করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১১ হাজার ছাড়িয়েছে : মৃত্যু হয়েছে ২৫৯ জনের 

আন্তর্জাতিক

সেখানে উল্লেখ করা হয়, চীনের মূল ভূখণ্ডেই মৃতের সংখ্যা ২৫৯ জন। দেশটির হুবেই প্রদেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেশি। সেখানে ২৪৯ জন মারা গেছেন এ রোগে। হুবেই প্রদেশের উহান শহরকে ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা আড়াইশ ছাড়িয়েছে। চীনের মূল ভূখণ্ডেই এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৭৯১ জনের ওপরে। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আজ শনিবার সর্বশেষ এ তথ্য জানানো হয়েছে।

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে এক লাখ দুই হাজারের অধিক লোক এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন-এমন সন্দেহে তাদের বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

তবে মহামারি করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা নিয়ে চীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে যে হিসাব দিয়েছে প্রকৃতপক্ষে ওই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা আরো অনেক বেশি বলে মনে করা হচ্ছে । অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালে মৃতের কোনো রেকর্ড না রেখেই তড়িঘড়ি করে মরদেহগুলো সৎকার করার কাজ করছে চীন।

ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী চীনের উহান শহরে মরদেহ সৎকারের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা বলছেন, হাসপাতাল থেকে তাদের কাছে সৎকারের জন্য যে মরদেহগুলো পাঠানো হচ্ছে তার বেশিরভাগের কোনো রেকর্ড রাখছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, উহান থেকেই প্রাণঘাতী এই ভাইরাসটি বিশ্বে বিস্তার লাভ করেছে।

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সপ্তম ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে দেশটি দুই সপ্তাহের মধ্যে চীন সফর করেছে- এমন যেকোনো ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এছাড়া উহান শহর থেকে যেসব আমেরিকানকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে তাদের ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখারও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।

মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া চীনের প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বৃহস্পতিবার জেনেভায় এক জরুরি বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেয় সংস্থাটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইসাস বলেন, এই ঘোষণার মূল কারণ শুধু চীনে কী হচ্ছে তা নয় বরং বিশ্বের অন্যান্য দেশে কী ঘটছে সেটাও দেখতে হবে। তিনি বলেন, উদ্বেগের আরেকটি কারণ হলো এই ভাইরাস দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থার দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের মধ্যাঞ্চলীয় হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০টির মতো দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, মালয়েশিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তাইওয়ান ও ইসরায়েলে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগীকে শনাক্ত করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং নিহতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের উহান থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। একই সঙ্গে চীন সফর করেছে- এমন বিদেশি নাগরিকদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। বাতিল করা হচ্ছে চীনের সঙ্গে সরাসরি সকল ফ্লাইট। এছাড়া চীনের সঙ্গে থাকা সীমান্তগুলোও বন্ধ করে দেশ সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। নিজ নিজ দেশের নাগরিক ছাড়া অন্য কোনো দেশের নাগারিকদের ভ্রমণে বাধা দেয়া হচ্ছে। 

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র চীনের মধ্যাঞ্চলের উহান শহর থেকে শত শত বিদেশি নাগরিককে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। বাংলাদেশও ৩৪১ জনকে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। শনিবার সকালে তাদের দেশে ফেরার কথা।

২০০৩ সালে একই গোত্রের ভাইরাস সিভিয়ার একিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোমের (সার্স) প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় চীনে। সেই সময় সার্সে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এবার ছাড়িয়ে গেছে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস। চীন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্ববাজারে বড় ধরনের ধাক্কার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্র : আল জাজিরা, সিএনএন, বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.