কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে চলছে সীমাহীন অনিয়ম

অপরাধ

আমি দক্ষ বলেই এখানে দিয়েছে যা বলার ডিজি স্যারের সাথে বলুন সাংবাদিককে এডি মোবারক

এম শাহীন আলম :
কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের সীমাহীন অনিয়ম আর হয়রানির কারনে অতিষ্ঠ অত্র জেলার পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা। তথাকথিত চ্যানেল ছাড়া নির্দিষ্ট ব্যাংক ফি জমা দিয়ে পাসপোর্ট পাওয়া যেন স্বপ্নের ঘরে আলাদিনের চেরাগের মতো অবস্হা। সোজা কথা একজন গ্রাহক যদি পাসপোর্ট অফিসের দালাল বা চ্যানেল ছাড়া পাসপোর্ট তৈরি করতে যায়, তাহলে তাকে পড়তে হয় হাজারো শর্ত আর একটার পর একটা ভুল সংশোধনের মহা ঝামেলায়। কিন্তু চ্যানেল বা দালালদের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ফাইল জমা দেয় তাহলে যত ভুল আর কঠিনই হোক না কেন নিমিষেই খুব সহজে কাজ হয়ে যায়। কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসের বিশ্বস্হ সূত্রে জানা যায়,দালালদের সাথে অফিসারদের অফিসের সকল প্রকার ডকুমেন্ট সহ তথ্য আদান প্রদান হয় স্মার্ট ফোনের ওয়াটসঅ্যাপ এবং ম্যান্সেজারে। প্রতিদিন অফিসের শেষ সময়ে এসে কোন দালাল কয়টা ফাইল প্রদান করলো এন্টি খাতায় যোগ করে ফাইল প্রতি ঘুষের টাকা দিতে হয় অফিস কর্তাদের। এই ভাবে চলছে মাসের পর মাস। দালাল চক্র সহ সকল অনিয়ম সহকারি পরিচালক মোবারক এর যোগসাজশে হচ্ছে বলেও জানা যায়।

সরেজমিনে প্রায় শতাধিক গ্রাহকের সাথে কথা বলে জানা যায় এই পাসপোর্ট অফিসে শতকরা প্রায় ৬০-৭০ % পাসপোর্টই দালালদের মাধ্যমেই হয়। তথা কথিত দালালদের মাধ্যমে রেগুলার সাধারন একটি পাসপোর্ট করতে দিতে হয় সর্বনিন্ম সাড়ে আট হাজার থেকে শুরু করে যে যার কাছ থেকে যেমন নিতে পারে। আর যদি কোন প্রকার ভুল সংশোধন করার প্রয়োজন হয় তাহলে তো কথাই নেই, তখন দালালরা তাদের ইচ্ছা মতো গ্রাহকের সাথে কন্ট্রাক করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অফিসের অসাদু কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে কাজ গুলো করান একাধিক সূত্রে জানা যায়। স্হানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের সাথে কথা বললে বেশ কয়েকজন গ্রাহক জানান, টাকা হলে এই কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসে সবকিছু সমাধান হয়ে যায়।সহজে পাসপোর্ট পাওয়াও সম্ভব।আর যদি দালালের মাধ্যমে না যান তাহলে জুতা তো ক্ষয় হবেই তবে কখন যে কাজ হবে বা আপনার কাঙ্খিত পাসপোর্টটি হাতে পাবেন তা বলাই মুসকিল।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে কথা হয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি পাসপোর্ট করতে চ্যানেলের মাধ্যমে জমা না দেওয়ায় এখন পর্যন্ত ব্যাকেন্ট ভেরিভিকেশন নামক অত্র অফিসের সর্বশেষ হাতিয়ারের ফলার ডগায় বিদ্ধ হয়ে আছে। ইতিমধ্যে তার ফাইলটি চ্যানেলের মাধ্যমে নির্ধারিত টাকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানা যায়। পরে সহকারী পরিচালককের ২য় তলায় চ্যানেলের মাধ্যমে গেলেই কাজটা কোন প্রকার ওজর আপত্তি ছাড়াই হয়ে যায়।

সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে স্হানীয় প্রতেক্ষদর্শী লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসে দালাল সৃষ্টি হওয়ার মুল কারন হচ্ছে সহকারি পরিচালক সহ অফিসের কর্মরতরা। স্হানীয় বাসিন্দা সহ গ্রাহকদের ভাষ্য হলো অফিসাররা যদি দালালদের গোপনে সুযোগটা না দিতেন কখনো একটি অফিসে দালাল বা কোন প্রকার চেইন বা সিন্ডিকেট এর সৃষ্টি হতো না। দালালদের সুযোগ করে দেওয়ায় তাদের রুটি রুজির ব্যবস্হা হওয়ার কারনেই তারা এসব দালালি পেশা বেছে নিয়েছে।সেবা গ্রহিতাদের দাবি পাসপোর্ট অফিসের লোকজনই দালাল চক্রটি পোষেন। তাদের কারনেই সেবা গ্রহিতারা দালাল ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়াটা খুব কঠিন বলে জানান।

চকরিয়া থেকে আসা শাহাদাত নামের এক ব্যক্তি বলেন, ১০-১৫ হাজার টাকার নিচে এই পাসপোর্ট অফিসে কাজই হয়না। দালালকে টাকা দেবেন তাহলে আপনার কাজ ওকে। আর দালাল ছাড়া কাগজপত্র জমা দিতে গেলেই অজুহাতের শেষ নেই।

টেকনাফ থেকে আসা সবুর মিয়া নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, ৭দিন ধরে এই পাসপোর্ট অফিসে এসে ঘুরে গেছি আমার পাসপোর্ট হয়নি। পরে এক দালালকে ১২ হাজার টাকা দেয়ার পর আজ ফিঙ্গার দিতে আসছি।

সরেজমিনে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চেয়ে অফিস এসাইনমেন্টের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মোবারক হোসেন দেখা করলে তিনি বলেন, আমি আপনাদের কোন প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো না,আমার অফিস ভালোই চলছে। আমার এখানে কোন ঝামেলা নেই আর আমি পাসপোর্টের বিষয়ে খুব দক্ষ বলেই আমাকে ডিজি স্যার ঢাকা থেকে এখানে বদলি করে পাঠিয়েছে। আমার সাথে কিছু বলার থাকলে ডিজি স্যারের আগে অনুমতি নিয়ে আসেন,স্যারের পারমিশন ছাড়া কথা বলা যাবেনা। যে জায়গা থেকেই আসেন না কেন চা-টা খেয়ে যান। তবে আমি অফিসের কোন বিষয়ে কথা কিংবা কোন বক্তব্য দিতে পারবো না।

উল্লেখ্য যে, কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে গ্রাহকের পাসপোর্ট সেবা প্রদানে দালাল চক্রের মাধ্যমে ঘুষ দাবি ও হয়রানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গেলে আরও অর্ধ শতাধিক গ্রাহকের অভিযোগ পাওয়া যায়। অনুসন্ধান অব্যাহত অনিয়ম আর গ্রাহক হয়রানি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে নিউজ চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.