কুমিল্লায় ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ির বেপরোয়া চলাচল সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রহস্যজনক নিরব

অপরাধ

এম শাহীম আলম :
দেশের লাইফ লাইন খ্যাত মহাসড়কের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঢাকা-চট্রগ্রাম (হাইওয়ে) মহাসড়ক I কুমিল্লার অংশে দাউদকান্দি থেকে কুমিল্লা সিটির পদুয়ার বাজার হয়ে চৌদ্দগ্রামে ফেনী সীমানা পর্যন্ত প্রায় ১০০ কিলোমিটার রাস্তায় অবাধে প্রতিনিয়ত ঝঁকি নিয়ে চলছে লক্কর-ঝক্কর ফিটনেস বিহীন প্রায় দুই হাজার মিনিবাস, মাক্রোবাস,মারুতি,লেগুনার মতো গাড়ী I অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশিরভাগ গাড়ীরই সরকার অনুমোদিত কাগজপএে ভেজাল এবং চালকদের নেই রীতিমতো ড্রাইভিং লাইসেন্স, মহাসড়কে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে এ সমস্ত যানবাহনে অদক্ষ ড্রাইভাররা প্রতিদিন বিভিন্ন গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার যাএী I সরেজমিনে দেখা যায়,এই সমস্ত গাড়ীগুলো ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রহস্যজনক নিরব I

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়,কুমিল্লা দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত যে সমস্ত ফিটনেস বিহীন লোকাল মিনিবাস,মাক্রোবাস,লেগুনার মতো গাড়ীগুলো মহাসড়কে (হাইওয়ে)চলাচল করে ঐ সমস্ত বাহন গুলি থেকে বিআরটিএ প্রশাসন,হাইওয়ে পুলিশ,থানার পুলিশসহ এরিয়া (এলাকা)ভিওিক প্রভাবশালী একাধিক সিন্ডিকেট প্রতিদিন,মাসিক গাড়ী প্রতি নির্ধারিত হারে বিভিন্ন ভূঁইফোড় মালিক,শ্রমিক সংগঠন সহ নামে বেনামে গাড়ির চালকদের কাছ থেকে চাঁদা গ্রহন করে আসছে বিরতিহীন ভাবে বছরের পর বছর I এদিকে চাঁদা নেওয়ার সুবাধে অদক্ষ ড্রাইভারদের দিয়ে ফিটনেস বিহীন গাড়ী গুলো মহাসড়কে চলাচল করতে দেওয়া হয় I

অনুসন্ধানে সরেজমিনে যাএী বেশে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড পর্যন্ত যাওয়ার পথে একটি মাক্রোবাসের সামনের সিটে ড্রাইভারের পাশে বসে বিভিন্ন কথার ফাঁকে ড্রাইভারকে প্রশ্ন করলে ” আচ্ছা ভাই আপনার গাড়ির তো লোকিং গ্লাস নেই,এন্ডিকেটর লাইট নেই,শব্দ করে ঠিক ভাবে হরণও বাজে না,গাড়ীও লক্কর-ঝক্কর সিটের অবস্থাও ভালো না গাড়ির দরজা গুলিও ঠিক ভাবে লাগে না, এতে কি করে আপনারা গাড়ি চালান,আপনাদের কি প্রশাসন এর লোকেরা কিছু বলে না, হাইওয়ে পুলিশ কি আপনাদের এসব গাড়ী সিগন্যাল বা জরিমানা কিংবা কোন সমস্যা হয় না হাইওয়ে রোডে চলাচল করতে I ড্রাইভার উওরে বলে,আরে ভাই এদেশে টাকার কাছে কিচ্ছু লাগে না,কারণ এই (হাইওয়ে) মহাসড়কে ভালো গাড়ির সঠিক কাগজপত্র থাকলেও প্রতিদিন, প্রতিটিপে এবং মাসিক টাকা দিতে হয় I কাগজপত্র ছাড়া নস্ট গাড়ী কোন রকম চালাইলেও টাকা দিতে হয় প্রশাসন সহ নেতাদেরকে, এই জন্য এসব ব্যপার নিয়ে মাথা গামাবার সময় নেই,মোট কথা যেনে যা লাগে সবাই যে ভাবে দেয় আমিও সে ভাবে দিয়ে গাড়ী চালাই ” I

সরেজমিনে অনুসন্ধানে আরো ঘুরে দেখা যায় কাগজপত্র ও ফিটনেস বিহীন গাড়ী তো অবাধে চলছে, এছাড়াও এই (হাইওয়ে) মহাসড়কে ফিটনেস বিহীন গাড়ির চালকদের নেই রীতিমতো ড্রাইভিং লাইসেন্স,নেই কোন সরকারি চোখে পরার মতো অভিযান নেই কোন জবাবদিহিতা I

