গাজীপুরে মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনা করায় ইমামকে মারধরসহ দিগম্বর করে ভিডিও ধারণে থানায় মামলা

অপরাধ

আশিকুর রহমান :
গাজীপুর মহানগরের গাছা থানার চান্দরা এলাকায় একটি মসজিদে জুম্মার বয়ানে মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনা করায় ইমামকে মারধর ও দিগম্বর করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পণ্যগ্রাফি আইনে গাছা থানায় একটি মামলা হয়েছে।

মামলার আসামী সাবেক গাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মশিউর রহমান মুকুলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলার প্রধান আসামী মুকুলের ছোট ভাই এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি মফিজুর রহমান টুটুল পলাতক রয়েছে। বেশ কিছু দিন আগে এ ঘটনা ঘটলেও লোক লজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী ইমাম এতো দিন মুখ খুলেননি। অপরদিকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলও ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায় । কিন্তু ক্রমেই আলেম সমাজ ক্ষোভে ফুঁসে উঠলে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।  মাদক কারবারিরা ইমামের বিবস্ত্র ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ৫০ হাজার টাকাও আদায় করেছে বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে। গাছা থানার ৩৭নং ওয়ার্ডের চান্দরা আল আকসা জামে মসজিদের হুজরাখানায় (ইমাম সাহেবের কক্ষ) এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আলেম সমাজের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।b

মামলার বাদী মুফতি শফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, তিনি মসজিদ সংলগ্ন দারুল হাবিব নামের মাদ্রাসা পরিচালনা করেন । উক্ত মাদ্রাসার পাশে মাদক কারবারিদের বিভিন্ন অপকর্মসহ মাদক বেচা-কেনা ও মাদকের নিয়মিত আড্ডা বসতো। এতে মাদ্রাসার ছাত্রদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল। ইমাম সাহেব জুম্মার খুতবায় গুরুত্বসহ মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনা রাখতেন। জুম্মায় মাদক নিয়ে আলোচনার কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছিল। এরই জেরে এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিরা ক্ষুব্ধ হয়ে মসজিদ-মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিসহ তাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। এসব হুমকি উপেক্ষা করে তিনি মানুষকে মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে মসজিদে নিয়মিত আলোচনা অব্যাহত রাখেন। এতে এক পর্যায়ে গত ২৬ জানুয়ারি জুম্মার আগের দিন দুপুর ১২টায় এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি মফিজুর রহমান টুটুল(৩৭) এর নেতৃত্বে এলাকার মাদক কারবারিরা মসজিদের হুজরাখানায় (ইমাম সাহেবের কক্ষে) দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে ঢুকে তার ওপর চড়াও হয়। এসময় তাকে মারধর ও দিগম্বর করে মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে। ইমামের এ বিবস্ত্র ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা আদায় করে। তিনি ভীত শস্ত্রন্ত হয়ে এবং মান সম্মানের ভয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে বিকাশে টাকা এনে দিতে বাধ্য হন। এর পর গত ৩১ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায় মাদ্রাসার ছাত্রদের মাধ্যমে তাকে মাদ্রাসা থেকে ডেকে বের করে রাস্তায় ফেলে আবারো বেধড়ক মারধর করে। অবশেষে নিরুপায় হয়ে তিনি এলাকার আলেম ওলামাদের বিষয়টি অবহিত করেন এবং সবার পরামর্শে ও ওলামাদের সাথে নিয়ে শুক্রবার গাছা থানায় গিয়ে মামলা করেন।

এব্যাপারে গাছা থানার ওসি মো. ইব্রাহিম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মসজিদের ভুক্তভোগী ইমাম দুই জনকে আসামী করে পণ্যগ্রাফিসহ ফৌজদারি অপরাধের বিভিন্ন ধারায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে মশিউর রহমন মুকুল নামে একজন আসামীকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছি। মামলার প্রধান আসামী মফিজুর রহমান টুটুল পলাতক রয়েছে। পলাতক আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.