বগুড়ায় ধানক্ষেতে অটোরিক্সা চালকের লাশ

অপরাধ

মতিন খন্দকার টিটু :
বগুড়ায় ধানক্ষেত অটোরিক্সা চালকের লাশ। ফজলে রাব্বী(২৫), পিতা আব্দুল মান্নান সরকার, গ্রাম- বোয়ালগাছা থানা- ধুনট জেলা- বগুড়া সিরাজগঞ্জ ইসলামিয়া ডিগ্রী কলেজের ইতিহাস বিষয়ে অনার্স শেষ বর্ষে পড়ুয়া ছাত্র। প্রতিবেশী মিনহাজ (২০) পিতা- মোঃ মোজদার হোসেন গ্রাম- বিশ্ব হরিগাছা থানা ধনুট, জেলা- বগুড়ার সাথে তার খুব ভাল সম্পর্ক। মিনহাজ রাব্বিকে খুব বিশ্বাস করত। তারা একত্রে অনেক মেয়ের কাছে গিয়েছে। একবার কাজিপুর থানার সোনামুখীতে এক মেয়ের কাছে মিনহাজ এবং রাব্বি গিয়েছিল। মিনহাজ ঐ মেয়ের সাথে রাব্বির অন্তরঙ্গ অবস্থার একটি ছবি উঠায়। এ ছবি নিয়ে মিনহাজ রাব্বিকে ব্ল্যাকমেল করছিল। এছাড়াও রাব্বির টাকার দরকার ছিল। সে বিবাহিত কিন্তু বেকার। টাকার জন্য সে মিনহাজকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে গত ২৭৷০৯৷২০২০ তারিখে শেরপুর শেরুয়া বটতলার সুমনের অটোরিকশা মেরামতের দোকানে এসে একটি পুরাতন অটোরিকশা বিক্রয় করলে তারা কিনবে কিনা তা জানতে চায়। সুমন কিনতে চাইলে রাব্বি চলে যায় এবং মিনহাজকে খুন করে তার অটোরিকসা বিক্রির পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাব্বি ২৯৷০৯৷২০২০ তারিখ দুপুরে বিশ্বহরিগাছা বাজার থেকে ঘুমের ট্যাবলেট কিনে। এরপর বিকেল ৩.৪৫ টায় তার মোবাইল থেকে সিম খুলে মোবাইল বন্ধ করে যাতে মোবাইল ট্র্যাকিং করে তাকে ধরা না যায়। সে বিকেল ৪.৩০ টায় ধুনটে এক ঔষধের দোকানদারের মোবাইল থেকে মিনহাজকে ডেকে নেয়। এরপর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রাত ৮টায় শেরপুরের জোরগাছা এলাকায় পৌছে। সেখানে দোকান থেকে স্পীড (কোল্ড ড্রিংকস) কিনে। এরপর একজনের বাড়িতে অটোরিকশা রেখে ধান ক্ষেতের ভিতর দিয়ে মাঠের অন্য প্রান্তে যাওয়ার কথা বলে। এক পর্যায়ে সে মিনহাজকে ঘুমের ট্যাবলেট মিশানো স্পীড খাওয়ায়। এরপর ক্ষেতের আইলে ১০ মিনিট বসে থাকে যাতে মিনহাজ ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। যখন মিনহাজ ঘুমে টলানো শুরু করে তখন রাব্বি আচমকা তাকে চাকু দিয়ে আঘাত করে। মিনহাজ চিৎকার করলে রাব্বি ডান হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে। মিনহাজ রাব্বির আঙুলে কামড় দেয়। রাব্বি তখন চাকু দিয়ে মিনহাজের মুখে এলোপাথাড়ি আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে রাব্বি চাকু এবং মিনহাজের মোবাইল ঘটনাস্থলের পাশে ফেলে দিয়ে অটোরিকসার কাছে আসে। এরপর অটোরিকশা নিয়ে শেরপুর বটতলা সুমনের দোকানে আসে। রাতে সুমন অটোরিকশা কিনতে অস্বীকার করায় সে সুমনের দোকানে কর্মরত মিরাজকে সাথে নিয়ে অটোরিকশা বিক্রির চেষ্টা করে। বিক্রি না হওয়ায় অটোরিকশাটি ধুনট থানার আওলাকান্দির একটি নির্জনস্থানে ফেলে রাব্বি শেরপুর হাসপাতালে ভর্তি হয়। গতকাল সকালে রাব্বি ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে সে এবং অটোরিকশা চালক মিনহাজ ছিনতাই এর কবলে পড়েছিল এবং মিনহাজকে তার পূর্ব পরিচিত শত্রুরা ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করে। তার এ রকম অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেরপুর সার্কেল মোঃ গাজিউর রহমানের নেতৃত্বে শেরপুর এবং ধুনট থানা পুলিশের কয়েকটি টিম কাজ শুরু করে। পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম (বার) স্যারের নির্দেশে রাব্বিকে নিয়ে শেরপুর সার্কেল অফিসার ঘটনাস্থলে যায়। রাব্বির কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হয়। পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মুখে রাব্বি মিনহাজকে হত্যা করে লাশ জোড়গাছার ধানের ক্ষেতে ফেলে রাখার কথা স্বীকার করে। তাকে নিয়ে পুলিশ সুপার বগুড়া জনাব মোঃ আলী আশরাফ বিপিএম (বার) মহোদয়ের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) জনাব মোঃ আব্দুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেরপুর সার্কেল মোঃ গাজিউর রহমান শেরপুর থানার ফোর্সের সহায়তায় উপস্থিত হাজার হাজার লোক এবং সাংবাদিকগণের সামনে আসামী রাব্বির দেখানোমতে আজ বেলা ১২.১৫ টায় শেরপুরের জোড়গাছা ধান ক্ষেত থেকে মিনহাজের মৃত দেহ উদ্ধার করে। লাশ পোস্ট মর্টেম এর জন্য শহীদ জিয়া হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.