শেখ হাসিনা পলায়নের ১ বছর পূর্ণ

জাতীয়

বিশেষ প্রতিবেদক :
ফ্যাসিস্ট হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার ১ বছর পূরণ হলো আজ। দেড় হাজারের অধিক মানুষকে হত্যা, হাজার হাজার মানুষকে আহত, পঙ্গু করার দিন আজ। গত বছর ৫ আগস্ট হাসিনার ১৫ বছর দুরসাশনের পতন হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে দিয়ে দেশকে চরম সঙ্কটের মধ্যে রেখে নিজের জীবন নিয়ে বোন রেহানাসহ ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে সাথী করে প্রতিবেশী দেশ ভারতে সেনাবাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পলায়ন করেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। সেই থেকেই ভারতে অবস্থান করছেন তিনি। এছাড়াও আওয়ামীলীগের বহু শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকালেও কেউ বুঝতে পারেনি যে বাংলাদেশে আসলে কি হতে যাচ্ছে। কিন্তু ঐদিনই যে দেশের মানুষ ফ্যাসিস্টদের শাসনামল থেকে মুক্তি পাবে তা কেউ ধারণা পর্যন্ত করতে পারেননি। শেখ হাসিনা যে পালাবেন দেশের মানুষ কিংবা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বিশ্বাসও করতে পারেননি। তবে ঐদিন ছিলো আন্দোলনের চুরান্ত পর্যায়ের দৃশ্য দেশের জেলা গুলা থেকে ঢাকা মুখী ছিলো ছাত্র-জনতারা। থম থমে ছিলো রাজধানী ঢাকার রাস্তাঘাট।
সরকার দলীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্যরা সহ আওয়ামী অঙ্গ-সংগঠনের ক্যাডাররা ছিলো বেপরোয়া। রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষের লাশ হাসপাতাল মর্গে নেওয়ার কেউ ছিল না। আহতরা কাতরাচ্ছিলেন ফাঁকা রাস্তায়। দেশের কোথাও কোথাও শেখ হাসিনার মতাদর্শী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে বেপরোয়া গুলি ছোঁড়েছিলো সেদিন। কিন্তু সেদিন হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর কাছে দেশের মুক্তিকামী মানুষ মাথা নতো করেননি।
৫ আগস্ট দুপুরের দিকে শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে ভারতে পালিয়ে যান। হাসিনার সেই পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটির একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে নেট দুনিয়া সহ বিভিন্ন মাধ্যমে। তা দেখে দেশের মুক্তিকামী মানুষ।

সে দিন রাস্তায় নেমে আসে আনন্দের জোয়ার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের এক দফা দাবির মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন এবং পদত্যাগ করে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। পালানোর সময়ে তার সাথে ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন। পদত্যাগের আগে শেখ হাসিনাকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মাত্র ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দেয়া হয়। সেদিন শেখ হাসিনাকে ঘেরাও করতে লাখ লাখ ছাত্র-জনতা অপেক্ষা করছিল ভেতরে প্রবেশ করার জন্য। হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে এক স্বৈরাচারী সরকার প্রধানের সমাপ্তি ঘটে।

এর আগে আওয়ামীলীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ লেন গত ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারি। শেখ হাসিনা প্রথমবার ১৯৯৬ সালে নবম জাতীয় সংসদে নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ২০০৮ এর নির্বাচনের পর থেকে শেখা হাসিনার অধীনে প্রতিটি নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ ভোট চুরি। রাতের ভোটের নির্বাচন এবং সর্বশেষ ২৪ সালে নিজ দলের প্রার্থীদের দিয়ে ডামি নির্বাচন ছিলো দুনিয়া জুড়ে প্রশ্নবিদ্ধ। জনগণের ভোটের রায় তিনি উপেক্ষা করে টানা চারবার ক্ষমতায় এসেছিলেন। শেখ হাসিনা কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের বিরুদ্ধে ছিলেন দেশের মানুষ। কিন্তু জোরালো প্রতিবাদ করার ক্ষমতা চিলো না কারো। বিগত ১৫ বছর যারাই রাস্তায় আন্দোলনে নেমেছেন তারা দমনপীড়ন আর জেল জুলুমেন শিকার হয়েছেন বছরের পর বছর। হয়েছেন হত্যা-গুমের শিকারও।ক্ষমতা টিকে থাকতে শেখ হাসিনা তার দলীয় ক্যাডার আর তার অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে প্রতিবাদীদের দমন করেছিলেন। সাধারণ মানুষের বাক-স্বাধীনতা, অত্ম-প্রকাশের স্বাধীনতা সহ গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন তারা।

গত ২০০৬ সালে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তৎকালীন বিএনপি জামাত সহ চার দলীয় ঐক্যজোট সরকারের পতনের পর সেনা সমর্থিত ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচন ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও বিতর্ক রয়েছে চরমে। উল্লেখিত ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন গুলা আগের দিন রাতেই ব্যালটে সীল মারার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.