সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য ও গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধের দাবি সংবাদ সম্মেলন- যাত্রী কল্যাণ সমিতির

অন্যান্য

বিশেষ প্রতিনিধি :

মালিক-শ্রমিক-সরকার মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে বর্ধিত ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন ছাড়া বাসে বাসে ইচ্ছেমত ভাড়া আদায়, সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য ও ভাড়া ডাকাতি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বাসে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন না করে মালিকদের মর্জিমত ওয়েবিল অনুযায়ী যাত্রীর মাথা গুণে গুণে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তি ভাড়া আদায়, সরকারী তালিকা অনুযায়ী ভাড়া দিতে চাইলে যাত্রীদের অপমান, অপদস্থ করা, জোর জবরদস্থি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা, প্রতিবাদ করলে কোন কোন বাসে যাত্রীদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেন সংগঠনটি। এতে আরো বলা হয়, ঢাকার পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বার বার ঘোষণা দিয়েও কথিত সিটিং সার্ভিস বন্ধ-চালুর ইঁদুর-বিড়াল খেলা মেতে উঠেছে। এতে বলির পাঠায় পিষ্ঠ হচ্ছে যাত্রী সাধারণ। নানা অনিয়ম ও অযৌক্তিক, ভূয়া হিসাব দেখিয়ে তেলের দামের চেয়েও কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া বাড়িয়ে নিয়ে এখন রুটে রুটে বাস বন্ধ করে যাত্রীদের জিম্মি করে আরো ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তি ভাড়া আদায়ের পায়ঁতারা করছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রী সমিতির নেতারা। অনতিবিলম্বে একচেটিয়াভাবে বাড়ানো গণপরিবহন ভাড়া বাতিল করে যাত্রী প্রতিনিধির সমন্ময়ে একটি ন্যায় ও গ্রহণযোগ্য ভাড়া নির্ধারণ, বাসে বাসে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন করে তালিকা অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ প্রদানের জন্য সরকারের হস্থক্ষেপ কামনা করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

আজ (১৮ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ ও যাত্রীদের অপমান, অপদস্থ করার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী হয়রানীর সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে সাধারণ যাত্রীদের দীর্ঘ জিম্মিদশার অবসানের জন্য ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হল –
১. ডিজেলচালিত ষ্টিকার লাগিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায়ের সাথে সাথে বিআরটিএ প্রণীত বাস ভাড়ার তালিকা বাসে বাসে স্থায়ীভাবে লাগানোর ব্যবস্থা করা।
২. মালিকদের নির্দেশে ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় বন্ধ করে সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায়ের বিষয় নিশ্চিত করা।
৩. অন্যায়ভাবে কোন যাত্রীকে যাতে কোনভাবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নৈরাজ্যের মাধ্যমে অপমান অপদস্থ হতে না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করা।
৪. ওয়েবিলে যাত্রী গুণে ভাড়া আদায়ের নামে সিটিং সার্ভিসের নামে ভাড়া-ডাকাতি বন্ধে শুধু মৌখিক ঘোষণা নয়, কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
৫. সির্টিং সার্ভিসে বাস চালালেও ভাড়া নির্ধারণের শর্তানুযায়ী ৭০ শতাংশ গড় বোঝাই যাত্রী নিয়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় বাস চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে হবে। আর সিটিং সার্ভিস বিহীন বাসে দাঁড়ানো যাত্রীদের হাফ ভাড়া নিতে হবে।
৬. ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ডিজেলচালিত বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধির সুযোগে সিএনজিচালিত বাস-মিনিবাসের পাশাপাশি হিউম্যান হলার, লেগুনা, টেম্পু, অটোরিক্সায় যে হারে ভাড়া নৈরাজ্য তা বন্ধের কার্যেকর উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে।
৭. যাত্রী প্রতিনিধি ছাড়া মালিক-সরকার মিলে একচেটিয়াভাবে বাড়ানো ভাড়া বাতিল করে একটি ন্যায্য ও গ্রহনযোগ্য ভাড়া নির্ধারণ করা।
৮. ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৫৫ শতাংশ যাত্রী ৩ কিলোমিটারের কম দুরত্বে যাতায়াত করে। তাই সিটি সার্ভিসে সর্বনিম্ন বাস ভাড়া ০২ কিলোমিটার পর্যন্ত ০৫ টাকা নির্ধারণ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য আলাদা আলাদা ভাড়া পুণঃনির্ধারণ করতে হবে।
৯. ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে বিআরটিএর প্রতীকি অভিযান বন্ধ করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর বিরূদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা। যেমন- রজনীগন্ধ্যা বা মনজিল পরিবহনে কোন বাসে ভাড়ার তালিকা না থাকলে বা বেশি ভাড়া নেয়া হলে ঐ কোম্পানীর এমডি/ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে ঐ কোম্পানীর সকল বাস নিয়ম-নীতির মধ্যে আসতে বাধ্য হবে।
১০. দুরপাল্লার রুটে ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে কিলোমিটার চুরি ও ভাড়ার তালিকা জালিয়াতি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
১১. ভাড়া নির্ধারণের শর্ত লংঘন করে দৈনিক চুক্তিতে চালক-হেলপারের কাছে বাস ইজারা দেওয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে।
১২. গণপরিবহনে চাদাঁবাজী, পুলিশের হয়রানী বন্ধ করতে হবে।
১৩. কথায় কথায় যে কোন ঠুনকো অজুহাতে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করার মতো আইন বিরোধী কর্মকা- বন্ধ করতে হবে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন- বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, মানবধিকার সংগঠক নুর খান লিটন, বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবু জাফর সূর্য, সংগঠনের উপদেষ্টা শরীফুজ্জামান শরীফ, সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.