এবার শীতেও ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ,তুলনা মূলক দামও কমেছে

অর্থনীতি

ডেস্ক রিপোর্ট :

দক্ষিণাঞ্চলের উপকূল এলাকা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর ও মেঘনাসহ কয়েকটি নদীতে এক সপ্তাহ ধরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। শীত মৌসুমে হঠাৎ জালে এত ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেরাও অবাক। এতে এ অঞ্চলের বৃহৎ তিনটি ইলিশ মোকামে বিকিকিনির ধুম পড়েছে।


মোকামগুলোতে প্রচুর ইলিশের সরবরাহ থাকায় দামও কমেছে। ক্রেতারাও খুশি। ইলিশ কিনছেন যে যার সাধ্যমতো। তবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। ইলিশ কেনার দিক থেকেও সাধারণ ক্রেতাদের চেয়ে তারাই ছিলেন এগিয়ে। ক্রয় করা ইলিশ ককশিটে বরফ দিয়ে প্যাকেটজাত করছেন শ্রমিকরা। প্রতিটি আড়ত ঘরের সামনে ককশিট প্যাকেটের স্তূপ করে রাখা হয়েছে। আড়তদার, মৎস্য শ্রমিক ও ক্রেতাদের ভিড়ে মোকামগুলো গিজ-গিজ করছে।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৮-১০ দিন থেকে উপকূল এলাকা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। বেশিরভাগ ইলিশের ওজন প্রায় এক কেজি। এ শীত মৌসুমে মেঘনায় এত ইলিশ ধরা পড়ার নজির নেই।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা মাছ ধরা বন্ধ থাকায় সাগর ও নদীতে মাছের উৎপাদন বেড়েছে। ফলে শীত মৌসুমেও জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে।

বরিশালে ইলিশের সবচেয়ে বড় মোকাম নগরীর পোর্ট রোড। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে পোর্ট রোডের মোকামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর ইলিশ সেখানে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা। কীর্তনখোলা নদী থেকে খাল দিয়ে একের পর এক ইলিশ বোঝাই নৌকা, ট্রলার, স্পিড বোর্ড এসে ভিড়ছে ঘাটে। সঙ্গে সঙ্গে এসব নৌকা ঘিরে ধরছেন পোর্ট রোড ইলিশ মোকামের আড়তদাররা। সেই ইলিশ কিনে স্তূপ করে রেখেছেন আড়তের সামনেই। এ কারণে আড়তগুলোর সামনে ভিড় লেগেই ছিল। সেখানে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা পাইকারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দরদাম করছেন খুচরা ক্রেতারাও।

মৎস্য বিভাগের বরিশাল জেলা কার্যালয়ের ইলিশ বিষয়ক কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র দাস জানান, বরিশাল পোর্ট রোড মোকামে আমদানি হওয়া বেশিরভাগ ইলিশ মেঘনা নদীর। বরিশাল ও ভোলা জেলা সংলগ্ন মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। এছাড়া উপকূল এলাকা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরেও কম-বেশি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় ইলিশের দাম পাইকারি ও খুচরা বাজারে কমেছে।

ভোলার দৌলতখান উপজেলার জেলে মো. জসিম ও মনির মিয়া জানান, গত কয়েক বছর শীতের এ সময়ে নদীতে তেমন একটা ইলিশ পাওয়া যেত না। তবে গত ৮-১০ দিন ধরে জালে প্রচুর ইলিশ উঠছে। সুতার বড় ফাঁকার জাল ব্যবহার করেই ইলিশ শিকার করা যাচ্ছে। ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষার পর জাল তুললেই ৫-১০ হাজার টাকার মাছ পাচ্ছেন তারা। তবে এক শ্রেণির অসাধু কিছু জেলে অবৈধ কারেন্ট জাল ও বেহুন্দি জাল ব্যবহার করে ইলিশ শিকার করছেন। তাদের জালে আরও বেশি টাকার মাছ উঠছে। তাদের কারণে জাটকা ও মাছের পোনাও রক্ষা পাচ্ছে না জানান এ দুই জেলে।

বরিশাল পোর্ট রোডের আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত কুমার দাস মনু জানান, মোকামে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। গত ৫-৭ বছরে শীতের এ সময় প্রতিদিন গড়ে ৬০ মণের মতো ইলিশ আমদানি হতো। সেখানে গত এক সপ্তাহে ইলিশ আমদানি প্রত্যাশার চেয়ে বেড়েছে। মঙ্গলবার ৩৫০ মণ আমদানি হয়েছে। বুধবার ২৫০ মণের বেশি ইলিশ আমদানি হয়েছে। বৃহস্পতিবার আমদানি হয়েছে ২৮০ মণ। শুক্রবার প্রায় ৩০০ মণ।

তিনি জানান, বর্ষার মতো শীতে ইলিশের বেশি চাহিদা থাকে না। তাই চাহিদার তুলনায় ইলিশ আমদানি বেশি হওয়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম কমেছে।

এদিন এক কেজি ওজনের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ৩২ হাজার টাকায়। সে হিসেবে প্রতি কেজির দাম পড়েছে ৮০০ টাকা। রফতানিযোগ্য এলসি আকারের (৭০০-৯০০ গ্রাম) প্রতি মণ ২৬ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়েছে ৬৫০ টাকা। হাফ কেজি বা ভেলকা আকারের (৪০০-৫০০ গ্রাম) ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়েছে ৫০০ টাকা। গোটরা আকারের (২৫০-৩৫০ গ্রাম) প্রতি মণ ১২ হাজার টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়েছে ৩০০ টাকা।

বরিশালের মতো বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বাজারগুলোতে ইলিশের ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে এখন সরগরম।

এদিকে, দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ইলিশের মোকাম বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রেও এক সপ্তাহে ইলিশের আমদানি বেড়েছে বলে জানা গেছে। সেখানে গত ১০-১২ দিন ধরে গড়ে প্রতিদিন ২০০ মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আলিপুর-মহিপুর বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রেও ইলিশ সরবারহ বেড়েছে। এখানে প্রতিদিন ২০০-২৫০ মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে।

মৎস্য অধিদফতর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আজিজুল হক জানান, সরকার ও মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পিত একাধিক উদ্যোগে গত কয়েক বছরে ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। মা-ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম ও জাটকা রক্ষা কার্যক্রম বিভিন্ন বাহিনীর সহায়তায় কঠোরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। জেলেদের মধ্যেও সচেতনতা বেড়েছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে মাছ শিকারি জেলেদের সংখ্যা দিনে দিনে কমে আসছে। ফলে শীতের এ মৌসুমেও বড় বা মাঝারি আকারের ইলিশ ধরা পড়ছে। কার্যক্রমগুলো এভাবে চললে সামনে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.