সংসদে বিরোধী এমপিদের তোপের মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী

রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক :
কয়েকটি জেলার সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কটে রোগীর মৃত্যু, স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম, সংসদে দেয়া বক্তব্যকে ঘিরে বিরোধী দলের এমপিদের তোপের মুখে পড়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালেক। এসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর লজ্জা-শরম নেই বলে মন্তব্য করে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা। শনিবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় যখন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বিরোধীদলীয় সদস্যরা তুলাধুনা করেন তখন তিনি অধিবেশন কক্ষে ছিলেন না। তবে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় সংসদে ছিলেন।
পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে অক্সিজেন সংকট নিয়ে প্রথমে আলোচনা শুরু করেন বিএনপির সাংসদ জিএম সিরাজ। তিনি বলেন, অক্সিজেনের অভাবে বগুড়ায় ২ দিনে ২৪ জন মারা গেছেন। কোভিডের জন্য নির্ধারিত মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ২৫০ বেডের। এর মধ্যে আইসিইউ বেড আছে আটটি। কিন্তু হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা আছে মাত্র দুটি।
ফলে বাকি আইসিইউ বেড কোনো কাজেই লাগছে না। তিনি জানান, বগুড়ায় ৩টি হাসপাতালের ৪৫০টি বেড রোগীতে ঠাসা। নতুন রোগী ভর্তি হতে পারছেন না। প্রতিটি হাসপাতালে ২০টি হাই ফ্লো অক্সিজেন সরবরাহের দাবি জানান তিনি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে বিরোধী দলের উপনেতা জাতীয় পার্টির জি এম কাদের বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বছর আগে যে অবস্থায় ছিল, এখনো সেখানেই আছে। কোনো উন্নতি হয়নি। তিনি তাঁর নিজ এলাকার হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য যেসব চিঠি দিয়েছেন, সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন, সেগুলো পুনরুল্লেখ করেন। তবে এগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান। জি এম কাদের বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তিনি ছয়-সাতবার ফোন দিলেও ধরেননি। মন্ত্রীর সহকারীদের ফোন করার পর মন্ত্রীকে জানানোর কথা বলি। কিন্তু মন্ত্রী ফোন করেন না। ভারতের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আমাদের চেয়ে ভালো। এরপরও তারা নাজেহাল হয়েছে। আমাদের দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সেভাবে ছড়িয়ে পড়লে আশঙ্কা করার অনেক কারণ আছে বলে তিনি মনে করেন।
বিএনপির আরেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, গত বুধবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন, এর মাধ্যমে গোটা হাউসকে অপমান করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেছিলেন যে সাংসদেরা জেলা হাসপাতালের চেয়ারম্যান। তাঁরা দায়িত্ব পালন করেন না। মন্ত্রীর এই বক্তব্য ঠিক নয়। এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা দরকার।
হারুনুর রশীদ আরও বলেন, সংসদে ৯০ ভাগ সাংসদ সরকারি দলের। তাহলে কি সরকারি দলের সাংসদেরা দায়িত্ব পালন করছেন না? তিনি বলেন, আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। এটা দেখতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্যসহায়তা দিতে হবে।
পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেন, উনি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) যে কী মানুষ? লজ্জা-শরম নেই। তিনি একদিনও কোনো হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে দেখেননি কী হচ্ছে? তিনি শুধু জুম মিটিং করেন। মুজিবুল হক আরও বলেন, মন্ত্রী আমেরিকার সঙ্গে তুলনা করেছেন। আমাদের দেশে আমেরিকার চেয়ে কম লোক মারা যায়। এটা কি তাঁর কৃতিত্ব? এক বছর মন্ত্রী কী করলেন? ৩৭টি জেলায় অক্সিজেন নেই। মানুষ মারা যাচ্ছে।
জাপার কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, সাতক্ষীরায় অক্সিজেনের অভাবে এক ঘণ্টায় সাতজন ছটফট করে মারা গেলেন। নার্স, ওয়াড র্বয় ও চিকিৎসকেরা কী করলেন? তিনি বলেন, আইসিইউ, এসডিইউতে রোগী গেলে কোনো চিকিৎসা হয় না। সেখানে কী হয়, কেউ জানে না। মানুষের মৃত্যুর কি কোনো দাম নেই? একটা তদন্ত কমিটি করুন। এর প্রতিবেদন প্রকাশ করুন।
জাপার রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, বুধবার মাস্কের দুর্নীতির কথা বলার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মাস্ক কেনা হয়নি বলে দাবি করেন। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের পরিচালক নিজে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বলেছেন, একটি সার্জিক্যাল মাস্ক কেনা হয়েছে ৩৫৬ টাকায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই সত্য জিনিসটা এড়িয়ে গেলেন কেন? তিনি সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরার বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.