আজ ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক দিবস

অন্যান্য

ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ :
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে মানুষের মধ্যে কঠিন শারীরিক রোগ আপনার জীবনের সব দিকে প্রভাব ফেলতে পারে।
মানুষের শারীরিক সুস্থতা তখনই আসবে যখন সে মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ থাকতে পারবে। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যটা থেকে যায় অবহেলাতেই। ১৯৪৮ সালে দেওয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, স্বাস্থ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ মানসিক স্বাস্থ্য। শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবে নীরোগ থেকে জীবন উপভোগ করা ও সাধ্য অনুযায়ী ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে কিছু করতে পারার সক্ষমতাই মানসিক স্বাস্থ্য। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস (১০ অক্টোবর) হল পৃথিবীর সকলের মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা, সচেতনতার দিন। এটি ১৯৯২ সালে প্রথমবার পালন করা হয়েছিল। ‘মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে।আপনার সম্পর্ক,কাজকর্ম,ধর্মবিশ্বাস এবং আপনার সামাজিক মেলামেশা সবই প্রভাবিত হতে পারে। কঠিন অসুখ আপনাকে বিষণ্ন, চিন্তিত, ভীত বা ক্রুদ্ধ করে তুলতে পারে।আর ‘সাইকোলজিক্যাল ডিজরাপশন’ বেড়েছে। বিশেষ করে মানুষের মধ্যে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ভয়, কাছের মানুষের সংক্রমণের আশঙ্কা, মৃত্যুশঙ্কা, জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত রোগী, ঘরবন্দী মানুষ এবং জরুরি প্রয়োজনে যেসব পেশাজীবী ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন তারা সবচেয়ে বেশি মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। এ ছাড়া করোনার কারণে আতঙ্কগ্রস্ত এবং হতাশার শিকার হয়ে অনেকেই ইতিমধ্যে আত্মহত্যা করেছেন।আর
করোনার কারণে মানুষ বাধ্য হয়ে একে অন্যের কাছ থেকে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখছেন৷ এর প্রভাব পড়ছে মানসিক স্বাস্থ্যে৷ বেশি চাপে পড়ছেন শিশু, বয়স্ক আর নারীরা৷গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে অজানা নতুন করোনা ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে৷ কোন প্রতিষেধক ও ওষুধ না থাকায় এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দেয়া হয় সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার উপর,সমস্যা হল মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে শারীরিক সংস্পর্শের প্রয়োজন রয়েছে৷ কেননা স্পর্শ শরীরে বিভিন্ন হরমনের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে, যা প্রয়োজনীয় অনুভূতির জন্ম দেয় ও মানসিক চাপমুক্তি ঘটায়৷ ইতিবাচক স্পর্শে মানুষের শরীরে ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন নামের হরমন নিঃসরণ বাড়ায় এবং করটিজল নিঃসরণ কমায়, যার ফলে ইতিবাচক অনুভূতি সৃষ্টি হয়৷ অনুপ্রেরণা, সন্তুষ্টি, নিরাপত্তা, মানসিক চাপমুক্তি ইত্যাদি৷ দীর্ঘদিন সয়স্পর্শ এড়িয়ে চলা মানসিক দূরত্ব তৈরি করতে পারে৷ শিশুর সম্মিলিত বিকাশ বাধাগ্রস্থ হতে পারে৷ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে পারে এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে৷’’এর ফলে শিশু এবং বয়স্করা সবচেয়ে বিপদাপন্ন এবংনিরাপত্তাহীনতায় থাকে বয়স্করা এই পরিস্থিতিতে শিশুর মতো অবুঝ আচরণ করতে