মোঃ মাহবুব আলম চৌধুরী জীবন :
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসাবে পরিচিত লাভ করেছে। সীমান্ত পথের পরিবহন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল হওয়ায় অন্তত দুইশত পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ভারতীয় পণ্য সামগ্রী। নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচেতন মহল জানান, চোরাকারবারীরা বীরদর্পে কোন প্রকার বাঁধা ছাড়াই নিরাপদে তাদের চোরাচালান ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা করছে। জৈন্তাপুর সীমান্তের বিভিন্ন পথ ব্যবহার করে দিন দুপুরে জনস্মুখে প্রতিদিন অনন্ত ২০ হতে ৩০ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট সীমান্তরক্ষী বাহিনী নির্ধারীত সোর্সদের মাধ্যমে চোরাকারবারীদের নিকট হতে লক্ষ লক্ষ টাকা ডিউটি খচর হাতিয়ে নিয়ে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছে। এসকল পণ্যের বেশির ভাগ বিলাশ বহুল গাড়ী ব্যবহার করে সিলেট শহরের নামি দামি মার্কেট শপিংমল সহ সারাদেশে পাচার করা হচ্ছে । সন্ধ্যার পর হতে শেষ রাত পর্যন্ত এসকল গাড়ী সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে ঘুরাফেরা করে ৷ সময় ও সুযোগ বুঝে বিজিবির সোর্সদের বিশেষ সংকেত পাওয়ার পর পর ভারতীয় পণ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে ।
(সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যান্তরে জঙ্গলে মহিষ বেঁধে রাখার এবং সোর্সদের মাধ্যমে বিজিবির গ্রীণ সিগ্যান্যালের অপেক্ষায় থাকা মহিষের ভিডিও দেখতে লিংকে ক্লিক করুন) https://youtu.be/kGIRlmJ8hsw
নামপ্রকাশে অনচ্ছিুকরা জানান, জৈন্তাপুর উপজেলার নলজুরী, খাসি হাওর, খাসিনদী, আলুবাগান, মোকামবাড়ী, মোকামপুঞ্জি, শ্রীপুর চাবাগান, আর্দশগ্রাম, আসামপাড়া, ছাগলখাউরী, মিনাটিলা, রাংপানি নদী, কাঠালবাড়ী, কেন্দ্রী হাওর, কেন্দ্রী, ডিবিরহাওর, ডিবির হাওর আসামপাড়া, ঘিলাতৈল, মহেষমারা, ফুলবাড়ী, টিপরাখলা, কমলাবাড়ী, গোয়াবাড়ী, ভিতরগোল, হর্নি, বাইরাখেল, জালিয়াখলা, কালিঞ্জি, পাখিবিল, দেয়াল, মাঝেরবিল, সারীনদীর উৎসমূখ, কামরাঙ্গী স্কুলঘাট, লাল মিয়ার টিলা, অভিনাশের টিলা, জঙ্গীবিল, আফিফানগর, বাঘছড়া, রাবারবাগান, বালিদাঁড়া, ইয়াং রাজা, তুমইর এলাকা দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ২০ হতে ৩০ কোটি টাকার পণ্য সামগ্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। পণ্য সামাগ্রীর মধ্যে ভারতীয় বিভিন্ন ব্যান্ডের মদ ও মাদক সামগ্রী, ভারতীয় শাড়ী, বিভিন্ন প্রকার কাপড়, নি¤œ মানের চা-পাতা, আমদানি নিষিদ্ধ ভাররতীয় শেখ নাছির উদ্দিন বিড়ি, মোটর সাইকেল, টাটা গাড়ীর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, টায়ার, সিএনজি অটোরিক্সার পার্স, ২০ হতে ২৫ ধরনের মোবাইল হ্যান্ড সেট, হিরোইন, অফিম, গাজা, গরু-মহিষ সহ বিভিন্ন প্রকারের কসমেট্রিক্স সামগ্রী, শিশুখাদ্য পণ্য।
স্থানীয় বাসিন্ধাদের অভিযোগ সীমান্ত বাহিনীর তাদের মনোনিত সোর্সদের মাধ্যমে সিজার করার গরু মহিষ আটক এবং কিছু পণ্য কয়েকটি গরু-মহিষ আটক করেন। ডিউটি খরচের নামে কিট প্রতি একহাজার, মোটর সাইকেল প্রতি পাঁচহাজার, গরু মহিষ প্রতি দুই হাজার হতে চার হাজার টাকা পর্যন্ত ডিউটি খরচের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্ধা সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে জানালেও আই ওয়াশের নামে গোটা কয়েক গরু মহিষ আটক করা হয়।
এছাড়া আটককৃত গরু মহিষ কাষ্টম কর্মকর্তার উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে নিলাম করার কথা থাকলেও গোপনে চোরাকারবারীদের সোর্সদের সহায়তায় আটককৃত মালামাল নিলাম করা হয়। পরবর্তীতে বিজিবি নিজেদের কার্যকলাপ ধামাচাপা দিতে নিরিহ মানুষদের নামে বেনামে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে মর্মে অভিযোগ তুলা হয় ৷
সীমান্তের চোরাচালান ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা মার্চ ও এপ্রিল মাসের বৈঠকে এবং জেলা প্রশাসকের সাথে উপজেলা বিভিন্ন সুধিজনের মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এছাড়া বিজিবির চোরাচালনা কার্যক্রম নিয়ে উপজেলার সকল ইউপি চেয়ারম্যান বৃন্দরা প্রশ্ন তুলেন। সেই সাথে বিজিবিকে কোন প্রকার সহযোগিতা না করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানান চেয়ারম্যানরা। কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন সীমান্তের একটি পাতা নড়াচড়া করলে বিজিবি অবহিত থাকে। এসকল সত্য কথা বললে, বিজিবি উল্টা প্রকৃত চোরাকারবারীদের বাদ দিয়ে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক সহ নিরিহ জনসাধারনের উপর মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তারা উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
শ্রীপুর ক্যাস্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার ইউনুছ আলী সব বিষয় অস্বীকার করে বলেন, বিজিবি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে এবং মালামাল আটক করছে।
জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম দস্তগীর আহমদ বলেন, উপজেলার আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। এরপরও চোরাকারবার রোধে নিয়মিত অভিযান হচ্ছে।