মুহাম্মদ মতিন খন্দকার টিটু :
গণপরিবহন বন্ধের সরকারি নির্দেশনার মধ্যেই বগুড়ায় ছাত্রাবাস (মেস) খালি করার নির্দেশ দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। আর নির্দেশনা পালনে পুলিশ এর মধ্যেই মাঠে নেমেছে।
বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সকালের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস ছাড়তে হবে। তবে লকডাউনের মাঝপথে এসে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত ভোগান্তি বাড়াবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থী। অগ্রীম কোনো নোটিশ ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক বলেও মনে করছেন তারা। তবে প্রশাসন বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার মাধ্যমে আগেই এই বার্তা শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছানো হয়েছে।
পুলিশের দাবি লকডাউনের মধ্যে শিক্ষার্থীরা মেসে বা ছাত্রাবাসে থাকলে অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। এই কারণে তাদের ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশনা পুলিশ বাস্তবায়ন শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি সরকারের জারি করা নির্দেশনায় মেস বন্ধের কোনো কথা উল্লেখ নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ার কামারগাড়ি, জহুরুলনগর, পুরান বগুড়া, সেউজগাড়ি, জামিলনগর, সবুজবাগসহ আশেপাশে প্রায় ৫০০ ছাত্রাবাসা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ ছাত্রবাসই বাড়িভাড়া নিয়ে করা। শহরে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ, সরকারি শাহ সুলতান কলেজ, সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ, বগুড়া সরকারি সরকারি কলেজ, সরকারি পলেটেকনিক ইন্সটিটিউট, সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা, বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে শহরের ফুলবাড়ি, বৃন্দাবনপাড়া, সুত্রাপুর, খান্দার, ঠনঠনিয়া, রহমাননগর, মালতিনগর, লতিফপুর কলোনী, হাকিরমোড়, নামাজগড়, নুরানীমোড়, কাটনারপাড়া, নারুলী,চেলোপাড়া, বউবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েকশ ছাত্রাবাস গড়ে উঠেছে। বুধবার (০৭ এপ্রিল) শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের মেস খালি করার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। বলছে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ছাত্রাবাসা খালি করতে হবে। তবে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ ঘোষণার দুইদিন পর এ নির্দেশনার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। কিন্তু লকডাউনের ঘোষণার দুইদিন পর তাদেরকে ছাত্রাবাস ছাড়তে বলা হলো। সরকারি আজিজুল হক কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী খালেদ হাসান বগুড়া শহরের একটি ছাত্রবাসে থেকে সরকারি চাকরির পড়াশোনা করছেন। ছাত্রবাস ছাড়ার হঠাৎ ঘোষণার পর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসন আমাদেরকে ছাত্রাবাস ছাড়তে বলেছে, কিন্তু এমন সময় এটা বলা হলো যে সময় পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। অথচ সরকার লকডাউনের যেসব শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে ছাত্রাবাস ছাড়তে হবে এমন কোনো নির্দেশনা নেই। যদি ছাড়তেই হবে তাহলে প্রশাসন লকডাউনের দুই দিন পরে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল। এখন তো রাস্তায় কোনো গণপরিবহণ নেই। তাহলে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে যাবেন কীভাবে? শিক্ষার্থীদের তো আর ব্যক্তিগত গাড়ি নেই। হঠকারি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভেবে দেখা দরকার। শহরের কামারগাড়ি এলাকায় থাকেন সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইংরেজি চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সেলিনা (ছদ্মনাম)। তার বাড়ি নওগাঁয়। তাদের ছাত্রীনিবাসেও পুলিশ গিয়ে বলছে এসছে বৃহস্পতিবারের মধ্যে বাড়িতে চলে যেতে। সেলিনা বলেন, সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত ঠিকঠাক মতো আসে না। কোনো কর্মকর্তার মনে হলো হুটহাট সিদ্ধান্ত দিল। এ কেমন কথা। লকডাউনের মধ্যে আমরা কীভাবে বাড়ি যাব?
ময়না নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বাস, ট্রেনসহ গণপরিবহন বন্ধের মধ্যে হঠাৎ করে মেস খালি করার নির্দেশ দেওয়ায় চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছি। তবে এই ভোগান্তিতে একটু মানিয়ে নিতে বলেছেন বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফয়সাল মাহমুদ। তার ভাষ্য, মানুষজন তো রাস্তায় চলতেছে। আস্তে আস্তে যেতে হবে। সার্বিক দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; না হলে শিক্ষার্থীরা নানাভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষ একভাবে চিন্তা করেন। তবে আমরা ভিন্নভাবে চিন্তা করি। জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক জয়যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস ছাড়ার নির্দেশনা আলাদা করে জারি করার কিছু নেই। লকডাউনের নির্দেশনার মধ্যেই বিষয়টি বলা হয়েছে। সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা বলা হয়েছে। এখানে আলাদাভাবে ছাত্রাবাস বন্ধের বিষয়ে বলার কিছু নেই। গণপরিবহণ বন্ধের মধ্যে শিক্ষার্থীরা কীভাবে যাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, এই বিষয়টি শিক্ষার্থীদের আগেই ভাবা উচিত ছিল। মাঝপথে এসে এমন কথা বললে হবে না। আমরা নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করছি।