কুমিল্লা সদরের ওসি অানোয়ার হোসেনকে ধন্যবাদ ; এখন নির্ভয়ে কলেজে যেতে পারবো

অন্যান্য

বিশেষ প্রতিবেদক কুমিল্লা :
একবার দু’বার নয় একাধিকবার নিজের ছোট বোনের মত কলেজ পড়ুয়া শ্যালিকা (স্ত্রী’র ছোট বোন) কে কুপ্রস্তাব ও ধর্ষণের চেষ্টা ! ব্যার্থ হয়ে তরুণীর ছবি দিয়ে ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে অপপ্রচার করে দুলাভাই । অপকর্মের কারনে নিজের বাড়ি থেকে বিতাড়িত লম্পটের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্ত্রীর ছোট বোন ঐ কলেজ শিক্ষার্থীর পরিধেয় জামা কাপড়, পাঠ্যপুস্তক, কলেজ ব্যাগ কেচি দিয়ে কেটে পুড়িয়ে দেয় বড় ভাইয়ের মত দুলাভাই লম্পট সৌদি প্রবাসী জামাল হোসেন। পূর্বের স্ত্রী সন্তান রেখে ২য় বিয়ে করা লম্পট জামাল কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার কালির বাজার ইউনিয়নের ধনুয়াখলা গ্রামের মৃত শহিদ ডিলারের ছেলে। এখানেই শেষ নয় কলেজ থেকে ফেরার পথে কালির বাজার বল্লভপুর এলাকার একরাম নামের আরেক মাদকসেবী ও সহযোগী লম্পটকে নিয়ে তরুণীকে তুলে নেয়ার ও চেষ্টা করে। সহপাঠীদের সহযোগীতায় সে যাত্রায় রক্ষা পায় তরুণী। এরপর থেকেই ভয়ে কলেজে যাওয়া বন্ধ রেখেছে তরুনী। বিষয়টি কলেজের শিক্ষক ও অধ্যক্ষকেও জানিয়েছে। তবে পারিবারিক ও কলেজের বাইরের সড়কে শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তারা।

এবিষয়ে আনন্দপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ উম্মে নাসরিন নূর বলেন, শিক্ষার্থী ও তার পিতা বিষয়টি আমাদেরকে জানিয়েছে। আমরা কলেজের ভেতরে নিরাপত্তা দিতে পারলেও কলেজের বাইরে বা সড়কে নিরাপত্তা দেয়ার মত ফোর্স আমাদের নেই। গত কয়েকদিন ধরে সে কলেজে আসছে না।

