শ্যামল মিয়া :
বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার সদর ইউনিয়নের কানোড়া গ্রামে এক কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গত ১৫ই নভেম্বর ২০ইং রবিবার দুপুর ১:৩০ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবাবের সাথে আলাপকালে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসে।
কানোড়া গ্রামের বাসিন্দা শ্রী অনাথ চন্দ্রের ছেলে অভিযুক্ত ধর্ষক, শ্রী সমর চন্দ্র (২২) দীর্ঘদিন থেকে পাশের বাড়ির মৃত কল্পনা রানীর একমাত্র মেয়ে কবিতা (১১) কে প্রেমের প্রস্তাব ও নানান কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। কিশোরী কবিতা সমরের দেয়া প্রেম ও কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নানান সময় কবিতার ক্ষতি করতে ওত পেতে থাকতো সমর।
ভুক্তভোগির পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ই নভেম্বর ২০ইং বিগত তিন মাস আগে কবিতার নানী কবিতাকে বাসার সামনের গলিতে রেখে গরুকে ঘাস খাওয়াতে মাঠে নিয়ে যায় এবং কবিতার বিধবা মামী প্রতিদিনের ন্যায় সরকারী রাস্তার মাটি কাটার কাজে বেড়িয়ে পড়ে । ঠিক এসময় কবিতা ও তার বান্ধবী জয়া (১২) বাড়ির সামনের গলিতে খেলছিলো। সেই সময় কবিতার বাড়ী ফাঁকা থাকার সুযোগ নেয় শ্রী সমর চন্দ্র, বাড়ীর গলি থেকে কবিতাকে পাঞ্জাকোলে কবিতার ঘরেই তুলে নিয়ে যায় ধর্ষক সমর। ঘরে নিয়েই সমর প্রথমে দরজা বন্ধ করে দিয়ে কবিতার মুখের ভিতর গামছা দিয়ে হাত, পা বেঁধে ফেলে একাধিকবার ধর্ষণ করে। ধর্ষণের এক পর্যায়ে কবিতা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, ততক্ষণে কবিতার বান্ধবী জয়ার চিৎকারে আসেপাশের বাড়ির লোকজন ও কবিতার নানী চলে আসে। কবিতার নানী ও আশেপাশের লোকজন সমরকে দরজা খুলতে বললে সমর দরজা খুলেই দৌড়ে পালিয়ে যায়। কবিতার নানি ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে তার নাতনী কবিতা বিবস্ত্র অবস্থায় বিছানায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তাৎক্ষনিক কবিতার মাথায় পানি ঢেলে সাময়িক সুস্থ করে তোলা হয়। কবিতার নানী তাৎক্ষনিক বিষয়টি শ্রী সমর চন্দ্রের পরিবারকে জানালে,বিষয়টি সমরের মা ও এলাকার মাতব্বররা কবিতার নানীকে অর্থ প্রদান ও হত্যা করে ফেলার হুমকি ধামকি প্রদান করে, এবং কোন মানুষ যেন এই ঘটনা না জানে সেই কথাও উচ্চসরে বলে দেয়া হয়।
দীর্ঘ দিন পর কানোড়ার কিছু মানুষ গণমাধ্যমকে জানালে, ঘটনাটি খুব দ্রুত আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ভুক্তভোগীর পরিবার এবং এলাকার কিছু ব্যাক্তিবর্গ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনাটি মিমাংসা করে দেয়ার জন্য এলাকার কিছু মাতব্বরেরা ধর্ষক সমরের পরিবারের কাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ টাকা নেয়। টাকা গুলো নেয়ার সময় মাতব্বররা সমরের পরিবারকে বলেন, এই টাকা গুলোর মধ্যে পঞ্চাশ হাজার টাকা ধর্ষিতার পরিরার পাবে এবং বাকি এক লাখ টাকা কাহালু থানায় দেয়া হবে। তবে ধর্ষিতার পরিবার ও থানায় কথা বলে জানা যায় ঐসব মাতব্বররা কোন ধরনের টাকা পয়সা কাউকে না দিয়েই নিজেরাই আত্মসাৎ করেন। স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবারের সূত্রে জানা যায়, কানোড়ার হিন্দু সম্প্রদায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রী প্রদীপ বর্মন, শ্রী নির্মল চন্দ্র, শ্রী অনিল চন্দ্র, শ্রী ধলা চন্দ্র, একই এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের পুত্র সোহেল (৩৩) সহ বেশ কয়েকজন মিলে সমরের পরিবারের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন।
পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে ধর্ষিতার পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে মাতব্বরগন, কিন্তু এতে রাজি হয়নি মেয়েটির পরিবার।
অত্বপর ধর্ষিতার অসহায় পরিবারের পাশে এসে দাড়ান কানোড়া গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে, তরুন সমাজসেবক এস,এম শামীম। শামীমের সহযোগিতার সর্বাত্মক সহযোগিতায়
গত ৮ ফেব্রুয়ারী ২১ইং সোমবার কবিতার পক্ষে বাদী হয়ে তার নানী সুলুকা বালা (৪৫) বগুড়া জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-পি/২০২১। এছাড়াও কানোড়া এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছর খানেক আগে এই ধর্ষক আসামি সমর একই এলাকার জয়েনটুর মেয়ে শিউলি (১৪) কে যৌন হয়রানি করেছিলেন। সেই ঘটনাটিও ধামাচাপা দিয়ে দেন সমরের পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেয়েটির পরিবার হতদরিদ্র হওয়ায় এবং ছোট বেলায় মা মারা যাওয়ায় কবিতা ছোটবেলা থেকে কাহালু উপজেলার সদর ইউনিয়নের কানোড়া গ্রামে নানার বাড়িতে থাকে। মামলা হওয়ার আগে বিগত দিনগুলোতে হতদরিদ্র ও ভুক্তভোগী এই পরিবারটি সঠিক বিচারের আশায় অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ব্যর্থ হয়েছে। মামলার পর ধর্ষিতার পরিবার সুস্থ তদন্তের মাধ্যমে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।