কুবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে অধ্যাপকদের পদোন্নতি আটকে রাখার অভিযোগ

অপরাধ

বিশেষ প্রতিবেদক :
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন গ্রেড-২ এবং গ্রেড-১ অধ্যাপক না হওয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিহিংসা পরায়ণ ও অপেশাদারভাবে কুবি অধ্যাপকদের পদোন্নতি দুই বছর ধরে আটকে রাখার অভিযোগ তুলেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ অভিযোগ করেন তারা। এছাড়াও সাত কর্মদিবসের মধ্যে অধ্যাপকদের পদোন্নতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করে শিক্ষক সমিতি।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন বিভাগের ১১ জন শিক্ষক অধ্যাপক পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে দুইজন গ্রেড-১ এবং বাকি নয়জন গ্রেড-২ পদে আবেদন করেছেন। আবেদনকৃত শিক্ষকরা হলেন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্যাহ, অধ্যাপক ড. শেখ মকছেদুর রহমান, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম¯ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন ও অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহ. আমিনুল ইসলাম আকন্দ, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাকির ছায়াদউল্লাহ খান এবং রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. জি. এম. মনিরুজ্জামান ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম মওলা।

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ জাকির ছায়াদউল্লাহ খান বলেন, আমি ২০২১ সালের জুলায় মাসে গ্রেড-১ আবেদন করেছি। শুনেছি এ বিষয় নিয়ে কয়েকবার মিটিং হয়েছে। কিন্তু কোন অগ্রগতি দেখিনি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আবেদন করাও লাগে না। এই ধরনের বিষয়ে এতদিন লাগার কথা না। এই কারণে আমি সামাজিক, মানসিক ও আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

এ বিষয়ে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন সরকার বলেন, আমি প্রায় দুই বছর হয়েছে গ্রেড-২ এর জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু কেন আমাকে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয় নিয়ে আমি উপাচার্য স্যারের সাথে কয়েকবার দেখা করেছি। তিনি বলেছেন, কমিটি করে শীঘ্রই সমাধান করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। আমি মনে করি, এই কাজ করতে দুই ঘণ্টাও লাগার কথা নই।

তিনি আরও বলেন, উপাচার্য স্যার আমাকে বলেছেন, একটি প্রস্তাবনা দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রারকে বলা হয়েছে। কিন্তু রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি আমাকে জানান, প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এরপর কী হয়েছে এটা কেউই জানে না।আমি মনে করি, শিক্ষকদের গ্রেড বাড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিংয়েও অবদান রাখবে।

এদিকে চিঠিতে শিক্ষক নেতারা বলেন, অধ্যাপক পদে পদোন্নতির আবেদনের দুই বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অবৈধভাবে আবেদনকৃত অধ্যাপক পদগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছেন। পদোন্নতি প্রদানের জন্য এখনও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। ফলে শিক্ষকরা তাদের বৈধ প্রাপ্যতা ও সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়াও পেশাগত মর্যাদা ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবেও শিক্ষা-গবেষণায় মনোনিবেশ করতে ব্যাহত হচ্ছেন বলে তারা চিঠিতে উল্লেখ করেন।

চিঠিতে তাঁরা আরও বলেন, পদোন্নতি না হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারি দায়িত্ব পালনের সুযোগ সীমিত হচ্ছে। ফলে জাতীয় পর্যায়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকগণ মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ গ্রেড-২ এবং গ্রেড-১ অধ্যাপক না হওয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ ও অপেশাদারভাবে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। যা সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা ও মানবসম্পদ বিনির্মাণের অন্তরায় এবং সরকারের নির্দেশনা অবমাননার শামিল ও রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধও বটে।
এছাড়াও চিঠিতে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করে আবেদনকৃত গ্রেড-২ এবং গ্রেড-১ অধ্যাপক পদে পদোন্নতি/পদায়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও পরবর্তী সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে নির্ধারিত তারিখ থেকে কার্যকর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তাঁরা৷

এদিকে চিঠির অনুলিপি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে কাকে বুঝিয়েছেন জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে আমরা উপাচার্যকেই বুঝাচ্ছি। ওনি তো গ্রেড ৩। তাই সকল শিক্ষকদের ধারণা উনি যেহেতু গ্রেড-৩ এর, এজন্য কেউ গ্রেড-২, গ্রেড-১ যাক, সেটি তিনি চান না।

এ অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার দপ্তরে গিয়েও পাওয়া যায়নি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.