অনলাইন নিউজ ডেস্ক :
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির পুনর্নির্বাচনের দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বিষয়টিকে ‘মামা বাড়ির আবদার’ বলছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পুনর্নির্বাচন, এটা মামা বাড়ির আবদার। এই নির্বাচনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হয়েছে এটা কেউ বলবে না। এই নির্বাচনে কারচুপি, জালিয়াতি করার কোনো সুযোগ নেই। যদি নির্বাচনটা কোনো প্রকার জালিয়াতি-কারচুপির হতো তাহলে টার্ন আউট অনেক বেশি হতে পারতো। টার্ন আউট যেখানে ত্রিশেরও নিচে এটা তাহলে কেন? কারচুপি জালিয়াতি করলে তো উপস্থিতি এতো কম হওয়ার কথা না। কারচুপি যাতে না হয় সেজন্য ইভিএমের ডিজিটাল ব্যবস্থা।ূ
তিনি বলেন, বিএনপি এখন বলার জন্য বলছে, বিরোধিতা করছে। কিন্তু তারাও জানে এই নির্বাচনে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হয়েছে। ছোট-খাটো বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। এটা অত্যন্ত মাইনর। কোনো ধরনের সহিংসতা ছিল না। একেবারেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে। ভোট যেটাই হোক জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে।
সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান ও বক্তব্য জানতে চাইলে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, পৃথিবীর যারা উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ বলে দাবি করে… আমি আমেরিকার কথা বলি, তাদের কতো পার্সেন্ট লোক টার্ন আউট করে? আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তো দুনিয়ার গণতন্ত্রের সবচেয়ে অ্যারিস্ট্রোকেট (অভিজাত) নির্বাচন। সেই নির্বাচনে কেমন টার্ন আউট হয়? উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে টার্ন আউট কেমন? এজন্য সেইসব দেশের অবনতি কী ঘটছে, গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে
তিনি বলেন, টার্ন আউট কম হতে পারে। কারণ ইভিএম আমাদের এখানে প্রথম অভিজ্ঞতা, পুরো ঢাকাজুড়ে ইভিএম এর আগে ব্যবহার হয়নি। নতুন সিস্টেমের একটি বিষয় আছে। ছুটির বিষয় ছিল। এরকম কিছু কিছু অবস্থার উদ্ভব হয়েছে। আর আমাদের মধ্যেও দুর্বলতা অবশ্যই আছে। সেটা আমরা খতিয়ে দেখব। ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করবো।
নির্বাচন নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, একটা ভালো নির্বাচন হয়েছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে যে সংঘাতের আশঙ্কা ছিল সেটা হয়নি। এটা অবশ্যই স্বস্তিদায়ক এবং এর কৃতিত্ব নির্বাচন কমিশনের।
সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী কাউন্সিলর হয়েছে- এদের বিষয়ে দলের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) দেশে ফিরলে ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং হবে। সেখানে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলাপ আলোচনা হবে। সেখানে ভুল ত্রুটি দুর্বলতা নিয়েও আলোচনা হবে। সেখানে আমাদের বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করে সিটি নির্বাচনের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির সমাবেশ করতে সরকার ও আওয়ামী লীগের সহযোগিতা চেয়েছে- এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ঢাকা শহরে বা বাংলাদেশের কোথাও সমাবেশ করেছে আর তাতে আওয়ামী লীগ বাধা দিয়েছে এমন কোনো ঘটনা কখনও ঘটেনি। আওয়ামী লীগ কোথাও সমস্যা সৃষ্টি করেনি বা প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়নি। একটা উদাহরণও নেই।
তিনি বলেন, কর্মসূচিতে অনুমতির বিষয়টি অনেকদিন ধরেই চলছে। কারণ যারা সভা করবে তাদের নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে। সমাবেশটা সুশৃঙ্খল বা নিরাপদ যাতে হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটা ভূমিকা আছে। যে কারণে আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম না, আমরাও পুলিশের অনুমতি নিয়েছি। সভা-সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার বিএনপির আছে। তবে অনুমতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকেই আসতে হবে। এটা তো আওয়ামী লীগ দিতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ সাংগঠনিক জেলাগুলোর সম্মেলনে অংশ হিসেবে তিনটি জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাঙামাটিতে ২৮ তারিখে সম্মেলন হবে। এ মাসের ১২ তারিখ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়া এবং ১৩ তারিখ টুঙ্গীপাড়ায় সম্মেলন হবে।
তিনি বলেন, আমরা সম্মেলনকে শক্তিশালী করার জন্য সাংগঠনিক কাঠামোটা পুনর্বিন্যাস বা বিন্যাস, যেখানে যেখানে প্রয়োজন নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেছি। সামনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন আছে। এজন্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ মহানগরের সম্মেলন আমরা নির্বাচনের পরে করবো।
তিনি বলেন, জেলা সম্মেলনের আগে তৃণমূলে যেতে হবে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা সম্মেলনের কাজ শেষ করে জেলা সম্মেলনের তারিখ নিয়ে আমাদের যুগ্ম ও সাংগঠনিক যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের সঙ্গে আলাপ করে পরামর্শ করে জেলা সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।
ওবায়দুল কাদের জানান, শুক্রবার বিকেল ৪টায় ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণসহ সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, মহানগরের কমিটি হলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মহানগরের ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলো নতুন করে আমাদের করতে হবে। সেজন্য আমরা সহযোগীদের সঙ্গে মহানগরকেও নিয়েছি।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য আমিরুল আলম মিলন, আ খ ম জাহাঙ্গীর, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, মারুফা আকতার পপি, পারভীন জামান কল্পনাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।