খুলনায় পীর সাহেব চরমোনাইয়ের সমাবেশে জনসমুদ্র

রাজনীতি

আবদুল্লাহ আল মামুন :
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম চরমোনাই পীর বলেছেন, গনকমিশন’ কর্তৃক দেশের ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ যারা করেছে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর পর হলেও আজকের সরকার ৭১ পূর্ববতী সরকারের মতো, নিপীড়নমূলক আচরণ করছে। দেশের সাধারণ নাগরিকদের কোনো অধিকার সম্মান নেই। সকল অধিকার ভোগ করছে ক্ষমতাসীন এবং তাদের দোসররা।

তিনি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সবাই জনগণের স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করেছে। সবাই জনগণের সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। গণমানুষের সাথে প্রতারণা করেছে। শাসক শ্রেণির এরকম কর্মকাণ্ডের ফলে স্বাধীনতা আজ অর্থহীন হয়ে পড়েছে।

শনিবার (২১ মে) বিকেল সাড়ে ৪টায় সোনালী ব্যাংক চত্তর ডাকবাংলা খুলনায় ১৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ইসলামিক আদর্শে রাষ্ট্রগঠনের লক্ষে কেন্দ্রীয় সমাবেশ থেকে দেওয়া ১৫ দফা বাস্তবায়নের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

দাবি তুলে ধরে চরমোনাই পীর বলেন, যেকোনো মূল্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি রোধ করতে হবে। বাজার কারসাজির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে, দেশে মদ ও সকল ধরনের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে, শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে, পূর্ণ ও আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য করতে হবে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিশুদের জন্য নামাজ শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে, শিক্ষা সিলেবাস থেকে চরম নাস্তিক্যবাদী সকল ধর্মবিরোধী, অবৈজ্ঞানিক ও বস্তাপঁচা ডারউইনের থিউরি বাদ দিতে হবে। কারান্তরীণ সকল মজলুম আলেম এবং রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।

এছাড়া তিনি জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া, সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করা, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্রবাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া, নির্বাচনে সকল দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে করা, রেডিও, টিভিসহ সকল সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া এবং রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সকল ধরণের হয়রানী বন্ধ করা, দুর্নীতিবাজদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির (চ.জ) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা, এবং সকল রাজনৈতিক দলের জন্যে সভা-সমাবেশসহ সাংবিধানিক স্বীকৃত সকল রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বাকস্বাধীনতা উন্মুক্ত করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চরমোনাই পীর আরও বলেন, কথিত ‘গনকমিশন’ কর্তৃক দেশের ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ যারা করেছে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রন বিধিমালা ২০২২ নামক মদ সহায়ক একটি বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। সরকার দেশে মদ ও অ্যালকোহল আমদানি, রফতানি, উৎপাদন বিপণন ও বিক্রয় সংরক্ষণের দুয়ার উন্মুক্ত করতে চাইছে। মাদকে একটি সাধারন ও সহজলভ্য পানীয় বানিয়ে ফেলা হয়েছে। যার মাধ্যমে গোটা দেশের তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একজন মুসলমানের জীবন থাকতে এদেশে মদের বিধিমালা করতে দেওয়া হবে না।

জাতীয় শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতিতে এইচএসসি পরীক্ষার আবশ্যিক বিষয়বলী থেকে ইসলাম শিক্ষাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ইসলাম শিক্ষার আগ্রহ হারাচ্ছে। মাধ্যমিক স্তরে যতোটুকু ইসলাম শিক্ষা রাখা হয়েছে তাতেও ইসলামকে খণ্ডিত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর উচ্চ শিক্ষায় ইসলাম শিক্ষাকে একবারেই বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষার সকল স্তরেই ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার দাবি জানান।

দলের নায়েবে আমির, হাফেজ মাওলানা আব্দুল আওয়াল সাহেবের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব, হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমেদ, যুগ্মমহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব আহমেদ,সহ কেন্দ্রীয় ও খুলনা বিভাগীয় নেতা কর্মী বৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.