সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি করেও কুমেক হাসপাতালের প্রধান সহকারী আওয়ামী দোসর দেলোয়ার এখনো বহাল তবিয়তে

অপরাধ

কোন অদৃশ্য শক্তির বলয়ে ব্যবস্হা নিতে ব্যর্থ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য দপ্তরের সুদৃষ্টি আর্কষণ।

এম শাহীন আলম :
যুগের পর যুগ বিরতিহীন গতিতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান সহকারী আওয়ামী দোসর/দালাল দেলোয়ার হোসেন আওয়ামী দলীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে অনিয়ম আর দুর্নীতি দেদারসে চালিয়ে গেছেন বলে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকে) অভিযোগ হলেও আওয়ামী দলীয় আর্শীবাদ পুষ্ট হওয়ায় দেলোয়ার এর বিরুদ্ধে অভিযোগটি খারিজ হয়ে যায় বলে জানা যায়। হাসপাতালটির প্রধান সহকারী দেলোয়ার হোসেন আওয়ামী সরকার দলীয় নেতাদের ছত্র-ছায়ায় অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি তার পরিবারের লোকজনের নামে বেনামে ফ্ল্যাট বাড়ী সহ বিপুল সম্পত্তির অর্জন করেছেন বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়। এই দেলোয়ার এর বিরুদ্ধে স্হানীয় প্রত্যেক্ষদর্শী সচেতন মহলের অভিযোগ একজন সরকারি কর্মচারী যুগের পর যুগ একেই প্রতিষ্ঠানে ঘুরে ফিরে কিভাবে এত লম্বা সময় ধরে চাকরি করে। একই প্রতিষ্ঠানে বেশি সময় ধরে চাকরি করার সুযোগে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে স্থানীয় সংসদ সদস্য বাহার এব আশীবাদপুষ্ট হয়ে এমপির নাম ব্যবহার করে কাউকে তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া ভাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ বানিয়েছেন যা তার বেতন আর অন্যান্য সুযোগ সুবিধার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ রয়েছে বলে জানা যায়। জনসম্মুখে প্রদর্শিত সম্পদের বাইরেও তার গ্রামের বাড়ীতে বহু সম্পদ গড়েছেন বলে অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়।

সরজমিন অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান সহকারী হিসেবে আওয়ামী দোসর দেলোয়ার হোসেন গত দুই যুগের কাছাকাছি সময়ে হাসপাতালটিতে আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছেন। আধিপত্য বিস্তার করে অনিয়ম চালিয়ে যেতে গত এক যুগ সময় ধরে তাকে সহযোগিতা ও সেন্টার দেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মামুন সহ তার একদল পেটুয়া বাহিনী যারা হাসপাতালটির বাহিরে এবং ভিতরে নিজেদের আধিপত্য দালালী সহ নানান অনিয়মের সাথে জড়িত আছেন বলে জানা যায়। এই হাসপাতালটিতে বিগত দিনে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে যত ধরনের দুর্নীতির অনিয়মের একটা ভাগ পেতেন ইউপি রেডিমেট বিনা ভোটের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ মামুন। সাবেক এমপি বাহারের মনোনীত লোক হওয়া ইউপি চেয়ারম্যান মামুন কুমেক হাসপাতালে তার আধিপত্য বিস্তার সহ সকল অনিয়মের ভাগীদার হিসেবে প্রধান সহকারী দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে গড়েছেন আওয়ামী সিন্ডিকেট। এখনো হাসপাতালটিতে এই সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছেন বলে জানা যায়।

