বিশেষ প্রতিবেদন :
সাংবাদিকদের জন্য নতুন কোন আইন হচ্ছেনা বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। আবার প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজাম উদ্দিন বলেছেন সাংবাদিকরা অন্যায় করলে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে সংসদে আইন পাস হচ্ছে। সাংবাদিকদের নিয়ে যা খুশি তাই করা হচ্ছে; দয়া করে এগুলো বাদ দিন। সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালাকে গণমাধ্যমকর্মী আইনে রুপান্তরিত করারও নীল নকশাও চলছে। এদিকে সংবাদ কর্মীদের চাকরির শর্তকে আইনি কাঠামো দিতে সংসদে তোলা গণমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলি) বিল-২০২২ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবে সংসদীয় কমিটি। বুধবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। জানাগেছে, গত ২৮ মার্চ খসড়া এই আইনটি সংসদে তোলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। পরে বিলটি ৬০দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। গত ৬ জুন এজন্য আরও ৬০ দিন সময় চাইলে সংসদে ভোটাভোটির মাধ্যমে তাতে অনুমোদন দেওয়া হয়। বিলটি সংসদে ওঠার পর এ নিয়ে কোনো বৈঠক করেনি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তবে এর অনেকগুলো ধারা নিয়ে বিরোধিতা করেছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনসহ মালিকদের সংগঠন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, সাংবাদিক নেতারা আমার সঙ্গে বিলটি নিয়ে কথা বলেছিল। আমরা তাদের লিখিত প্রস্তাব দিতে বলেছি। এরপর আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কমিটির বৈঠকে তাদের আমন্ত্রণ জানাব।জনাব ইনু জানান, সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়ন বিএফইউজে, ডিইউজে, টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকো, সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব এবং সংবাদপত্রের কর্মচারীদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করবে সংসদীয় কমিটি।এছাড়া ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সঙ্গেও বৈঠক হতে পারে বলে জানান সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
এতে বলা হয়, গণমাধ্যমকর্মীদের ন্যূনতম ওয়েজ বোর্ড প্রতি পাঁচ বছর পর পর গঠন হবে। ওয়েজ বোর্ড সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা, বেসরকারি টেলিভিশন, বেতার ও নিবদ্ধিত অনলাইন মাধ্যমের জন্য প্রয়োজনে পৃথক পৃথক বেতন কাঠামো নির্ধারণ করবে। প্রস্তাবিত আইনটিতে বলা আছে, গণমাধ্যমে পূর্ণকালীণ কর্মরত সাংবাদিক, কর্মচারী এবং নিবন্ধিত সংবাপত্রের মালিকানাধীন ছাপাখানাসহ নিবন্ধিত অনলাইন গণমাধ্যমে বিভিন্নকর্মে নিয়োজিত কর্মীদের “গণমাধ্যমকর্মী” বলা হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের তিনটি বিভাগ করা হয়েছে এই বিলে। আগে গণমাধ্যম কর্মীরা চলতেন দ্য নিউজপেপার এমপ্লয়িজ (চাকরির শর্তাবলী) আইন- ১৯৭৪ এর আওতায়। এর সঙ্গে শ্রম আইনের কিছু বিষয় সাংঘর্ষিক হচ্ছিল। পরে সাংবাদিকদেরকে শ্রম আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাদের শ্রমিক হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়।
