সিটি নির্বাচনে গণসংযোগে নিবেনা মন্ত্রী এমপিরা আচরণবিধি মেনে চলতে দল সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ হাইকমান্ডের

রাজনীতি

ডেক্স রিপোর্ট :
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করবেন না আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী অথবা সংসদ সদস্যরা। এ ব্যাপারে নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে দলটির হাইকমান্ড।

শুধু তাই নয়, এ নির্দেশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা- তা মনিটর করতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দু’জন প্রেসিডিয়াম মেম্বারকে। দলটির এমন সিদ্ধান্তে নির্বাচনী প্রচারে ক্ষমতাসীন দলের হেভিওয়েটদের অংশগ্রহণ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের অবসান হল। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

দুই সিটির নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ত থাকা-না থাকা নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে সৃষ্টি হয় এক ধরনের ‘বাকযুদ্ধ’। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শনিবার নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি করা হয়- সংসদ সদস্যরা ঘরোয়া বৈঠক করতে পারবেন।

অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনসংক্রান্ত কোনো সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না সংসদ সদস্যরা। এমনকি নির্বাচনের কোনো কাজ তারা করতে পারবেন না। এটাই আচরণবিধিতে বলা হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নির্বাচনী বিধি নিয়ে মুখোমুখি হলেও এই মুহূর্তে নিজ অবস্থান থেকে সরে এসেছেন ক্ষমতাসীনরা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আবদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সব সময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের যে আচরণবিধি দিয়েছে তা অবশ্যই মেনে চলব। ইতিমধ্যে আমাদের দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। দলের পক্ষ থেকেই গুরুত্বসহকারে দলীয় নেতাকর্মী, এমপি-মন্ত্রীকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা-২০১৬ এর ২২ ধারায় বলা আছে, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী, সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন-পূর্ব সময়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

তবে শর্ত থাকে যে, উক্তরূপ ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল তার ভোট প্রদানের জন্য ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন।’

সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি মেনে চলতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার রাজধানীর এলেনবাড়িতে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে তিনি বলেন, দলীয়ভাবে আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের জানিয়ে দিয়েছেন কোনোভাবেই যেন নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন না হয়।

‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেছেন, ‘আমি আপনাদের বিবেকের কাছেই প্রশ্ন রাখছি। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কাকে বলে? বিএনপি মহাসচিব, তিনি প্রকাশ্যে জনসভা করতে পারবেন, নির্বাচনী প্রচারণা করতে পারবেন, গণসংযোগ করতে পারবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেটা করতে পারবেন না।

তিনি বলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মোশাররফ প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন, কিন্তু আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, তারা এমপি, সে কারণে প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। সেটা কি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হল?’

অন্যদিকে মন্ত্রী ও এমপিত্ব ছেড়ে সিটি নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে আহ্বান জানিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি বলেন, খুব দুঃখ করে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুল যদি নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন, আমি পারব না কেন?’ একশ’বার পারবেন।

আইন বলে, মন্ত্রী-এমপি থাকলে আপনি প্রচারণা চালাতে পারবেন না। সুতরাং মন্ত্রিত্ব ও সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। আসুন, আপনি নৌকার জন্য প্রচার করেন, আমি ধানের শীষের জন্য করি। আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করি। দেখা যাক জনগণ কার দিকে থাকে।

সবমিলিয়ে কয়েকদিন ধরে এমপিদের নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে যুক্তিতর্ক বেশ জমে উঠেছিল। অবশেষে ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে সেই বিতর্কের অবসান হল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.