অভিযোগ উঠেছে গত ৫ আগষ্ট-২০২৪ এর পর দেশের সকল কিছুর পরিবর্তন হলেও অনিয়ম আর দুর্নীতির বরপুত্র আওয়ামী আর্শীবাদ মদত পুষ্ট দেলোয়ার হোসেন কোন অদৃশ্য শক্তির খুঁটির জোরে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। বিগত দিনে তার অনিয়মের বিরুদ্ধে অসংখ্য পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশ পরও ব্যবস্হা নিতে ব্যর্থ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্হা নিতে স্বাস্থ্য দপ্তরের সুদৃষ্টি আর্কষণ।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, গত ১৯৯২ সাল থেকে বর্তমানে ২০২৪ সাল চলমান এই কুমেক হাসপাতালে দেলোয়ার দাপটের সহিত চাকরি করে যাচ্ছেন। জানা যায়, দেলোয়ার হোসেন ১৯৯২ সালে কুমেক হাসপাতালে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি জীবন শুরু করেন। ক্যাশিয়ার পদে পদোন্নতি অযোগ্য হলেও স্থানীয় এমপি বাহারের আর্শীবাদপুষ্ট দেলোয়ারকে চাকরিবিধি ভঙ্গ করে ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর অবৈধভাবে তাকে প্রধান সহকারী পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। যা সম্পূর্ণ বেআইনী বলেও অভিযোগ রয়েছে। আরো জানা যায়, দেলোয়ার ক্যাশিয়ার থাকাকালীন সময় থেকেই তার পরিবার নিয়ে হাসপাতালের ডাক্তারদের আবাসিক ভবন ব্যবহার শুরু করেন। এছাড়াও দেলোয়ার হোসেন দাপ্তরিকভাবে কুমেক হাসপাতালের প্রধান সহকারী হলেও তিনি দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে অঘোষিতভাবে হাসপাতালের আরো দুটি পদ দখল করে আছেন বলে জানা যায়। এই দেলোয়ার সরকারি চাকরিবিধি ভঙ্গ করে হয়েছেন প্রধান সহকারী পদের পাশাপাশি তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে হাসপাতালের হিসাব রক্ষক ও ক্যাশিয়ার পদটিও। বিগত দিনে দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্তে প্রমাণিত হলেও স্থানীয় এমপি বাহারের ইশারায় দেলোয়ার অদ্যবধি পর্যন্ত বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

সরজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায় দুর্নীতিবাজ দেলোয়ার হোসেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘ ২২ বছর চাকরির সুবাধে দুর্নীতি আর অনিয়ম করে টাকা উপার্জনের মাধ্যমে তার নিজ গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুরে এবং বর্তমান কুমিল্লার চাপাপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েক কোটি টাকার জমি ক্রয় করেছেন বলে দালিলিক প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও কুমিল্লা দুদক অফিসের দক্ষিণ পাশেে রয়েছে দেলোয়ারের ৬ তলা বিশিষ্ট একটি বিলাসবহুল ভবনে কয়েকটি শেয়ার এর পাশাপাশি ২৪টি ইউনিট এর মালিক তিনি। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার একজন স্কুল শিক্ষিকা। অভিযোগ রয়েছে ২০০৭ সালে মাহমুদা আক্তার নামের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে বদলি হয়ে আসেন। ওই সিনিয়র নার্স স্টাফকে নিজের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে দেলোয়ার হোসেন তার মেয়ে কাবনুর বিনতে কবিরকে কুমিল্লা ফয়জুন্নেসা বালিকা সরকারি বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করানোর জন্য আবেদন করেন। নিজের স্ত্রীর নামের সাথে নার্সের নামের মিল থাকায় অবৈধভাবে তা ব্যবহার করেন দেলোয়ার তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তিতেও তিনি অনিয়মের আশ্রয় নেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,গত ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো: বেলাল হোসেন স্বাক্ষরিত বিভাগীয় মামলার অভিযোগে উল্লেখ্য করা হয়, মোঃ দেলোয়ার হোসেন ১৯৮৫ সনের নিয়োগ বিধি লংঘন করে ক্যাশিয়ার পদ হতে প্রধাণ সহকারী পদে পদোন্নতি নেন। প্রতি অর্থ বৎসরে বিভিন্ন খাত হতে বিভিন্ন প্যাডের মাধ্যমে ক্রয় মেরামত বাবদ ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।  হাসপাতালের কফি হাউজের বিদ্যুৎ বিলের টাকা আত্মসাৎ সহ প্রতি বৎসর সিসি ক্যামেরা ও ইন্টারকম মেরামত বাবদ বিল ভাউচারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন বলেও জানা যায়। এছাড়াও প্রধান সহকারী হয়ে বিল ভাউচার তৈরী করা এবং হিসাব রক্ষক হয়ে বিল ভাউচার পাশ করা ও ক্যাশিরার হয়ে টাকা উত্তোলন করা অর্থাৎ তিনটি পদের দায়িত্ব পালন করেন এই দুর্নীতিবাজ দেলোয়ার। এছাড়াও এসি,কম্পিউটার,ইন্টারকম সহ অন্যান্য মেরামত বাবদ প্রায় আড়াই লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে দেলোয়ার এর বিরুদ্ধে। দুর্নীতিবাজ দেলোয়ারের নিজ গ্রামের বাড়ী শরিয়তপুরে সম্পত্তি ক্রয় এবং কুমিল্লা চাপাপুরে জমি ক্রয় সহ কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন স্হানে ফ্ল্যাট ক্রয় করেন বলে অনুসন্ধান পাওয়া যায়। বিগত দিনে দুদকে দেলোয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলেও দেলোয়ার আওয়ামীপন্হি হওয়া দুদক কর্মকর্তাদের দলীয় আচরণসহ স্হানীয় এমপি বাহারের পচন্দের লোক হওয়ার কারণে দলীয় ক্ষমতার দাপটে এবং আর্থিক সমঝোতায় সেখান থেকে সে পরিত্রান পায় বলেও জানা যায়। কুমেক হাসপাতালে আউটসোর্সিং লোক নিয়োগে অনিয়ম, কর্মীদের সরকারি নির্ধারিত বেতন না দেওয়া, ঠিকাদারদের অনিয়মে সহযোগিতা করারও অভিযোগ রয়েছে দেলোয়ার এর বিরুদ্ধে। দেলোয়ার এমপি বাহারের পচন্দের লোক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিগত দিনে কেউ কথা বলার সাহস পেতেন না বলেও জানা যায়।