পারেন৷ শিশুরা খিটখিটে বা অস্থির হয়ে উঠতে পারে৷ তাদের প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার ৷এই সময়ের নারীদের স্বাস্থ্যের দিকেও বিশেষ নজর রাখতে হবে ‘‘নারীর মাসিক পূর্ব বিষণ্ণতা, প্রসব উত্তর বিষণ্ণতা পঞ্চাশোর্ধ নারীদের মাসিক পরবর্তী উপসর্গ বা বিষণ্ণতা, হরমোনে ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিশেষ মনযোগের দাবি রাখে৷ তাদের প্রয়োজনগুলোকে অগ্রাধিকার দিন৷ সংবেদনশীল আচরণ করুন এবং সহযোগিতা করুন৷ নারীর প্রতি সব সহিংসতা পরিহার করুন,’’ মানসিক চাপ দূর করতে বাগান করা এবং পোষা পশু-পাখির আদর-যত্ন, নিয়মিত ঘুম, খাবার গ্রহণ, শরীর চর্চা, ভার্চুয়ালি সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখা, সুস্থ বিনোদন , বাগান করা এমনকি রান্নাও মানসিক চাপ কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে৷আজ বিশ্ব মানসিক দিবসের বিশেষ কলাম লিখেছেন, বাংলাদেশর বিশিষ্ট হোমিও গবেষক ও দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য সম্পাদক ও প্রকাশক, ডা.এম এম মাজেদ তার কলামে লিখেন…. লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে ২০২০ সালের করোনা মহামারী নিয়ে এ মানসিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে ২০৩০ সালের মধ্যে এটি মারাত্মক ব্যাধিতে রুপান্তরিত হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যা করে প্রায় আট লাখ মানুষ। আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। অধিকাংশ ব্যক্তিই আত্মহত্যার সময় কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকেন। সাধারণত সেটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না বা মানসিক রোগ নিশ্চিত হলেও যথাযথ চিকিৎসা করা হয় না বলেই আত্মহত্যা বেড়ে যাচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে আত্মহত্যার এ হার কমিয়ে আনা সম্ভবমানসিক রোগ নিয়ে অজ্ঞতা, অসচেতনতা আর কুসংস্কারের ফলে মানসিক রোগ বলে কোনো কিছুর অস্তিত্বই স্বীকার করতে চান না অনেকে। গায়েবি আওয়াজ শোনা, ভ্রান্ত কিন্তু দৃঢ় বিশ্বাস, অহেতুক সন্দেহ, আচার-আচরণ বা কথাবার্তার অস্বাভাবিক পরিবর্তন, কনভার্সন ডিসঅর্ডার (যা হিস্টিরিয়া বা মূর্ছারোগ নামেই বেশি পরিচিত)-এর উপসর্গগুলোকে জিন-ভূতের আছর,জাদু-টোনা-তাবিজ-আলগা বাতাসের প্রভাব বলেই বিশ্বাস করেন অনেকে। আত্মীয়স্বজন এসব সমস্যায় আক্রান্ত হলে তারা চিকিৎসাও করান তেল-পড়া, পানি-পড়া, তাবিজ, ঝাড়-ফুঁক, ‘শিকল থেরাপি’ ইত্যাদির মাধ্যমে। অনেকের কাছে মানসিক রোগের উপসর্গগুলো বয়সের দোষ, বিয়ের জন্য টালবাহানা, ঢং বা ভং ধরা। চিকিৎসার ব্যাপারে এদের বিশ্বাস- ‘মাইরের উপর ওষুধ নাই।’ কখনো কখনো শারীরিক উপসর্গ যে মানসিক রোগের কারণে হতে পারে- তাও অনেকে মানতে চান না। ফলে, মানসিক সমস্যার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে শারীরিক উপসর্গ নিয়েই ব্যতিব্যস্ত থাকেন তারা।এতসব কুসংস্কার ও অজ্ঞতার বেড়াজাল ডিঙিয়ে যারা মানসিক রোগ চিকিৎসার আওতায় আসেন, তাদেরও বড় একটা অংশ ওষুধ নিয়ে নানান বিভ্রান্তিতে সঠিক চিকিৎসা করান না। পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে মানসিক রোগ চিকিৎসার আধুনিক ওষুধ আবিষ্কৃত হয়। এর পর সময়ের গতির সঙ্গে মানসিক রোগ চিকিৎসারও অগ্রগতি সাধিত হয়, আবিষ্কৃত হয় নতুন নতুন ওষুধ, সেসব ওষুধের সফল প্রয়োগ মানসিক রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কিন্তু আমাদের দেশে মানসিক রোগের ওষুধ সম্পর্কে

Leave a Reply

Your email address will not be published.