নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে মাদকের হাট

অপরাধ

সুচিত্রা রায় :
সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বনাশা মাদক। বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা। শুধু শহর নয়, প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলেও হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যায়। মাদকের প্রভাব সামাজিক বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকের অপব্যবহার শুধু মাদকেই সীমিত থাকে না, আরো বহু অপরাধের কারণ হয়। অন্যদিকে মাদকসেবীরা যেমন পরিবারের জন্য, তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

এমনি আড়াইহাজারে বেড়েই চলেছে মাদক কারবারি।আড়াইহাজার উপজেলা ১০ টা ইউনিয়ন ২ টা পৌরসভার ৩১৬ টি গ্রাম।আড়াইহাজার উপজেলা প্রায় শতাধিক মাদকের স্পষ্ট রয়েছে।কম-বেশি সব এলাকায়ই মাদক বিক্রি হয়। সবচেয়ে বেশি গোপালদী পৌরসভায় মাদকের আস্তানা । প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এলাকাবাসীর দাবি । আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাচার হওয়া মাদক উদ্ধারে চেকপোস্ট দেওয়া হলেও দমনে নেই মাধব কারবারিরা।শুধু রামচন্দ্র্রদী,ঋষিপাড়া,
গোপালদী মেথর পট্টিতে ইয়াবা ও চোলাই মদের ৩০ টি স্পট রয়েছ।এরা এলাকার কিশোর-কিশোরীদের দিয়ে মাদক বিক্রি করে থাকে। সন্ধ্যার পর বসে মাদকের হাট। মাদক বিক্রেতাদের সহযোগিতা করেন স্থানীয় প্রভাবশালী মহল।

বিশনন্দী গ্রামে মাদকের আসর জমায় কিছু বেক্তি। তাছাড়া মর্দাসাদি, জাঙ্গালিয়া , দয়াকান্দা, গিরদা, দুপ্তারা, বাজবী, পুরিন্দা, লস্করদী, মারুয়াদি, বগাদি, গাজীপুরা, কাহিন্দি, ছোট ফাউসা ও শরীফপুর গ্রামে অন্তত ২০-২২ জন মাদক বিক্রিতে জড়িত। এর মধ্যে রয়েছে কয়েক জন নারীও। তাছাড়া আড়াইহাজার থানার পাশেই শিবপুর, দিঘীরপাড়, মুকুন্দী, বাঘানগর, শ্রীনিবাসদী, মাহমুদপুর, উচিত্পুরা, প্রভাকরদী, ব্রাহ্মন্দী, ঝাউগড়া, পাল্লা, কাঠালিয়াপাড়ায় মাদকের জমজমাট আসর বসে। স্থানীয়রা জানান, মাদক বন্ধে এর বিক্রেতাদের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

এছাড়াও জানাগেছে বিশেষ করে আড়াইহাজার সদর, ব্রাহ্মন্দী, উত্তাপুর, বৈলারকান্দি, কালিবাড়ি, সত্যভান্দি, পাচগাও, ঈদবারদী, তিলচন্ডি বাজার, গাজীপুরা, কৃষ্ণপুরা মোড়, হাইজাদী, গোপালদী পৌর এলাকা, উলুকান্দি, রামচন্দ্রদী, বিশনন্দি ফেরিঘাট, মানিকপুর, জাঙ্গালিয়া, উচিৎপুরা, খাগকান্দা, শান্তিরবাজার, দক্সিণপাড়া, নোয়াপাড়, মারুয়াদী, দড়ি বিশনন্দীসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদক পাওয়া যায়। মাদক বিক্রেতাদের কেউ কেউ আবার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। গ্রামের নেতাদের সাথে খাতির জমিয়েই তারা অপকর্মটি করে থাকে। যার দরুণ থানা পুলিশ আজকাল আড়াইহাজারের মাদক বিক্রেতাদের কিছুই করতে পারছে না

