নাজমুল হক, মান্দা প্রতিনিধি :
এক সময় ধানের স্বর্ণভূমি হিসেবে পরিচিত ছিল নওগাঁ সাপাহার। বর্তমানে উত্তরের এ জেলাটির সাপাহার আমের রাজধানী হিসেবে খ্যাত। আমের আবাদ বরেন্দ্রভূমির সেই চিত্র পাল্টে দিয়েছে। ধানের মাঠগুলোর আনাচে-কানাচে দোল খাচ্ছে আম। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এ বছর ১০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে পাড়ি দেবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে আম্রোপালি ৭৬ শতাংশ, আশ্বিনা ৭ শতাংশ, বারি-৪ আম ৬ শতাংশ, ফজলি ৩ শতাংশ, ল্যাংড়া ৩ শতাংশ, ক্ষীরশাপাত ২ শতাংশ, গৌরমতি ১ শতাংশ, কাটিমন ১ শতাংশ এবং অন্য জাতের ১ শতাংশ জমিতে আমের বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ মেট্রিক টন। সে হিসেবে প্রায় ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিন টন আম উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। এবার বিশ্বের আটটি দেশে আম রপ্তানি হবে।
দেশগুলো হলো- যুক্তরাজ্য, ইতালি, সুইডেন, জার্মানি, কুয়েত, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান। এসব দেশে ১০০ মেট্রিক টন আমের চাহিদা রয়েছে। গত বছর ১৫ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি হয়েছিল। জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাপাহার, পোরশা, পত্নীতলা, ধামইরহাট ও নিয়ামতপুর উপজেলার কিছু অংশ বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত। বছরে একটিমাত্র বৃষ্টি নির্ভর ফসল আমন ধানের ওপর নির্ভর করতে হতো চাষিদের। পানি স্বল্পতার কারণে অন্যান্য ফসল চাষ করা সম্ভব হতো না। সেসব জমিতে ধানের আবাদ কমিয়ে চাষিরা ঝুঁকছেন আম চাষে। আম চাষে লাভবানও হচ্ছেন তারা। জানা গেছে, বিদেশে আম রপ্তানিতে কৃষি বিভাগ থেকে কিছু আম চাষিদের প্রশিক্ষণ ও নিরাপদ আম প্রস্তুতের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব বাগান থেকেই আম বিদেশে রপ্তানি করা হবে। বিদেশে আম রপ্তানির আগে কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। ফ্রুটব্যাগিং বা ওয়াটারপ্রুফ কাগজ দিয়ে প্রতিটি আমের শরীর জড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে করে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করতে পারে না। আমের রং ভালো থাকে। রপ্তানির ১৫ দিন আগে গাছে কীটনাশক স্প্রে বন্ধ করে দিতে হয়। এরপর আম পেড়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মোড়কজাত করা হয়। পোরশা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, এ উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আম বাগান গড়ে উঠেছে। কীটনাশক ও রোগবালাই মুক্ত থাকতে এসব বাগান থেকে প্রায় ৫০ লাখ আম ফ্রুটব্যাগিং পদ্ধতিতে নিয়ে আসা হয়েছে। এতে করে নিরাপদ ও গুণগত মানসম্পন্ন আম আমরা পাবো। ইতোমধ্যে চাষিদের কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামছুল ওয়াদুদ বলেন, গত বছর ১৫ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানি হয়েছিল। এ বছর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশি ও বিদেশি জাত মিলে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন আম রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে। এতে কয়েক কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, বাগানে নিরাপদ আম উৎপাদনের জন্য কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে ফ্রুটব্যাগিং ও ফেরোমোন ফাঁদ ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে বিদেশে আম যাওয়ার যেসব বাধা তা দূর হবে। এমনকি বিভিন্ন সুপারশপেও বিক্রি করা যাবে। কৃষকরা ভালো দাম পেয়ে লাভবান হবেন।