বিশেষ প্রতিবেদক :
২১ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজ নিখোঁজ হওয়ার ছয় বছর পূর্ণ হলো। এই ছয় বছর ধরে তার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছে তার মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তান ও শুভাকাঙ্খীরা। সন্তান ও স্বামীর সন্ধানের দাবিতে সবুজের মা ও বউ এই ছয় বছরের বিভিন্ন সময়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মন্ত্রী, এমপি ও বড় বড় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাতেও সন্ধান মেলেনি সবুজের। এই অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই হচ্ছেন শেষ ভরসা। পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন ফিরিয়ে দেবার নির্দেশ দিন। ইতিমধ্যে জাতিসংঘ থেকে একটি তালিকা প্রনয়ন করে গুম হওয়া ব্যাক্তিদের অবস্থান জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা প্রয়োজন।
শনিবার (২১ আগস্ট) কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজ নিখোঁজ হওয়ার ছয় বছর উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সংগঠনের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানান।
সংগঠনের চেযারম্যান মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা’র সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব এডভোকেট সাইফুল ইসলাম সেকুল, সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন মো. আল আমিন, গুম হয়ে যাওয়া সাজ্জাদ হোসেন সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া, পুত্র শেখ সাহেদ হোসেন প্রেম, কণ্যা শেখ সুমাইয়া, সমিতির কুষ্টিয়া জেলা সাধারন সম্পাদক শাহারিয়া ইমন রুবেল, কেন্দ্রীয় নেতা বেলাল হোসেন রাজু, নারায়নগঞ্জ জেলা সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম কাজল, কুমিল্লা জেলা আহ্বায়ক পারভেজ হোসেন বাবু, বরগুনা জেলা সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, দপ্তর উপকমিটির সদস্য মারুফ সরকার, মানবাধিকার সংগঠক আর কে রিপন, মো. মুক্তার হোসেন নাইম, মো. মহসীন মুন্সী, মো. রুহুল আমিন প্রমুখ।
তিনি দেশব্যাপী অপহরণ, গুম ও হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দলমতের বাইরে গিয়ে বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, অপহরণ, গুম, খুন বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। অপরাধীর কোনো দল নেই, কোনো মত নেই, কোনো সংগঠন নেই। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
তিনি বলেন, গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের কি দু:সহ যন্ত্রনা এটা বলে বুঝানো যাবে না। গুম হয়ে যাওয়া সাজ্জাদ হোসেন সবুজের পরিবার এক অনিশ্চিত অবস্থার মধ্রে দিন কাটাচ্ছে। তার বৃদ্ধ মা সন্তানের পথ চেয়ে চয়ে এখন বিছানায়। স্ত্রী-সন্তানরা তাকিয়ে আছে পথের পানে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে সবুজ তার পরিবারের কাছে ফিরে আসবে বলে আমরা প্রত্যা করি।
তিনি আরো বলেন, সন্তান হারানোর বেদনা খুবই কষ্টে। সেই কষ্টে নিখোঁজ সবুজের মা এখন প্রায় বিছানায়। শেষ যাত্রার পূর্বে তিনি তার সন্তানকে ফিরে পেতে চান। প্রায়ই না খেয়ে রোজা থাকেন সবুজের গর্ভধারিনী মা।
তিনি বলেন, স্বামী হারানোর কষ্টে নিখোঁজ সবুজের স্ত্রী মানসিকভাবে একেবারেই ভেঙে পড়েছেন। স্বামী শোকে প্রায়ই সে অসুস্থ থাকেন। পিতৃহারা প্রেম ও সুমাইয়ার চোখে সব সময় বাবার ছবি। সবখানেই যেন নিখোঁজ সবুজের সন্তানেরা সবুজকে খুঁজে বেড়ায়, পিতা ছাড়া সবুজের সন্তানেরা আজ ছায়াহীন পথচারীর মত। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও নিখোঁজ সন্তানের খোঁজ না পেয়ে তার বাবা এখন অনেকটাই বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। তারপরেও পরিবারের সকলের চাওয়া সবুজকে ফিরে পাওয়া। আজকের এই দিনে তার পরিবারের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ সাহেবের কাছে সবিনয় অনুরোধ শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজকে তার পরিবার এর কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
উল্লেখ্য যে, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া চেম্বার অফ কমার্স এর সাবেক সহ-সভাপতি, রাজপথের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর, যুব সমাজের আইডল হিসাবে পরিচিত শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজ ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবুকে ২০১৫ইং সালের ২০ আগস্ট গাজীপুরের ড্রিম স্কয়ার রিসোর্ট থেকে আটক করে সাদা পোশাকধারীরা। আটকের ০৬ দিন পর আক্তারুজ্জামান লাবু ফিরে আসলেও এখন পর্যন্তও সন্ধান পাওয়া যায়নি শেখ সাজ্জাদ হসেন সবুজের।