বিশেষ প্রতিবেদক :
ইভিএমের মাধ্যমে ভোট হলে জনরায়ের প্রতিফলন হবে না বলে আবারো সাফ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলার পাশাপাশি সোমবারের চট্টগ্রাম উপনির্বাচনে ভোটদানে ক্ষমতাসীনদের বাধা দেয়ার অভিযোগও করেন।
‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হেল্প সেলের উদ্যোগে গুম, হত্যা, পঙ্গু হওয়া বিএনপি নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছি। আমরা বলেছি যে, ইভিএম দিয়ে কখনোই মানুষের যে রায়, তার প্রতিফলন হবে না। আমরা এখনো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এর বিরোধিতা করছি।”
মির্জা ফকরুল বলেন, গতকাল চট্টগ্রামে উপ-নির্বাচন হয়েছে। যেতেই দেয়নি ভোট কেন্দ্রে ভোটারদেরকে। তার আগে বোমা মেরে লাঠিসোটা দিয়ে ভোটারদের তাঁড়িয়ে দিয়েছে। তারপরে জিজ্ঞাসা করেন বলবে যে, আপনারা পারেননি। পারবো কোত্থেকে? যে গুন্ডা, যে লাঠি মারে, সন্ত্রাসী করে তার সঙ্গে ভদ্র লোকেরা, সাধারণ মানুষেরা পারবে কোত্থেকে। দ্যাটস দ্যা রিয়েলিটি। যারা ভোটার, তারাতো মারামারি করে না। তারা তাদের অধিকারটা প্রয়োগ করতে যায়, সেটা প্রয়োগ করতে দেয়া হয় না।’
অনুষ্ঠানে গুম হওয়া ১০ নেতা-কর্মীর পরিবারের সদস্যদের হাতে শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়।
ওইসব পরিবারের সদস্যদের ছোট ছোট সন্তানদের দিকে তাঁকিয়ে তিনি আবেগ প্রবণ কন্ঠে তিনি বলেন, ‘আজকে শিশুরা এখানে আছে। ওরা প্রতিমুহূর্তে ভাবে যে, তার বাবা ফিরে আসবে, আসে না। মা আছেন, ভাবেন যে, এই বোধহয় ছেলে দরজায় নক করলো, আসে না। স্ত্রী অপেক্ষা করে থাকে, কখন তার প্রিয় মানুষটা পাশে আসবে।”
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তারা আজকে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এমন একটা সমাজ তৈরি করছে, এমন একটা রাষ্ট্র তৈরি করছে, যে সমাজ এবং রাষ্ট্র এদেশের মানুষের ভবিষ্যৎ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা সেজন্য বলি যে, বাংলাদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছে। তারপরও বলি, হতাশ হবেন না, ছেড়ে দেবেন না। নেভার গিভ আপ। যত কষ্ট আসুক, যত যন্ত্রণা আসুক, যত অত্যাচার-লাঞ্ছনা আসুক, এদেশের মানুষ বার বার উঠে দাঁড়িয়েছে, তরুনরা উঠে দাঁড়িয়েছে, দাঁড়াবে, দাঁড়াচ্ছে। সব জায়গায় প্রতিরোধ হচ্ছে, প্রতিরোধ হবে।”
তিনি বলেন, ‘আজকে যে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হচ্ছে, এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাদের ব্যাক গ্রাউন্ড কিন্তু আমরা জানি। কে গাড়ির অনুমোদন নেয়ার জন্য ফাইল বদল নিয়ে মন্ত্রীর কাছে গেছেন, কারা নিজের স্কুল পারমিশন নেয়ার জন্য সরকারি জমি নিয়েছেন-এসব খবর আমাদের কাছে আছে।’
হত্যার মহোৎসব চলছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিন/চার বছরের শিশুকে পর্যন্ত হত্যা করা হচ্ছে। এই যে হত্যা, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ যেন একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। মানুষ এখন আর কথা বলে না, কথা বলার সুযোগ নেই। এটাই চেয়েছিলো ওরা (সরকার)। ভয়ভীতি ছড়িয়ে দিয়ে পুরো ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা, সেটাই করেছে তারা।’
সংগঠনটির সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, সাবেক ছাত্র নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শফিউল বারী বাবু, মামুন হাসান, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন, হেল্প সেলের নাসির উদ্দিন শাওন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।