নিজেকে রাষ্ট্রপতির আত্মীয় পরিচয়ে দাম্ভিকতা দেখিয়ে যত অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন এক্সসিএন সাইফুল

অপরাধ

এম শাহীন আলম :
সিরাজগঞ্জের এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম তার জন্মস্হান পাবনায় হওয়ায় নিজেকে বর্তমান রাষ্ট্রপতির কাছের আত্মীয় পরিচয়ে দাম্ভিকতা দেখিয়ে নিজের খেয়াল খুশি মতো চালিয়ে যাচ্ছেন যত অনিয়ম। ঠিকাদার সহ যার তার সাথে অহংকার দেখিয়ে কথা বলা সহ দুর্ব্যবহার, অকারণে কাজের ফাইল এক টেবিল থেকে অন্য টেবিলে ঘুরানো, ঠিকাদারদের বিল পাশ প্রদানে নিজের খেয়াল খুশি মতো ধীরগতি, ঠিকাদারকে না জানিয়েই নিজ ইচ্ছা মতো কাজ বাতিল। সাংবাদিকরা কোন তথ্যের জন্য গেলে কাজের অজুহাত দেখিয়ে সাংবাদিকদের তথ্য না দিয়ে তার হিসাব রক্ষক সরকার মহির উদ্দীনকে দিয়ে ম্যানেজ করার প্রবোনতা সহ দাপ্তরিক নিয়ম কানুন না মেনে এরে মধ্যে একাধিক ঠিকাদারের চুক্তি বাতিলসহ নানান বিষয়ে ঠিকাদারদের হয়রানির অভিযোগ নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

সরজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায় গত ১০ জুলাই – ২০২৪ (বুধবার) সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ এলজিইডি কার্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামকে তার অনিয়মের কারণে স্হানীয় ১৫-২০ জন ঠিকাদার তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

ঘটনার দিন উপস্হিত ঠিকাদাররা স্হানীয় বেশ কযেকজন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে উন্নয়ন কাজে সরজমিনে পরিদর্শন গাফিলতি, ঠিকাদারের সাথে দুর্ব্যবহার, বিল পাশে বিনা কারণে অনীহাসহ নানা অভিযোগের কথা নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুলের সামনে উপস্থাপন করেন। এ সময় উপস্হিত ঠিকাদারদের কথা গুরুত্ব না দিয়েহ নিজের কাজে ব্যস্ততা দেখানোয় উপস্হিত ঠিকাদাররা আরো ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি তখন সঠিক উত্তর দিতে না পারায় এক পর্যায়ে নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল উপস্হিত সকলের নিকট ক্ষমা চেয়ে সকলকে অফিসে রেখেই তিনি থেকে বের হয়ে যান।

সরজমিনে স্হানীয় কয়েকজন ঠিকাদার এর সাথে আলাপ কালে তারা জানান। বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল দাম্ভিকতা দেখিয়ে নিজেকে স্বচ্ছ দাবি করলেও তিনি আসার পর থেকে অনিয়ম আর হয়রানি আরো বেড়ে গেছে। ঠিকাদাররা জানান, বর্তমানে সিরাজগঞ্জ এলজিইডি থেকে কাজ নিতে গেলে টাকা, কাজ শুরু করতে গেলে টাকা, বিল নিতে গেলে টাকা, ব্যাংক সিকিউরিটি নিতে গেলে টাকা দিতে হয়। এছাড়া কাজ শেষ হওয়ার পর কাজের জামানত ফেরত নিতে গেলেও টাকা দিতে হয় জেলা ও উপজেলা অফিসারদের। দীর্ঘ সময় ধরে সিরাজগঞ্জ এলজিইডির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম দুর্নীতি অভিযোগ উঠলেও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলীর নিজ জেলা পাবনা হওয়ায়। তিনি বর্তমান রাষ্ট্রপতির আত্মীয় হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্হা নেওয়া হচ্ছে না বলে জানা যায়। স্হানীয় ঠিকাদারদের অভিযোগ এই ইঞ্জিনিয়ার আসার পর থেকেই অনিয়ম বেড়ে গেছে। টাকা ছাড়া কোন কথা নেই। আর টাকা দিলে সব সহজ হয়ে যায় সিরাজগঞ্জ এলজিইডি অফিসে।

