৮ -১৪৭ নং আসামীদের লিস্টে অর্ন্তভূক্ত করার মাস্টার মাইন্ড বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগরের নেতা আবু রায়হানকে মামলাটির বিষয়ে জানতে চেয়ে তার মুঠো ফোনে কল দিলে তিনি জানান,আমি যে সকল আসামীর নাম দিয়েছি আমার দেওয়া কোন নাম এজাহারের লিস্টে উঠায়নি বলে অস্বীকার করেন। আবু রায়হান জানান,আমি আসামীদের নাম গুলা যাচাই বাছাইয়ের জন্য পুলিশের নিকট সময় চেয়েছি কিন্তু কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ আমাকে আসামীদের নাম যাচাইয়ের সময় দেয়নি বলে জানান। আবু রায়হান জানান, এই হত্যা মামলাটির বিষয়ে আমি আগে থেকে কিছুই জানতাম না। আমি যখন জানতে পারি এমন একটি মামলা হচ্ছে তখন আমি দৌঁড়িয়ে থানায় যাই। মামলার এজাহার জমা দেওয়ার দিন বিকালে সাংবাদিক খালেদ সাইফুল্ল্যাহ তার সাথে থানায় কেন গিয়েছিলো জানতে চাইলে আবু রায়হান বলেন, খালেদ সাইফুল্ল্যাহ্ ভাই তার ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছিলো। যখন ওসি সাহেব বললো কোন সাংবাদিকের নাম যেন না দেওয়া হয় তখন খালেদ সাইফুল্ল্যাহ্ কোন সাংবাদিককে ভুয়া ফালতু সাংবাদিক বলে দাবী করে তর্ক করেছিলো। সে যদি তার নিজস্ব কাজেই থানায় গিয়েছিলো তাহলে সে হত্যা মামলার এজাহার জমা নেওয়ার সময় ওসির রুমে এনসিপির নেতারা সহ সমন্বয়কদের সাথে আসামীদের লিস্ট নিয়ে কিসের কথা বলছিলো এই প্রশ্নের জবাবে আবু রায়হান বলেন, খালেদ সাইফুল্ল্যাহ্ ভাই সাংবাদিক শাহিন এর বিষয়ে কিছু বলেনি,তিনি চৌদ্দগ্রামের সাংবাদিক আব্দুল্লাহ্ আল মানছুর কথা বলেছিলো যেন তার নামটা কেটে দেন। প্রশ্ন হলো এখন টিভির সাংবাদিক খালেদ সাইফুল্ল্যাহ্ তো জানতাম সংবাদিকতা করেন, কিন্তু সে যে থানায় তদবির সহ হত্যা মামলায় কার নাম থাকবে আর কার নাম থাকবে না সেটার ইজারা কবে থেকে নিয়েছেন তা তো জানা ছিলো না। এই গায়েবী হত্যা মামলার ১৪১ নং আসামী শাহিন আলম এর নামটা এই মামলায় অর্ন্তভূক্ত করার মুল কারণ হলো শাহিন আলমের সাথে কুমিল্লায় যাদের বিভিন্ন কারণে বিরোধ চলছে ঠিক তাদের সাথে সাংবাদিক খালেদ সাইফুল্ল্যাহ্ এবং সমন্বয়ক আবু রায়হান এর পিতলা পিরিত আর গভীর সখ্যতা থাকার কারণে তারা সামনে না এসে খালেদ সাইফুল্ল্যাহ্কে দিয়ে এই ঘটনাটা ঘটিয়েছে বলে এনসিপির নেতা জুয়েলের বক্তব্য এবং থানার সকল নাটকীয়তায় ধারণা করা হচ্ছে। অন্য দিকে এর আগে মিথ্যা মামলা সহ জুলাই আগস্টের ঘটনায় হত্যা মামলার আসামীদের রক্ষার্থে মামলা বাণিজ্যের বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে সমন্বয়ক আবু রায়হান এর বিরুদ্ধে। এই আবু রাযহানকে মামলা বাণিজ্যের অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সমন্বয়করা সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে তাকে কুবি থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন এমন ভিডিও ভাইরাল।
এই হত্যা মামলাটির বিষয়ে জানতে চেয়ে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মহিনুল ইসলাম এর মোবাইল হোয়াটসঅ্যাপে নক করা হলে তিনি লিখেন মামলার তদন্তের দায়িত্ব ক্যান্টনমেন্ট নাজিরা বাজার ফাঁড়ির আইসি কে দিয়েছি যেন কোন নির্দোষ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেই ভাবে নির্দেশ দিয়েছি বলে জানান। এই হত্যা মামলার মেডিক্যাল রিপোর্ট পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওসি মহিনুল কোন উত্তর দিতে পারেননি।