বিশেষ বরাদ্দের কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ কুমিল্লা বরুড়া উপজেলা প্রকৌশলী মেহেদীর বিরুদ্ধে

অপরাধ

আগের কর্মস্হলে একেই অভিযোগে শোকজ, পুনরায় বাপের টিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে কাজের বরাদ্দ।

এম শাহীন আলম :
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় স্হানীয় এমপি’র নামে উপজেলা ভিত্তিক ১কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দে পুরোনো প্রকল্পের নামমাত্র কাজ দেখিয়ে পুরো টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা যায়, গত জুন মাসে কুমিল্লা- ৮ (বরুড়া) আসনের সাবেক সাংসদ আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন শামীম এর অনুকূলে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। সংসদীয় এলাকায় রাস্তাঘাট সংস্কার, মসজিদ-মন্দির সংস্কার. গভীর নলকূপ স্থাপন, ঘাটলা নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সাবেক সাংসদ আবু জাফর মোহাম্মদ সফি উদ্দিন শামীম অধীনে এ টাকা বরাদ্দ দেন স্হানীয় সরকার বিভাগ। বরুড়া উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ মেহেদী হাসান বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্যতা যাচাইয়ে কুমিল্লা বরুড়া উপজেলা গিয়ে এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা হলে তার কাছে তথ্য আইনে আবেদন ফরম পূরণ করে তথ্য চাওয়া হলে প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম বাদ দিয়ে কাজের একটি খসড়া তালিকা দেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ নাই কেন এই আপত্তি জানালে তিনি বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে পরে তথ্য দিবেন বলে জানান। পরক্ষণে উপজেলা প্রকৌশলী মেহেদী হাসানের সাথে যোগাযোগ করতে তার মোবাইল নাম্বারে অসংখ্যবার কল দিলেও তিনি মোবাইল কলটি রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে প্রকৌশলী মেহেদী হাসানের সাথে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় মেসার্স প্রখর প্রকৌশল সংস্থা, মেসার্স মুন্সি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স মার্স ইন্জিনিয়ারিং সলিয়েশন নামে এই তিন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম পেয়ে জানতে পারি উপরে উল্লেখিত তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১ কোটি টাকার কাজ বরাদ্দের কথা উল্লেখ্য করেন। অভিযোগ উঠেছে প্রকৌশলী মেহেদী হাসান তার বাবার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মার্স ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশনকে কাজ দিয়ে শতভাগ বাস্তবায়ন দেখিয়ে ২০২৪ সালের জুন মাসে বরাদ্দের টাকা তোলে নেন। যা সরকারী কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারী হয়ে নিজ পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের নামে বিশেষ বরাদ্দের টাকার কার্যাদেশ দেন মেহেদী হাসান যা সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী বিধিমালা লঙ্ঘনের সামিল অপরাধ।

দৈনিক বাংলা খবর এর সম্পাদক ও জাতীয় সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রার বিশেষ প্রতিনিধি এম শাহীন আলম বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে সরজমিন অনুসন্ধানে বরুড়া উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ে যান এ বিষয় জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর তথ্য আইনে আবেদনের মাধ্যমে মেহেদী হাসানের কাছে কোন কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই সকল কাজ সম্পাদন হয়েছে তার কাগজপত্র চাইলে প্রকৌশলী মেহেদী হাসান সুকৌশলী কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম না দিয়ে ৮০ লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে এই মর্মে তথ্য দিয়ে কাগজ দেন। সাংবাদিক এম শাহীন আলম যখন প্রকৌশলী মেহেদীকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখসহ সম্পূর্ণ কাগজপত্র দিতে বলেন তখন প্রকৌশলী সৈয়দ মেহেদী হাসান বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং তথ্যদিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

এবিষয়ে সাংবাদিক শাহীন আলম বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নু এমং মারমা মং এর স্বরণাপন্ন হন এবং তাকে বিষয়টি অবগত করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাংবাদিক এম শাহীন আলমকে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে আশস্ত করেন এবং এ বিষয় তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা নিবেন বলেন জানান। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো প্রায় ২ সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নু এমং মারমা মং এই বিষয়ে বলেন,তার কোন কথায় উপজেলা প্রকৌশলী মেহেদী হাসান শুনছেন না বলে তিনি জানান। কুমিল্লা বরুড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, তাকে বলেছি আপনি সাংবাদিক যে তথ্য গুলা চাচ্ছে সাংবাদিককে সঠিক তথ্য গুলা দিয়ে দিন। কিন্তু সে আমার কোন কথাই শুনছে না। তাই আমি তার এলজিইডি প্রতিষ্ঠানের কুমিল্লা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবগত করেছি এবং আমি নিজেও লিখিত ভাবে তার সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিষয়টি অবগত করবো বলে জানান।
এত বড় জালিয়াতির পর এখনো কিভাবে বহাল তবিয়তে আছেন বরুড়া উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ মেহেদী হাসান। স্থানীয় সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি এই বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে এই দূর্নীতিবাজ প্রকৌশলী সৈয়দ মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

উল্লেখ্য এর আগেও কুমিল্লা বরুড়া উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ মেহেদী হাসানকে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনায় কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ পত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার প্রকৌশলী থাকাকালীন সময়ে মেহেদী তার বাবার নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মার্স ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশন এ ইব্রাহিম ও কাফরুল মাধ্যমে চাঁদপুর জেলা শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের ২০২২-০২৩ ও ২০২৩-০২৪ অর্থবছরে মোট ৫১,৭৩,৩৭১ টাকা (একান্ন লক্ষ তিয়াত্তর হাজার তিনশত একাত্তর টাকা) এর কার্যাদেশ প্রদান করেন এবং সরকারি কর্মচারী বিধিমালা লঙ্ঘন করেন। ২০১৮ এর বিধি ৩(খ) অনুযায়ী তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগ পত্রে আরও জানা যায়, কেন “চাকুরি হতে বরখাস্ত” করা হবে না অথবা অন্য কোনো উপযুক্ত দণ্ড প্রদান করা হবে না, ১০(দশ) কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানতে চেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
বরুড়া উপজেলা প্রকৌশলী সৈয়দ মেহেদী হাসানের দুর্নীতি আর অনিয়মের বিষয়ে জানাতে কুমিল্লা জেলা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলামকে তার সরকারী প্রাতিষ্ঠানিক মোবাইলে নাম্বারে অসংখ্যবার কল দিলেও তিনি মোবাইল কলটি রিসিভ করেননি। পরক্ষণে তাকে এবং তার সিনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার দুইজনকে হোয়াটসঅ্যাপ নক করেও তাদের কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। বরুড়া উপজেলা প্রকৌশলী মেহেদী হাসানের অনিয়মের বিরুদ্ধে সরেজমিন অনুসন্ধান অব্যাহত সহ কুমিল্লা জেলা এলজিইডি অফিসের অধীনে চলমান কাজ সমূহে অনিয়ম অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। আরো বিস্তারিত ধারাবাহিক নিউজ আগামী সংখ্যা প্রকাশ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.