বগুড়ায় অসহায় অন্ধ মেয়েটির সেবায় এগিয়ে এসেছেন এস আই আজিজ মন্ডল

অন্যান্য

বগুড়া জেলা প্রতিনিধি :
বগুড়ায় মানব সেবাই পরম ধর্ম। পৃথিবীর প্রতিটি ধর্মেই মানব সেবার কথা বলা আছে। অনেকের মতে মানব সেবার মাঝেই সৃষ্টিকর্তার আনুকূল পাওয়া যায়। চাইলে অনেক ভাবেই মানুষের সেবা করা যায়, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুলিশ।
সেই মানবতার ফেরিওয়ালার নাম আজিজ মন্ডল, তার কাছে আইন,শৃঙ্খলা মানবতা আর মমতাই জীবনের এক নিদর্শন।
ব্যক্তি জীবনে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের এক জন সদস্য। ১০-১০-১৯৯৭ ইং সালে ট্রেইনিং শেষ করে পুলিশে যোগদান করেন।
নিজেকে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করে অন্যের সুখ-দুঃখের অংশী দারিত্ব গড়ে তুলেন তিনি, বর্তমানে কর্তরত রয়েছে বগুড়া জেলার শহীদ জীয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর পুলিশ ফাঁড়ির সাব-ইন্সপেক্টর এর দায়িত্বে ।
কথা বলে যানা যায় গত ১৩-১০-২০ ইং তারিখে বেলা ১:০০ ঘটিকায় একটি মেয়ের ফোন কল আসে এস আই আজিজ মন্ডল এর ফোনে।
যার নাম মোছাঃ মুনিয়া পিতাঃ মোঃ মোকছেদ খন্দকার গ্রামঃ দেওগ্রাম থানাঃ কাহালু জেলাঃ বগুড়া
সে বলে আমি একজন অন্ধ মানুষ ডাক্তার আমাকে একটা টেস্ট দিয়েছে সেটা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় তলায় হয়, আপনি আমার কাছে আসেন এবং সেখানে আমাকে নিয়ে যাবেন।
লোকেশন জটিলতার কারনে একটু সময় লাগলেও অবশেষে মুনিয়ার সঙ্গে দেখা হয়। তার মুখে পুরো ঘটনা শোনার পর যানা যায় সে হাত না ধরলে হাটতে পারে না। তাই হাত ধরে অটো রিকশা করে মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় তলায় যাবতীয় কাজ শেষে যানা যায়,
মুনিয়ার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন খেলা ধুলা করার সময় সহপাঠীর ধান কাটা কাচির আঘাতে তার ডান চোখের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে এক চোখের আলোয় জীবন চলতে থাকে মুনিয়ার। ডান চোখ নষ্ট হওয়ার কারণে ২০১৫ সালে তার বাম চোখ নষ্ট হয়ে যায়। এবার মুনিয়ার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার, কিছু দিন পর ২০১৮ সালে মুনিয়ার মা পরলোগমন করেন। মুনিয়া আরো অসহায় হয়ে পরেন কিছু দিন পর তার পিতা মুনিয়াকে আরো অসহায় অবস্থায় রেখে দ্বিতীয় বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
মা হারা অন্ধ মুনিয়া হয়ে যায় দিশেহারা, তার জীবন থেকে হারিয়ে যায় মায়ের ভালোবাসা, বাবার আশীর্বাদ শুরু হলো অবহেলা আর অযত্ন। এদিকে মুনিয়া ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। হঠাৎ একদিন মুনিয়া তার বুকের ডান পাশে হালকা ব্যথা এবং মাংস গোটা অনুভব করে। অনেক চেষ্টা করে এলাকার লোক এর সহায়তায় সে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়, ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অন্ধ মুনিয়ার ব্রেস্ট টিউমার হয়েছে বলে জানায়। অন্ধ মুনিয়া মনের দিক দিয়ে ভেঙ্গে পড়ে। ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশন মোতাবেক মুনিয়াকে (FNAC) টেস্ট করানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। যে কোনো কারণেই গত তিনমাস এই টেস্ট করাতে ব্যর্থ হয়। তার গ্রামের এক লোক তাকে মেডিকেলে আসার কথা বলে এবং সেই লোক হাজির থেকে উক্ত টেস্ট করে দেয়ার আশা দেয়। মুনিয়া তার কথা বিশ্বাস করে দুর্গাপুর থেকে বাসযোগে বগুড়া মেডিকেলে চলে আসে। মেডিকেল এর আউটডোরের পাশে লোকটির অপেক্ষায় সকাল ০৯ টা থেকে দুপুর ১ঃ০০ টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে। অবশেষে সেই লোকের দেখা না মিললে মুনিয়ার মনে পড়ে যায় ৯৯৯ এর কথা। মুনিয়া বুদ্ধি করে তার নিজের মোবাইল থেকে ৯৯৯ এ ফোন করে বগুড়া সদর থানার ডিউটি অফিসারের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করেন। ডিউটি অফিসারের মোবাইল নাম্বারে মুনিয়ার ফোন পেয়ে , সদর থানার ডিউটি অফিসার এস আই আজিজ মন্ডল এর নাম্বার দিয়ে দেয়।
অবশেষে মুনিয়া সেই মানবতার ফেরিওয়ালা এস আই আজিজ মন্ডলের সহ যোগীতায় সেই টেস্ট গুলো সম্পূর্ণ করতে সফল হয় এবং ডাক্তার বলেছেন এখোন সময় আছে নিয়মিতো ঔষধ খেলে বেষ্ট টিউমার থেকে ভালো হওয়া সম্ভব বলে যানান।

মেডিকেল ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আজিজ মন্ডল বলেন,
প্রতিনিয়ত যে ভালো কাজগুলো আমরা করছি তার পাশাপাশি আজকে একটি অতি উত্তম কাজ করলাম। প্রকাশ থাকে যে মুনিয়ার দুটি চোখ নষ্ট হবার পর ভুল চিকিৎসা এবং মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ সেবন করার কারণে মুনিয়ার পুরো শরীরে ঘা হয়ে যায়, ‌ ঘা ভালো হবার পর কাল্পনিকভাবে তার পুরো শরীর সাদা হয়ে যায়।মুনিয়া কে প্রথমে দেখলে কুষ্ঠ রোগী মনে হলেও , কিন্তু আসলে মুনিয়া কুষ্ঠ রোগী নয়। তিনি আরো বলেন সারা জীবন যেন অসহায় মানুষের উপকারে নিবেদিত প্রাণ হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.