মতিন খন্দকার টিটু :
মরণ ব্যাধি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে বগুড়ার শেরপুরে ছুটি ও বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন একটি কারখানার শ্রমিকরা। এসময় স্থানীয় আঞ্চলিক সড়ক অবরোধও করেন তারা। গত সোমবার (৩০মার্চ) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার সীমাবাড়ী-রানীরহাট আঞ্চলিক সড়ক সংলগ্ন ভবানীপুর ইউনিয়নের শোলাকুঁড়ি (ফকিরতলা) এলাকায় অবস্থিত রনক স্পিনিং মিলস্ লিমিটেড নামের ওই কারখানায় এই ঘটনা ঘটে। এদিকে শ্রমিকদের দাবি উপেক্ষা করে মঙ্গলবারও (৩১মার্চ) ওই কারখানাটি খোলা রাখা হয়। ফলে বাধ্য হয়েই সকালের দিকে কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা। এসময় একই দাবি জানান বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। পরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশের হস্তক্ষেপে সাময়িকভাবে পরিস্থিতি শান্ত হলেও কারখানা এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী শ্রমিক মিষ্টি খাতুন, ইমন হোসেন, বরাত আলী, আনোয়ার হোসেন, শরিফুল ইসলাম, সুমাইয়া আক্তার, রূপালী খাতুন, শিউলি খাতুন, রেহেনা আক্তার, সোলায়মান আলী, আলী আকবর, সোহরাব হোসেন, আজিজুর রহমানসহ কারখানাটির একাধিক শ্রমিক অভিযোগ করে বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি-বেসরকারি অফিসের পাশাপাশি দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কারখানায় কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু রনক স্পিনিং মিল কর্তৃপক্ষের সেসব কোন চিন্তাই নেই। তারা এই মহামারি করোনা ভাইরাস নিয়ে চলা আতঙ্কের মধ্যেও কারখানাটি চালু রেখেছেন। অথচ এই কারখানায় সংক্রামক রোগ থেকে শ্রমিকদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে এখানে কর্মরত সহস্রাধিক শ্রমিকদের মধ্যে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করেই কারখানাটি বন্ধ রাখা দরকার। একইসঙ্গে ছুটি ঘোষণা ও শ্রমিকদের পাওনা বেতন পরিশোধ করা খুবই জরুরি। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষের সেদিকে কোন নজর নেই। এমনকি এই বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করা হলেও তারা কোন প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এতে করে করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরী হয়েছে। তাই দাবি আদায়ে এই বিক্ষোভ কর্মসূচির পথ বেছে নিয়েছেন বলে জানান তারা। ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ভবানীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আবুল কালাম আজাদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে রনক স্পিনিং মিলের শ্রমিকদের ছুটি না দেয়া ও বকেয়া বেতন পরিশোধ না করায় শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরী হয়েছে। এনিয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন-এমন খবর পেয়ে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। উভয়পক্ষের সঙ্গে কথাও বলেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মানতে নারাজ। পাশাপাশি কারখানাটিও খোলা রেখেছেন। তাই যে কোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলেও শঙ্কার কথা জানান তিনি। শেরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পুতুল মোহন্ত জানান, শ্রমিকদের বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা বলে উদ্ভূত পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চাইলে কারখানাটির ব্যবস্থাপক আল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী সেখ এ প্রসঙ্গে বলেন, ওই কারখানায় সৃষ্ট সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী উভয়পক্ষই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে শুনেছি। তবে সেখানে কোন ধরনের আইন শৃঙখলার অবনতি ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে দাবি করেন এই নির্বাহী কর্মকর্তা।