বাড়িতে বিভিন্ন সময একাধিকবার শরীরে হাত দেয়ার চেষ্টা করে শরীরে আঘাত ও করে তরুণীর। বোনের সংসার রক্ষার জন্য দিনের পর দিন মুখবুজে লম্পট জামালের এসব নির্যাতন সহ্য করলেও একসময় ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায় তরুণীর। বড় বোন ও পরিবারের লোকজন কে জানালে তারা বোঝানোর চেষ্টা করে, ব্যার্থ হয়ে বাড়ির মুরুব্বিদের সহোযোগিতা নেয়। তারাও ব্যার্থ হয় বোঝাতে, উল্টো শশুর বাড়ির লোকজনের উপর চড়াও হয় লম্পট জামাল। তরুণীর চাচাত ভাই সহ কয়েকজনের উপর হাত তোলে এবং মাদক মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয় প্রকাশ্যেই। সদ্য সন্তান জন্ম দেয়া স্ত্রী’কে ও মারধর করে এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করায়। পরিবারের অমতে স্বেচ্ছায় বিয়ে করা ভুক্তভোগী তরুণীর বড় বোন অসহায় স্ত্রী স্বামী নামের এ লম্পটের কাছে জিম্মি হয়ে সংসার বাঁচাতে স্বামীর পক্ষাবলম্বন করতে বাধ্য বলে জানায় সে। ভুক্তভোগী তরুণীর পরিবার, বাড়ির লোকজন ও স্থানীয়দের পরামর্শে লম্পট জামাল ও তার স্ত্রী কে নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে গত ৩১ জানুয়ারী। ২য় স্ত্রীকে কে নিয়ে কালির বাজারে ঘর ভাড়া নেয় জামাল। এরপর থেকেই নানা ভাবে হুমকি ধমকি দিতে থাকে শ্যালিকা ও শশুর বাড়ির লোকজন কে। নতুন করে আরো দুটো ফেক আইডি খুলে শ্যালিকার ঘুমন্ত ছবি সহ চাচাত শ্যালককে জড়িতে বিভিন্ন অপপ্রচার চালায়। রাতের অন্ধকারে শশুর বাড়িতে শ্যালিকার ঘরের জানালা ও টিনের চালে ঢিল ছোড়ে গোটা পরিবারকে আতংকিত করে রাখে। গত দুদিন আগে লম্পট জামাল ও একরাম সহ কয়েকজন মাদকসেবী বখাটেকে নিয়ে ৭ হাজার টাকা পাওনা আছে দাবী করে কালির বাজার সড়কে ভুক্তভোগী তরুণীর বড় বোনের স্বামী’র (ভায়রার) অটোরিক্সা আটকে রাখে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সারে তিন হাজার টাকা দিয়ে এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবীদের কাছ থেকে অটোরিক্সাটি ছাড়িয়ে আনতে হয়। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তরুনীর পিতা স্থানীয় চেয়ারম্যান হাজী সেকান্দর আলীর কাছে অভিযোগও করেন। অবশেষে গত ১৪ জানুয়ারি বিকেলে লোকলজ্জা ভুলে আনন্দপুর ডিগ্রী কলেজ শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী তরুণী ও তার পিতা কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল হকের স্মরণাপন্ন হয়। তরুণী ও তার পিতার কাছ থেকে সমস্ত ঘটনা শুনে এবিষয়ে খোঁজ নিয়ে সত্যতা জাচাই শেষে রাতেই মামলা রেকর্ড করেন এবং আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে নাজিরা বাজার ফাঁড়ি পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করেন। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সারে ১২টায় এসআই দয়াল হরি ও এসআই মাহবুবুর রহমান সহ সঙ্গীয় ফোর্স বিশেষ অভিযানে চালিয়ে ধনুয়াখলা বাজার থেকে লম্পট জামাল কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

এবিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ারুল হক বলেন, মাদক, ধর্ষণ, ইভটিজিং, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানা পুলিশ বরাবরের মতই জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে আসছে। ভুক্তভুগী তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে আসামী জামাল হোসেন কে রাতে আটক করা হয়েছে এবং আদালতে প্রেরণ প্রক্রিয়াধিন আছে।  এসকল জঘন্য অপরাধের সাথে যারা জড়িত তাদের কোন ভাবেই ছাড়া দেয়া হবে না, সে যেই হোক না কেন। তিনি হুশিয়ারী দিয়ে আরো বলেন, মাদক কারবারি ইভটিজার ও ধর্ষকদের জায়গা জেলখানা।

ভুক্তভোগী তরুণীর দিনমজুর পিতা আবুল কাশেম গ্রেফতারের খবরে আনন্দ প্রকাশ করে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে প্রতিবেদককে বলেন, এমন লম্পটের কঠিন সাজা হওয়া উচিৎ। আমি দুহাত তুলে ওসি সাহেবের জন্য দোয়া করি, আল্লাহ তাকে নেক হায়াত দান করুন। তার কাছে আমি ও আমার পরিবার চিরকৃতজ্ঞ। ভুক্তভোগী তরুণী জানায়, আমি আগামীকাল থেকে আবার নির্ভয়ে কলেজে যেতে পারবো, ওসি সাহেব কে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.