বগুড়ার আদমদীঘিতে কমদামে বিক্রি হচ্চে কুরবানির পশুর চামড়া

অর্থনীতি

মুক্তারুজ্জামান আদমদীঘি :
বগুড়ার আদমদীঘির সান্তাহার পৌর শহরের চামড়া গুদাম এলাকায় কমদামে বিক্রি হচ্চে কুরবানির পশুর চামড়া। ঈদুল আযহাকে ঘিরে চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম কুরবানির ঈদ। এ সময় মোট চামড়ার শতকরা ৮০ ভাগ সংগৃহীত হয়ে থাকে। উপজেলায় সান্তাহারে কুরবানির পশুর চামড়া কেনার তেমন লোক নেই। অনেকেই চামড়া বিক্রি করতে না পেরে ফাঁকা স্থানে গর্ত খুঁড়ে মাটিতে পুতে ফেলছে, আবার কেউ কেউ মসজিদ, মাদ্রাসায় দান করে দিচ্ছেন।

কিন্তু কয়েক বছর আগেও চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের চামড়া সংগ্রহের জন্য দোড়-ঝাপ লক্ষ্য করা যেত। এ বছরের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সকাল গড়িয়ে বিকেল , নেই কোন কুরবানির পশুর চামড়ার ক্রেতা। এলাকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুইবছর চামড়ার দাম নেই বললেই চলে। যে সকল পরিবারে কুরবানি করে থাকে, তারা কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির টাকাটা মসজিদ, মাদ্রাসা বা অসহায় মানুষদের মাঝে বিতরণ করে থাকেন। কিন্তু চামড়া বিক্রি না হওয়াতে দুবছর ধরে তা হচ্ছেনা। সেই সাথে চামড়ার ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করতে সরকারের প্রতি আহব্বান জানান তারা।

বুধবার বিকেলে উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরেসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে পশু কুরবানি দিলেও অনেকেই বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত চামড়া বিক্রি করতে পারেনি। বাসার সামনে চামড়া ফেলে রেখেছেন। পাশাপাশি এলাকাগুলোতে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দেখায় নেই। এর বিপরীতে বিনামূল্যে চামড়া সংগ্রহ করতে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানার লোকজনকে বেশি দেখা গেছে। অনেকেই চামড়া বিক্রি করতে না পেরে মসজিদ, মাদ্রাসা বা এতিমখানায় চামড়া দান করে দিচ্ছেন। বুধবার (২১ জুলাই) আদমদীঘি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গত কয়েক বছর যাবত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কোরবানির চামড়া কিনতেন বাবু লাল ও বিমল। এ বছর তারা ঢিলেঢালা ব্যবসা করছেন। কেন করছেন জানতে চাইলে বিমল বলেন, ‘এবার চামড়ার দাম ভালো যাবে না, এটি আগে থেকেই জানছি। কারণ ট্যানারি মালিকরা এবার কম দামে চামড়া কিনবে। এইসব কারণে এবার ব্যবসা করছি না।

তিনি জানান, এবার এলাকার অন্তত এক শত জন মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া কিনছে না।
মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী বিমল বলেন, খাসি ছাগলের চামড়া ৪০ টাকা, গরুর চামড়া ৩০০-৫০০ টাকায় কিনছেন। তবে বকরি ছাগলের চামড়া কিনছেন না তিনি।

এলাকার সুধীমহল জানান, গত বছর কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ‘পানির দরে’। চামড়ার দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় দেশের অন্যতম এ রপ্তানি পণ্যটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা। উপযুক্ত দাম না পেয়ে অনেকে সেগুলো মাটিতে পুঁতে কিংবা রাস্তায় ফেলে দেন। চামড়ার দাম নিয়ে এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পবিত্র ঈদুল আজহার জন্য কুরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে। গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম ঢাকার জন্য প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরের জন্য ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। এছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ দাম গত বছরের নির্ধারিত দামের চেয়ে কিছুটা বেশি।

এছাড়া বাবু লাল ও বিমলসহ বেশ কয়েকজন আড়তদার জানান, এবারের কোরবানির মৌসুমে সরকার গত বছরের মতো গরুর কাঁচা চামড়া প্রতি বর্গফুট ঢাকার বাইরে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। খাসির কাঁচা চামড়ার দাম সারা দেশে ১৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। সেই হিসেবে একটি বড় গরুর চামড়ার দাম দাঁড়ায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। নির্ধারিত মূল্যে চামড়া কিনেও লোকসানের আশঙ্কায় রয়েছেন। তবে তাঁরা বলছেন- লবন ও শ্রমিকের মজুরি খরচ বাদ দিয়ে পুঁজি উঠবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। আর যদি সঠিক সময়ে ও সঠিক দামে বেচা না যায় তাহলে নির্ঘাত লোকসান গুনতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.