নির্ভরযোগ্য সুত্রে অনিয়মের বিষয়ে তথ্য পেয়ে গত ২৫ নভেম্বর – ২০২৪ ইং তারিখে সরজমিন অনুসন্ধানে সিরাজগঞ্জ এলজিইডি অফিসে গেলে অফিসারদের সবাইকে মিটিং এ পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে যেহেতু অফিস এসাইনমেন্ট নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই জন্য সকাল থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের সাথে সাক্ষাত করার জন্য অপেক্ষা করার পালা শুরু হলো। বেলা তখন আড়াইটা মিটিং এর ১ম পর্ব শেষ তিন তলা থেকে নেমে আসলেন সিরাজগঞ্জ জেলা এলজিইডি বিভাগের সিনিয়ার প্রকৌশলী শাহ মো. শহিদুল হক। তার সাথে বিস্তারিত আলাপ করে তথ্য চাওয়া হলে তিনি জানান, আমি হলাম অর্ডার পালনকারী নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের সাথে কথা বলুন তিনি আপনার সকল প্রশ্ন কিংবা তথ্য লাগলে দিয়ে দিবে। আমার সাথে কোন বিষয়ে প্রশ্ন কিংবা তথ্য চাইলে আমি কিছু করতে পারবো না। আপনি অপেক্ষা করুন আমি খাবার খেতে যাচ্ছি বলে তিনি তার রুম থেকে বের হয়ে যান। তার কিছুক্ষণ পর সিনিয়ার অফিসারের রুমে বসে থাকা অবস্হায় সিরাজগঞ্জ এলজিইডি অফিসে কর্মরত হিসাব রক্ষক সরকার মহির উদ্দীন ১ হাজার টাকার একটি নোট নিয়ে এসে বলেন, সিনিয়ার স্যার এক্সসিএন স্যারের সাথে আপনাদের বিষয়ে কথা বলে আমাকে ১ হাজার টাকা দিয়ে পাঠিয়েছে আপনাদের দেওয়ার জন্য। সরকার মহির উদ্দীন জানান,মিটিং শেষ হতে তো আরো অনেক সময় লাগবে সিনিয়ার স্যার বললো এই টাকাটা দিতে, বসে থেকে আর কি করবেন। ১ হাজার টাকা দিতে হিসাব রক্ষক সরকার মহির উদ্দীন খুব জোরাজোরি করেন। তাকে টাকাটা ফেরত দিয়ে ভবনের তিন তলায় মিটিং চলাকালীন সময়ে ঢাকা থেকে আসা অডিট অফিসার সহ মিটিং এ উপস্হিত সকলের অনুমতি নিয়ে সিনিয়ার অফিসারের রুমে ঘটে যাওয়া বিষয়ে বিস্তারিত জানালে নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান,আপনি নিচে গিয়ে বসুন আমি আসতেছি আপনাদের সাথে কথা বলবো। তার আধ ঘন্টা পর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম তার অফিস রুমে দাম্ভিকতার সহিত বললো আপনারা কোথায় থেকে কি জন্য আসছেন। তাকে তার অফিসে যাওয়ার বিস্তারিত কারণ জানালে তিনি বলেন আমার বাড়িটা পাবনায়, আমি রাষ্ট্রপতি মহোদয়ের আত্মীয়। আমি সাংবাদিকদের বিষয়ে বহু কিছু জানি। নিউজ করে কি আর হবে। আমার এখানে কোন ধরনের অনিয়ম হয় না। আপনার কিছু বলার থাকলে বলুন। আর তথ্য নিতে হলে আবেদন করে চলে যান,আমি আমার সময় মতো আমার উপরের অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করে নিয়ম অনুসারে আপনাকে তথ্য দিয়ে দিবে। আর কিছু বলার থাকলে বলুন, আমার আরো বহু কাজ আছে আমি উঠবো বললেন নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম। তার নিকট তথ্য আইনে লিখিত ভাবে তথ্য চাওয়া হয়েছে এবং অনুসন্ধানও অব্যাহত রয়েছে। অনিয়ম বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে নিউজ চলমান থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.