সরজমিন অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কুমেক হাসপাতালের ভিতরে একটি ঔষুধের দোকানের অনুমোদন দেওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে সেখানে তিনটি দোকান রয়েছে, যা আইন-বর্হিভূত। এই দোকানগুলোও স্হানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মামুন এর যোগসাজশে দেলোয়ার দোকান করার সকল বন্দোবস্ত করেন। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,গত ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর দুর্নীতিবাজ দেলোয়ারের বিষয়ে তৎকালীন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রশাসন-১ অধিশাখার উপসচিব জাকিয়া পারভীন হাসপাতালের পরিচালকের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি দেন। কুমেক হাসপাতালে ওই সময় ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে ছিলেন ডা. মো. মাহবুব আলম। চিঠিতে প্রধান সহকারী দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় অথবা ফৌজদারি মামলা করতে আদেশ দেয়া হয় এবং উক্ত হাসপাতালের প্রশাসনিক ও আর্থিক কর্মকান্ড থেকে তাকে বিরত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও এমপি বাহারের ছায়াতলে আশ্রয় নেওয়ার কারণে তার ভয়ে এ বিষয়ে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

বিগত ২০২০ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেলোয়ার এর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি আর অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়ে ১ মার্চ তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগদান করতে ৩ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেন। কিন্তু দেলোয়ার হোসেন অধিদপ্তরের মহা পরিচালক, স্বাস্থ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা করে তার বদলির আদেশ স্থগিত করেন। ওই সময় কুমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্হা গ্রহন করেননি বলে একাধিক সুত্রে জানা যায়।
আরো জানা যায়, কুমেক হাসপাতালের প্রধান সহকারী খ্যাত অনিয়ম আর দুর্নীতির বরপুত্র দেলোয়ার হোসেন শরিয়তপুর জেলার সখিপুর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে ।

দুর্নীতিবাজ দেলোয়ার তার এসব অপকর্ম ঢাকতে  কুমিল্লার স্হানীয় এবং ঢাকার বেশ কয়েকজন সাংবাদিক সহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে ফোন করে পুনরায় খবর প্রকাশ না করতে তদবির সহ আকুতি জানিয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানেও দেলোয়ার এর অনিয়মের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে যথাযথ ব্যবস্হা না নেওয়া পর্যন্ত দুর্নীতিবাজ দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক নিউজ চলমান থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.