রফিকুল ইসলাম :
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৬নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুহুরী বাবুলের বিরুদ্ধে হামলা করে বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ৪মাস ধরে ১৪টি পরিবারকে বসতবাড়িতে ফিরতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ৩১ মার্চে সংগঠিত হত্যাকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে কাউন্সিলর বাবুল ও তার সন্ত্রাসীগংয়ের উদ্দেশ্য প্রনোদিত হামলায় ৪মাস ধরে বাড়ি-ঘর হারা ১৪টি পরিবার পরিত্রানের আশায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দারে দারে ঘুরছে।
শুক্রবার (১০ জুলাই) বেলা ৪টায় কুমিল্লা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে কান্নাজড়িত কন্ঠে অভিযোগ করেন নির্যাতিত ১৪পরিবারের সদস্যবৃন্দ। ভুক্তভোগী আয়েশা বেগম অভিযোগ করেন গত ৩১শে মার্চ ২০২০ইং তারিখে কুমিল্লার ১৬ নাম্বার ওয়ার্ডে সংরাইশ প্রাইমারী স্কুল এলাকায় সংগঠিত মতিন(৬৮) হত্যাকান্ডের পরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে হামলা ও অগ্নিসংযোগে গৃহহারা হয়েছে ১৪টি পরিবার। ঘটনার আজ প্রায় ৪মাস পরেও ভুক্তভোগী পরিবারগুলো নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারছেনা। বাড়ি ফিরতে পরিবারগুলোকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবী করছে মুহুরী বাবুল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।
আরো অভিযোগ করেন, কাউন্সিলর মুহুরী বাবুল প্রকাশ্যে ভূমিদস্যু সন্ত্রাসী কালা বাবুল নামে পরিচিত। কাউন্সিলর মুহুরী বাবুল দীর্ঘ বছর ধরেই পুরো ওয়ার্ডে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, অবৈধ ব্যবসা ও মাদক কারবারীর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মুহুরী বাবুলের আধিপত্য বিস্তারের জন্য লালন-পালন করে বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর তান্ডবে আর প্রাণ হারানোর ভয়ে কেউই মুখ খুলে তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে চায় না।
কাউন্সিলর মুহুরী বাবুল বাহিনীর প্রধান ক্যাডার আক্তার হোসেন যার বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় অস্ত্র, বিষ্ফোরক আইনের মামলাসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারনে সন্ত্রাস দমন আইন ও বিভিন্ন মামলা আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতেও গ্রেপ্তার হয়েছিলো অস্ত্র নিয়ে, সেসময় তল্লাশি চালিয়ে তার থেকে বস্তা ভর্তি অস্ত্র উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ।
অতীতে নিঃস্ব কালা বাবুল বিগত কয়েক বছরেই মাদক ও চোরাকারবারীর টাকায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে অল্প কয়েকদিনেই অবৈধ কালো টাকার পাহাড়ের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। নগরীর পাথুরিয়া পাড়া এলাকায় প্রায় ৪ কোটি টাকা খরচ করে একটি বাড়ি করেছে এবং সংরাইশ এলাকায় তার আরো ৮ হতে ১০টি বাড়ি আছে বলে জানান। ঢাকার বসুন্ধরাসহ বিভিন্নজায়গায় নামে বেনামে তার প্রচুর অবৈধ সম্পত্তি আছে। অভিযোগ আছে কালা বাবুল ৭টি বিয়ে করেছেন।
পূর্ব শত্রুতার জের ধরেই মুহুরী বাবুল নিজে উপস্থিত থেকে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য ক্যাডার আক্তার পিতা: মহন মিয়া গ্রাম: সংরাইশ মধ্যপাড়াসহ আরো নাম উল্লেখিত প্রায় ২৫জন সন্ত্রাসীদের দিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় ঘর লুটপাট ও ভাংচুর করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। মুহুরী বাবুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে তার সন্ত্রাসীদের দিয়ে সংরাইশ পূর্ব পাড়ার কুমিল্লা কেন্টনমেন্ট শাখার পোষ্ট মাষ্টার বাচ্চু মিয়া ও আরো ১৩টি পরিবারের বাড়ির আসবাবপত্র ভাংচুর করে মালামাল ও নগদ টাকা লুটপাটের অভিযোগ করেছে এবং তাদের ১৪টি পরিবারের ঘর-বাড়িতে আগুন দিয়ে দেয়, সেসময় এ আগুন এসে নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিস, যা তখন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার করা হয়।
মুহুরী বাবুল ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী ২০১৭ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের সময়ে শহীদ নামের এক লোকের হত্যার উদ্দেশ্যকে কাজে লাগিয়ে তখনো ২৮টি বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে এবং আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গিয়ে তখন অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভুক্তভোগী ১৪টি পরিবার কুমিল্লার পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কাছে এর সঠিক তদন্ত ও তাদের প্রতি যে অন্যায় অবিচার করা হয়েছে তার সঠিক বিচার চায়। তাদের জান ও মালের নিরাপত্তা ও সহযোগীতা চায়।
এ প্রসঙ্গে চকবাজার পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সৈয়দ জাকির জানান, ভুক্তভোগী পরিবার যদি অভিযোগ করে থাকে ও আইনি সহায়তা চায় তাহলে ঘর-বাড়িতে থাকার জন্য তাদেরকে পুলিশ সহযোগীতা করবে।
এ বিষয়ে কাউন্সিলর বাবুলের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।