সরকার ওই আইনকে রহিত করে সব শ্রমিকের জন্য ২০০৬ সালে “শ্রম আইন” প্রণয়ন করে, যাতে সংবাদপত্রের সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রেস কর্মচারীদের বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে ২০১৮ সালে বিলটিতে নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এদিকে মফস্বলের সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ করা জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারের উচিৎ মাঠ পর্যায়ে সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর তালিকা করে তাদেরকে ডেকে কথা বলা; নয়তো দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে যেই তিমিরে থাকা গণমাধ্যম সেই তিমিরেই থেকে যাবে-যার প্রমাণ ৫৭ধারা,৩৪ ধারাসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। ঐ সকল নেতাদের অধিকাংশই ডুয়েল পার্ট করায় অর্ধ শত বছর ধরে গণমাধ্যম অঙ্গনে ত্রাহিবস্থা বিরাজ করছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগে সাংবাদিক সুরক্ষা আইন পাস করুন, সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালাটি প্রণয়ন করুন, সম্প্রতি সরকারী ভাবে প্রণীত পেশাদার সাংবাদিকদের তালিকাটি দ্রুত প্রকাশ করে আইডি নাম্বার প্রকাশ করুন। সরকার ঘোষিত সবশেষ ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা প্রাপ্তিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করুন।
সাংবাদিকদের জন্য সরকারের যা জরুরী, তা না করে কার বুদ্ধি-পরামর্শে সাংবাদিক সমাজকে তৃতীয় পক্ষে দাঁড় করানো হচ্ছে ঠিক তা বুঝে আসছেনা। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে সরকারের মাঝে সরকার বিরোধী কোন অপশক্তি সরকারকে ভুল বুঝিয়ে একেক সময় একেকটি আইন প্রণয়নের মাধ্যমে গণমাধ্যম অঙ্গণকে কোনঠাসা করা হচ্ছে। এই ধরুন-আইপি টিভি এবং অনলাইন গণমাধ্যম; যা গোটা বিশ্বে এখন জয়জয়কার। গণমাধ্যমকে আতুরঘরে হত্যার মিশনেও নামানো হচ্ছে সরকারকে। বিশ্ব আজ ডিজিটাল প্রযুক্তির মহাসড়কে আছে। সেখানে গণমাধ্যমও একটি মাধ্যম। সবক্ষেত্রেই ডিজিটালের ছোঁয়ায় জয়জয়কার। যেখানে মুদি দোকান থেকে হোটেল রেস্তোরা এমনকি লঞ্চ, গাড়ি,ট্টেনের টিকেটও ডিজিটাল পদ্ধতিতে কিংবা অনলাইনের মাধ্যমে চলছে। সেখানে গণমাধ্যমের উন্নয়নে বাঁধা কোথায়! আর কেনইবা গণমাধ্যমকে বারংবার খাটো করে বারংবার কাঠগোড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। কৈ কোথাওতো অভিযান দেখছিনা যে কেন আপনার হোটেলে কিংবা মুদি দোকানে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বেচাকেনা করছেন? তবে কেনইবা ডিজিটাল পদ্ধিতিতে পরিচালিত অনলাইন কিংবা আইপি টিভির ওপর বারংবার অভিযান চালিয়ে, আইনের যাতাকলে নানা দোষ চাপানো হচ্ছে! যা গণমাধ্যমের জন্য অশুভ লক্ষণ মনে হচ্ছে। দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর সময়কালেও সাংবাদিকদের জন্য বেতন-ভাতা , কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও পরিচিতির জায়গাটি চরম নরবড়ে অবস্থানে লক্ষনীয়। গণমাধ্যমকে মনে হচ্ছে তেঁতুল গাছের মত; গাছের গোঁড়ায় যে যখন যাবে তখনই একটা নাড়া দেবে। ৫৭ ধারা থেকে ৩৪ ধারা পরবর্তী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যেন কাল সাপের বিষের মত। আমি আগেই বলেছি, রাষ্ট্র কিংবা সরকারের মাঝে লুকিয়ে থাকা পাক দোসররা রাষ্ট্রের চতুথর্থ স্তম্ভখ্যাত গণমাধ্যমকে ৫০ বছরের ঝাঁকুনিতে প্রায় লন্ডভন্ড করে ফেলেছে।অতিমাত্রায় অনিরাপদ গণমাধ্যমে আজ আর শিক্ষিত কিংবা বংশীয় ঘরের ছেলে-মেয়েরা পেশাটিতে যুক্ত হতে চায়না বরং পেশাটি ছেড়ে চলে গেছে বহু সাংবাদিক। ঝক্কিঝামেলা এড়াতে তারা অন্যপেশায় যুক্ত হচ্ছেন। আসুন; পেশাটিকে বাঁচাতে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। লেখক: আহমেদ আবু জাফর,প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, বোর্ড অব ট্রাস্টি, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম-বিএমএসএফ