ছোট ছোট মাদক ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের জালে আটকা পড়লেও গড ফাদাররা থাকছে বহাল তবিয়তে। সময় সুযোগ বুঝে সবাই আবার আগের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। নেই স্থায়ী কোনো সমাধান। বিশেষ করে যুব সমাজ নিমজ্জিত হচ্ছে অন্ধকারে। ভেঙ্গে যাচ্ছে দেশের চালিকা শক্তি যুব সমাজের মেরুদন্ড, যার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজ ব্যবস্থায় চরম বিশৃংখলা দেখা যাচ্ছে। কুফলের দিক জেনেও এক অদৃশ্য শক্তি বশ করছে এ সমাজকে। প্রতিনিয়তই সুস্থ জীবন থেকে সরে যাচ্ছে বহু তরুণ, কিশোর-কিশোরীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। দেশে কী পরিমাণ মাদকাসক্ত মানুষ রয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। অভিযোগ রয়েছে, যে সব কারাগারে মাদকাসক্তদের সাজা দিয়ে রাখা হয় সেখানেও মাদকের বিস্তার চরমে। মাদকের যে নামটি সবার মুখে মুখে, সেটা হলো ইয়াবা,ফেনসিডি, গাজা, এটা এত পরিচিত হয়েছে যে অন্যান্য পণ্যের মতোই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট পরিচিতি পাচ্ছে। মাদকের প্রভাব বাড়ার কারণে সমাজ এবং পরিবার দিন দিন হয়ে পড়ছে উদ্বিগ্ন। সুস্থ এবং সুশৃংখল সমাজ নির্মাণ করতে হলে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে যুব সমাজকে। এখন দেখা যাক মাদকটা আসলে কী ? যে সব প্রাকৃতিক বা রাসায়নিক দ্রব্য সেবন বা গ্রহণ করার ফলে মানুষের অনুভূতি অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে এবং মানসিকতার পরিবর্তন ঘটে তাকেই মূলত আমরা মাদক বলি। হঠাৎ করে মানুষ এ নেশায় আসক্ত হয় না। ধীরে ধীরে মানুষ এসব মাদকের জালে আবদ্ধ হচ্ছে। মাদক এমন একটি নেশা যাতে একবার প্রবেশ করলে পরিত্যাগ করা খুবই কঠিন। মাদক কিভাবে মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে চলে তা সে নিজে জানে না, এমন কি সে নিজে বুঝতে পারে না এবং অপরকে বুঝতে দেয় না। সব কিছু জানার পরও কেন এ দিকে ধাবিত হচ্ছে তার সঠিক ধারণা কারো নেই। তাই এটা থেকে বের হতে হলে রাতারাতি কোনো পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্ভব নয়। মাদক ব্যবহার হঠাৎ করে বন্ধ করলে শরীরের উপর উক্ত মাদক প্রত্যাহারজনিত মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। মাদক গ্রহণের সাথে সাথে মানুষ সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে। পরে শুরু হয় পারিবারিক বিচ্ছেদ। প্রাথমিক অবস্থায় বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে সাধারণত এ যাত্রা শুরু হয়ে থাকে, যার প্রাথমিক সূত্রপাত হতে পারে সিগারেটের মাধ্যমে। এক সময় এসব মাদক কেবলমাত্র যুবকরাই গ্রহণ করতে দেখা যেত। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় যুবতীরাও সমান তালে এগিয়ে চলছে। কিছু দিন পূর্বেও শহরে এসবের ব্যবসা থাকলে বর্তমানে গ্রামে গঞ্জে এর বিস্তৃতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হওয়ার কারনে মাদক অতি সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে গ্রামে। পারিবারিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় চর্চার অভাবের কারণে মাদকের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে অবহিত হতে পারছে না। এছাড়াও কমেছে মানুষের পারিবারিক বন্ধন এবং সামাজিক দায়িত্বহীনতা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ২৪ ধরনের মাদক দেশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, চোলাই মদ, দেশি মদ, বিদেশি মদ, বিয়ার, রেক্টিফাইড স্পিরিট, ডিনেচার্ড স্পিরিট, তাড়ি, প্যাথেডিন, বুপ্রেনরফিন, ভাং, কোডিন ট্যাবলেট, ফার্মান্টেড ওয়াশ, বুপ্রেনরফিন (বনোজেসিক ইঞ্জেকশন), মরফিন, আইচ পিল, ভায়াগ্রা, সানাগ্রা, টুলইন, পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট ও মিথাইল-ইথাইল কিটোন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে ইয়াবা। নামটা শুনলে মনে হয় না এটা এক জাতীয় মাদকদ্রব্য। কারণ এটা স্বাভাবিক পণ্যর মতোই পাওয়া যাচ্ছে। দেশের যত্রতত্র মিলছে এ মরন নেশা।এসব বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্বশেষ কথা হলো, এ অবস্থা থেকে ফিরে সুন্দর একটি রাষ্ট ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন মাদকদ্রব্যের অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধের মাধ্যমে সহজলভ্যতা রোধ করা, মাদকের শারীরিক কুফল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, মাদক ব্যবসায়ের সাথে জড়িতদের আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা, বেকারদের কর্মসংস্থান, প্রতিটি ধর্মের মূল্যবোধ সম্পর্কে অবহিত ও এর বিধি নিষেধ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি এর কুফল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় শক্তিশালী করা এবং মাদকাসক্তদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.