অধিকাংশ কারখানার শ্রমিকের নেই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, করোনায় বেতনের অনিশ্চয়তা মধ্যে!

অন্যান্য

মোঃ শাকিল আহমেদ :
গত ৬ এপ্রিল সোমবার কারখানা খুলেছিল। ওইদিন বিকেলেই মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) থেকে ছুটি ঘোষণা করা হয়। বুধবার মার্চ মাসের বেতন দেওয়ার কথা রয়েছে। আর এদিন বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর জমা দিতে বলেছে। যাদের নেই কারখানায় তাদের অ্যাকাউন্ট খুলে দেবে। আগামী মাসে এপ্রিলের বেতন ঢুকবে বিকাশে।’- কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জ একটি পোশাক কারখানার এক শ্রমিক।আর সাভারের ,একটি কারখানার শ্রমিক মো. কবির বলেন, ‘রোববার কারখানা খোলার কথা থাকলেও বিজিএমইএর আহ্বানের পর ছুটি দেওয়া হয়। পরে গ্রামের বাড়ি চলে আসি। বেতনের ব্যাপারে সেদিন কিছু জানায়নি। হয়তো ১৫ তারিখ কারখানা খুললে বেতন দেবে।’ এই দুই শ্রমিকের ভাষ্যে পোশাক কারখানা শ্রমিকদের বর্তমান চিত্র কিছুটা উঠে আসে।
৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ‌ বলেন, ‘আজ কোনো ফ্যাক্টরি খোলা নেই। প্রায় সব ফ্যাক্টরিই বন্ধ। দুয়েকটা হয়তো ভেতরে ভেতরে খোলা থাকতে পারে। যারা পিপিই ও মাস্ক বানাচ্ছে এমন দুই একটি কারখানা খোলা আছে।’তিনি আরো বলেন, ‘বিজিএমইএর পক্ষ থেকে মার্চ মাসের বেতন ১৫ থেকে ১৬ তারিখের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে। ধাপে ধাপে অনেক ফ্যাক্টরিই বেতন দিয়ে দেবে। ৮ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে অনেক ফ্যাক্টরি বেতন দেবে। আশুলিয়ায় ৯ তারিখ বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু অনেক শ্রমিকেরই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। আবার এপ্রিলের বেতন দিতে শ্রমিকদের মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট লাগবে। সবমিলিয়ে শ্রমিকদের বেতন প্রাপ্তিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’শ্রমিকদের জন্য অন্তত তিন মাসের রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়ে এই শ্রমিক নেতা বলেন, ‘শ্রমিকদের এখন খাদ্য দরকার। তাদের সময় মতো যেন বেতন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কোনো মালিক গড়িমসি করলে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। হয়তো কারখানা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকবে। শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে তাদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা উচিত। যেখানে সরকার ও মালিক পক্ষ উভয়ের কন্ট্রিবিউশন থাকবে। কারণ শ্রমিকরা যদি দুর্বল হয়ে পড়ে ভবিষ্যতে তাদের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাবে।
স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন এর সহ সভাপতি , আল কামরান বলেন, ‘শ্রমিকরা এখনও বেতন পায়নি। বিজিএমইএ থেকে বলা হয়েছে, যাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে তাদের কাল-পরশুর মধ্যে বেতন দেওয়া হবে। যাদের অ্যাকাউন্ট নেই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি। সারাদেশে এখনও বেশ কিছু কারখানা খোলা আছে। সংখ্যাটি ১০০ এর মতো হতে পারে।’‘সবচেয়ে বড় সমস্যা শ্রমিকরা এখনও বেতন পায়নি। আরেকটি মারাত্মক বিপর্যয়ের ঘটনা শ্রমিকদের ৪ এপ্রিল আসতে বাধ্য করা। তারা ১০০ টাকার ভাড়ার জায়গায় ৫০০ টাকা খরচ করেও এসেছে।
বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের ,সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান আলী,বলেন কিছু কিছু কারখানায় শ্রমিকরা আজও বেতনের জন্যে ভিড় করছে। নামমাত্র কিছু ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। কিছু ফ্যাক্টরি হয়তো অল্প সময়ে করতেও পারবে। অর্থাৎ মার্চ ও চলতি মাসের বেতন পাওয়া নিয়েই শ্রমিকদের এখন বড় শঙ্কায়। এছাড়া করোনার সময়ে কিছু কিছু কারখানায় চাকরিচুত্যির ঘটনাও ঘটেছে, যা মোটেও কাম্য নয়। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করি।’
জানতে চাইলে বিকেএমইএ’র ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘কিছু ফ্যাক্টরি খোলা আছে। তারা বেতন দিচ্ছে। আবার কারও জরুরি শিপমেন্ট চলছে। তবে বেশিরভাগ কারখানাই বন্ধ।’এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যে যেভাবে পারছে বেতন দেওয়ার চেষ্টা করছে। বেতন নিতে হলে তো শ্রমিকদের আসতে হবে। অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। এখন আবার আগামী মাসের বেতন দেওয়ার জন্যে মোবাইল ব্যাংকিং বাধ্যতামূলক করেছে। এই সময়ে এটা একেবারেই অসম্ভব। অনেক শ্রমিকের এনআইডি নেই। জন্ম নিবন্ধনও নেই অনেকের। এতগুলো অ্যাকাউন্ট এই অল্প সময়ে করা অসম্ভব। এই শর্ত জুড়ে দেওয়ায় অনেক শ্রমিকই হয়তো তাদের বেতন থেকে বঞ্চিত হবে। আবার পাড়া মহল্লার দোকানও বন্ধ রয়েছে। মহামারি চলতে থাকলে তারা তো টাকাও উঠাতে পারবে না। সরকারকে আমরা এই শর্ত জুড়ে না দেওয়ার অনুরোধ করেছিলাম আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পোশাক মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। সোমবার (৬ এপ্রিল) দুই সংগঠনের সভাপতি রুবানা হক ও একেএম সেলিম ওসমানের এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানান। সেইসঙ্গে মার্চ মাসের বেতন ১৬ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
এদিকে বিজিএমইএর একটি সূত্রে জানা গেছে, ১০ এপ্রিলের মধ্যেই বিজিএমইএ’র সদস্যভুক্ত বেশিরভাগ কারখানায় বেতন হয়ে যাবে। ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত সময় নেওয়া হলেও ১২ এপ্রিলের মধ্যেই মার্চ মাসের বেতন দেওয়ার লক্ষ্য বিজিএমইএর। বর্তমানে বড় বড় কারখানার শ্রমিকদের ৮০ ভাগের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বাকি শ্রমিকদের জন্য দ্রুত মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট করতে মঙ্গলবার বিকাশ ও রকেটের সঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হকের বৈঠক হয়েছে। যেসব শ্রমিক গ্রামে চলে গেছে তাদের মার্চ মাসের বেতন মোবাইলে ব্যাংকিংয়েও পরিশোধ করতে কাজ করছে সংগঠনটি। এছাড়াও প্রণোদনার টাকায় শ্রমিকদের বেতন দিতে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন, সেই কাজটিও এগিয়ে নিচ্ছে বিজিএমইএ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.