এছাড়াও এই ফিটনেস বিহীন গাড়ির গুলির প্রতিদিন বারতি ভাড়া নিয়ে সাধারণ যাএীদের তো হয়রানির শেষ নেই, যেমন তাদের ইচ্ছা মতো কিছু দিন পর পর বিভিন্ন উসিলা দিয়ে ভাড়া বাড়ানো,গাড়ির সিটে অতিরিক্ত যাএী বোঝাই,লেগুনা গুলিতে বাদুরের মতো ঝুঁলিয়ে যাএী লওয়া,বিআরটিএ নির্ধারিত গাড়ি ভাড়ার চেয়েও বেশী ভাড়া আদায়সহ বেশকিছু অভিযোগ I

পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে সুয়াগাজি বাজার পর্যন্ত চলাচলকারী মাক্রোবাসের কয়েকজন যাএীর সাথে কথা বললে তারা জানান,একটি মাক্রোতে ১০ জনের সিট নির্ধারিত থাকলেও কমপক্ষে ১৬ জন যাএী গাড়ির সিটে বসানো হয়,ড্রাইভার ও স্ট্যান্ডে সিরিয়াল দিতে বেপরোয়া গাড়ি চালায় আর ভাড়া বেশি নিলেও জায়গায় জায়গায় স্টোপিজের তো শেষ নেই,শীতকালে তো যেমন তেমন কোন রকমে গাদাগাধি করে যাওয়া যায় কিন্তু গরম কালে একেবারে এই সব গাড়িতে মানুষের শারিরীক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায় I
আরেক যাএী জানান, এই সব সমস্যা কথা স্ট্যান্ডে কিংবা পুলিশের কাছে বললেও এতে করে কোন প্রতিকার হয়না,লেগুনা গুলিতে মানুষ বাদুরের মতো ঝুলে আসলেও পুলিশ দেখে না দেখার ভান করে প্রতিদিন ঘুষের টাকা নিয়ে নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেন I

ঠিক এরূপ ভাবে কুমিল্লার অংশে দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত মহাসড়ক এবং পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড হতে চাঁদপুর,নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কেও একেই চিএ প্রতিদিন দেখা যায়,
এছাড়া প্রতিদিন এই (হাইওয়ে) মহাসড়কে অদক্ষ ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন ড্রাইভারদের দিয়ে ফিটনেস বিহীন প্রায় দুই হাজারের মতো মাক্রোবাস,লেগুনা,মিনিবাস দিয়ে হাজার হাজার যাএী এক স্হান থেকে অন্য স্হানে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে I

সরেজমিনে দেখা যায়,এই সমস্ত ফিটনেস বিহীন গাড়ির ড্রাইভাররা প্রতিটি স্ট্যান্ডে আগে সিরিয়াল দেওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে বেপরোয়া ভাবে গাড়ী চালায়,এতে করে যাএীদের আতংকের মধ্যে থাকতে হয় প্রতিনিয়ত, আর সড়কে দুর্ঘটনা তো প্রায়, এগুলো রোধে নেই প্রশাসনিক কোন সঠিক তদারকি চোখে পরার মতো , সাধারণ মানুষ যানবাহন চলাচলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকলেও এখন অসহায়, এই বিষয়ে গত প্রায় দুই মাস আগে কুমিল্লা ময়নামতি হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জকে হাইওয়ে উপরোক্ত বিষয় গুলি অবগত করলে তিনি জানান,আমি নতুন এই থানায় জয়েন্ট করেছি,আপনি যে ফিটনেস বিহীন গাড়ীসহ যে বিষয় গুলি বলছেন আমি তা নোট করে রাখলাম তদন্ত করে আমি ব্যবস্থা নিবো বলে আমাকে থানায় চায়ের দাওয়াত সহ সরাসরি দেখা করার কথা বলে কল কেটে দেয় I পরক্ষণে ১৫/২০ দিন পর আবারও কল দিলে তিনি জানান,ভাই আপনি ঐদিন বিষয়টা বলেছেন তা দেখতেছি, ভাই যারা রোডে গাড়ি চালায় তারা তো আপনার নিজের এলাকারই লোক,আচ্ছা আপনি একদিন থানায় আসেন সাক্ষাতে কথা হবে বলে কল কেটে দেন,গত দুই দিন যাবৎ নিউজের স্বার্থে একাধিক বার ফোন করলেও তিনি মোবাইল ফোনের কলটি রিসিভ করেননি,সচেতন মহল মনে করেন এতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যানবাহন সিন্ডিকেটের জিবি’র নামে প্রতিদিন চাঁদা (ঘুষের) টাকা খেয়ে রহস্যজনক নিরব ভূমিকা পালন করছে I পরবর্তী অনুসন্ধানে পরের সংখ্যায় চোখ রাখুন I

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.