চৌদ্দগ্রাম প্রতিনিধি :
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হাতুড়ে ডাক্তার শফিউল আলমের ভুল চিকিৎসায় সালমা আক্তার মজুমদার(১৫) নামে এক কিশোরীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নিহত সালমা উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ভিতরচর গ্রামের শহীদুল ইসলাম মজুমদারের মেয়ে। এ ঘটনায় সোমবার হাতুড়ে ডাক্তার শফিউল আলমের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়।
নিহত সালমা আক্তার মজুমদারের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল রোববার দুপুরে বাড়ির পাশে ঝুলানো দোলনায় চড়তে গিয়ে গাছের সাথে হাঁটুর ধাক্কা লাগে সালমার। এরপরই ব্যাথার কারণে হাঁটতে সমস্যা দেখা দিলে ওই দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় রাজাপুর বাজারের ডাক্তার শফিউল আলমের চেম্বারে নেয়া হয় সালমাকে। সেখানে কোনো রকম এক্স-রে না করিয়েই ডাক্তার শফিউল আলম প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে ওষুধ দেয়। যা সেবনের পর থেকেই তাঁর পায়ের ব্যাথাও বাড়াসহ শরীরে ঠোসা উঠতে শুরু করে। এভাবে চার দিন অতিবাহিত হওয়ার পর অবস্থা বেগতিক দেখে ৩০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে সালমাকে কাশিনগর বাজারস্থ ফাস্ট এইড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাৎক্ষনিক এক্স-রে করে জানান, সালমার হাঁটুর হাঁড় (আংশিক) ফেটে গেছে। ফাস্ট এইড হাসপাতাল সালমার সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ওষুধপত্র দিলেও তা সেবন করার আগেই পরদিন ১ মে শুক্রবার ভোরে সালমার মৃত্যু ঘটে বলে জানিয়েছেন তাঁর বাবা শহীদুল হক মজুমদার।
সালমার মৃত্যুতে যেখানে শোকে কাতর পরিবার সেখানে ডাক্তার শফিউল আলম সালমার মৃত্যুর পর থেকেই চেম্বার ছেড়ে আড়ালে গিয়ে লোকমারফতে বলছেন অন্য কোনো কারণে সালমার মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে তার সাথে কথা বলতে চেয়ে চেম্বারে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং বাজার পরিচালনা কমিটি বরাবর অভিযোগ দিতে চাইলেও ডাঃ শফিউল আলম পলাতক থাকায় কোনো সুরাহা করা যায়নি বলে জানান সালমার মামা মোঃ শাহীন।
স্থানীয়ভাবে কি সুরাহা করতে চেয়েছিলেন এমন প্রশ্নে মোঃ শাহীন বলেন, আমি আমার ভাগ্নির এমন মৃত্যুর জন্য কথিত ডাক্তার শফিউল আলমকে দায়ী করছি। কারন ডাক্তার শফিউল আলম যেসব ওষুধ লিখেছে প্রেসক্রিপশনে তা অন্য চিকিৎসকদের দেখালে তারা জানান এসব ওষুধ ১৫ বছর বয়সী কোনো বাচ্চাকে সেবন করালে তার এমন অনাকাঙ্খিত মৃত্যু অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ রকম ভুল ওষুধ ও ইঞ্জেকশন প্রয়োগে পূর্বেও তার হাতে দুটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তাই আমরা চেয়েছিলাম স্থানীয়ভাবে বসে তাকে আমাদের এই অঞ্চলে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে চিকিৎসার নামে মানুষ হত্যার ঘটনা যাতে আর ঘটাতে না পারে। কিন্তু পলাতক থাকায় তা সম্ভব হয়নি। শুধু তাই নয়, স্থানীয়ভাবে সমাধানের আশায় প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও ডাঃ শফিউল আলম পলাতক থাকায় আমরা প্রশাসনের ধারস্থ হয়েছি।
এদিকে প্রেসক্রিপশনে উল্লেখিত ওষুধসমূহ দেখে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি সূত্র জানায়, ডাক্তার শফিউল আলম যেসব ওষুধ লিখেছে তা সে লিখতে পারে না। কারণ তাঁর ব্যবস্থাপএ লিখার সরকারি ভাবে কোন অনুমতি নেই।
এদিকে স্থানীয়রাও জানায় পূর্বেও ডাঃ শফিউল আলমের ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। ৫নং শুভপুর ইউনিয়নের একটি শিশুর মৃত্যু হয় তাঁর ভুল চিকিৎসায়। পরপর এমন মৃত্যুও ঘটনাতেও ডাঃ শফিউল আলম বিচার না হওয়ায় এবং সর্বশেষ সালমার মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা৷ নিহত সালমার বাবা শহীদুল ইসলাম মজুমদার বাদী হয়ে ১১ মে – ০২০ ইং সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।