পবিত্র শবে বরাত আজ

অন্যান্য

বিশেষ রিপোর্ট :
মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল বরাত আজ। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় আজ শুক্রবার (১৮ মার্চ) দিবাগত রাতে সারাদেশে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিকে মুসলমানরা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। শবে বরাত মুসলামানদের কাছে লাইলাতুল বারাআত নামেও পরিচিত। পবিত্র শবে বরাত মাহে রমজানেরও আগমনী বার্তা দেয়।

আরবি শব্দ লাইলা অর্থ রাত। অপরদিকে ফার্সি শব্দ শব অর্থও রাত। আর বরাত অর্থ মুক্তি বা নিষ্কৃতি। শাবান মাসের এ রাতকে মুক্তির রাত বা নাজাতের রাত হিসেবে অবহিত করা হয়। শবে বরাত এবং এই রাতে ইবাদত বন্দেগী করা নির্ভরযোগ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই রাসূল (সা.) ও সাহাবী ও তাবেঈনের যুগ থেকে অদ্যাবধি এ রাতে বিশেষভাবে নফল ইবাদত ধারাবাহিকতার সাথে চলে আসছে। মহিমান্বিত এ রাতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন।

এই রজনীতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময়ের অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকিরে মগ্ন থাকবেন। অনেকে রোজা রাখেন, দান-খয়রাত করেন। অতীতের গুনাহের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা, ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা এবং করোনা মহামারি থেকে মুক্তি জন্য মুসলমানরা মোনাজাতে অংশ নিবেন । এছাড়া অনেকেই এ রাতে মা বাবাসহ আত্মীয়দের কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন।

এ উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায় ওয়াজ মাহফিল, দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘শবে বরাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ওয়াজ মাহফিল শেষে বাদ এশা দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ওয়াজ ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান।

সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট তাঁর বাণীতে দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব মুসলমানকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানিয়েছেন।

ইদানিং এক শ্রেণির লোক বাংলায় হাদিস পড়া ছাড়া যাদের কোরআন হাদিসের ন্যূনতম কোন গভীর জ্ঞান নেই। তারা অতিগবেষণার নামে ইসলামের সুপ্রমাণিত বিষয়গুলোকে জনসাধারণের মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।

তারা বলছে, শবে বরাতের হাদিসগুলো সহীহ নয়, এ রাতে ইবাদত করা বিদআত ইত্যাদি। অথচ শবে বরাত সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হওয়ার পরও বিদআত বলাটা হাদিস সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক। আর জেনে এমনটি বলে থাকলে তারা রাসূল (সা.) এর হাদিস অস্বীকারের মতো মারাত্মক অপরাধে অপরাধী হবেন। রাসূল (সা.) এর হাদিসের প্রতি বিদ্বেষী হওয়া ছাড়া হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এ ফযীলতপূর্ণ রাতকে কেউ অস্বিকার করতে পারে না।

হযরত আলী বিন আবু তালীব (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে (শবে বরাত) তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনের বেলা রোযা রাখ। নিশ্চয়ই আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডুবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন, কোন গোনাহগার ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চাও কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত।

(সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-৩৮২২)। হযরত আয়শা (রা.) বলেন, এক রাতে রাসূল (সা.) কে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে (মদিনার কবরস্থান) গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন, কি ব্যাপার আয়শা? (তুমি যে তালাশে বের হলে?) তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তার রাসূল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? (তোমার পাওনা রাতে অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন?)।

হযরত আয়শা (রা.) বললেন, আমার ধারণা হয়েছিল, আপনি অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল (সা.) তখন বললেন যখন শাবান মাসের ১৫ রাত আসে অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন।

(সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং-৭৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৬০২৮, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদিস নং-১৫০৯)। হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, অর্ধ শাবানের রাতে (শবে বরাতে) আল্লাহ তায়ালা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন। এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস নং-২৭৫৪)। আল্লাহ আমাদেরকে সহিহ বুঝ এবং আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.