নীলফামারীতে আলোকিত সমাজ গড়ার শ্লোগান নিয়ে কাজ করছে জীবনতরী পাঠাশালা

ফিচার

বিশেষ প্রতিবেদক :
আলোকিত সমাজ গড়ার অঙ্গিকার নিয়ে গ্রামের পিছিয়ে পড়া সুবিধা বঞ্চিত দরিদ্র পরিবারের শিশুদের আলোকিত করতে নীলফামারী জেলার জলঢাকা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড দুন্দিবাড়ি মাইজালীপাড়া গ্রামে নানা প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও এ এলাকার সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন দুন্দিবাড়ি মাইজালীপাড়া গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবক মোঃ অপিজার রহমান সে বর্তমানে কারমাইকেল কলেজ, রংপুর (বাংলা বিভাগের এম,এ অধ্যায়নত) ছাত্র। ২০১৮ ইং সালে ‘জীবনতরী পাঠশালা’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। মাত্র ১৭/১৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে জীবনতরী পাঠশালার ফ্রি পাঠদান কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। ২০১৯ ইং শিক্ষাবর্ষে ১ম ও ২য় শ্রেণির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৬ জন। ২০২০ ইং শিক্ষাবর্ষে ১ম থকে ৪র্থ শ্রেণির মোট ১২০ জন শিক্ষার্থী আছে। বর্তমানে সাতজন এ পাঠশালার ফ্রি পাঠদান কেন্দ্রে শিক্ষাদান করছেন। সামাজিক দ্বায়বোধ থেকে আলোকিত সমাজ গড়তে শিক্ষার আলো ছড়াতে অপিজার রহমান এলাকার ২০ জন শিক্ষিত বেকার তরুণকে নিয়ে এ কাজ শুরু করেন।
প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ, বিদ্যালয়ে শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিত করন, অভিভাবকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করে বিদ্যালয়মূখীকরন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চত করনের লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পড়ানো ও শিক্ষা উপকরণ দিয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন জীবনতরী পাঠশালার সদস্যরা।
জীবনতরী পাঠশালা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠদানের পাশাপাশি আরো বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করে থাকে যেমন- বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কুইজ প্রতিযোগিতা, সুন্দর হাতের লেখা, রচনা প্রতিযোগিতা ইত্যাদি এছাড়াও বৃক্ষরোপণ অভিযান, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ, মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন কুসংস্কার থেকে পরিত্রাণের জন্য সচেতনতামূলক আলোচনা করা হয়।
শত ব্যস্ততা ও নিজেদের লেখাপড়ার এবং পারিবারিক কাজকর্ম শেষে যারা জীবনতরী পাঠশালার ফ্রি পাঠদান কেন্দ্রে এসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দিয়ে আসছেন তাঁদেরকে কোনো টাকা দেওয়া হয় না। তারা বলেন যে সামাজিক দ্বায়বোধ থেকে আমরা তাদের পাঠদান দিয়ে আসতেছি। তাদেরকে শেখার পাশাপাশি আমরাও শিখতেছি। একজন শিক্ষার্থী হয়ে অনেকগুলো শিক্ষার্থীকে পাঠদান দেওয়ায় আমাদের খুবই ভালো লাগে। জীবনতরী পাঠশালায় বর্তমানে শিক্ষর্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ‘মাসিক শিক্ষা উপকরণ’সহ আরো বিভিন্ন খাতে ব্যয় বেড়েই চলছে। এগুলো সামাল দিতে আমাদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। প্রতি মাসে অনেক বেশি উপকরণের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
নীলফামারী জেলা পরিষদ, জলঢাকা উপজেলা প্রশাসন ও জাতীয় সংসদ সদস্য এবং বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংগঠনটিকে উৎসাহ প্রদানে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করলে উপজেলার একটি ব্যতিক্রমি মডেল স্বেচ্ছাসেবী সমাজিক সংগঠন হিসেবে আলোর মুখ দেখাতে সক্ষম হবে। দুন্দিবাড়ি মাইজালীপাড়া, পশ্চিম বালাগ্রাম, খেজুরতলা, বানিয়াপাড়াসহ আশপাশের অনেক গ্রামের শিশুদের পড়ার শব্দে প্রতিদিন মুখরিত থাকে পাঠশালাটি। সন্তানের লেখাপড়া নিয়ে আর চিন্তিত নন অভিভাবকরাও। এ পাঠশালার পাঠ কার্যক্রমে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তাঁরা। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে অপিজার রহমান এর মতো এমন উদ্যোগ নেওয়া হলে শিক্ষায় ঝরেপড়া শিশুর সংখ্যা কমে আসবে। আলোকিত হবে সমাজ, আলোকিত হবে বাংলাদেশ ও বিশ্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published.