বগুড়ায় ৬৫ শতাংশ মাদক ব্যবসায়ী ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ;পুলিশ সুপারের সু-দৃষ্টি জরুরী

অপরাধ

বিশেষ প্রতিবেদক :
বগুড়ায় তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের ৬৫ শতাংশ এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের ১১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ওই অভিযানের সফলতা নিয়ে সন্দীহান হয়ে পড়েছেন সচেতন নাগরিকরা। তারা জেলায় মাদকের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান পরিচালনার জন্য বগুড়ার পুলিশ সুপারের নেওয়া উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন চলমান এই কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে হবে। অবশ্য পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তালিকাভুক্ত প্রত্যেক মাদক ব্যবসায়ীকে ধরতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী গত ১১ জুলাই এ জেলায় যোগদানের পর তার নির্দেশে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানকে আরও গতিশীল করা হয়। তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার জন্য গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), সবক’টি থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বিট পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার পর থেকে পুলিশ এক যোগে মাদক বিরোধী অভিযানে নেমে পড়ে। পুলিশের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, বগুড়া জেলায় তাদের তালিকাভুক্ত ৯৪৫ মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ২৫৮জন মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে বগুড়া সদরে। এর পরেই ১২০জন মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে পাশের গাবতলী উপজেলায়। এছাড়া শেরপুরে ১০৫জন, ধুনটে ১০০, আদমীঘিতে ৭১, দুপচাঁচিয়ায় ৬৬, সোনাতলায় ৫১, শিবগঞ্জে ৪৯, সারিয়াকান্দিতে ৪০, নন্দীগ্রামে ২৭ এবং শাজাহানপুর ও কাহালুতে ২৯জন করে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অভিযান শুরুর পর থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৫১ দিনে পুলিশ তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৩৩১জনকে গ্রেফতার করেছে। মামলা হয়েছে ২৫৬টি। অভিযানে সদর ও শেরপুর উপজেলা থেকে থেকে ৫১ জন করে মোট ১০২জনকে গ্রেফতার করা হয়। সোনাতলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৪জনকে, ধুনটে ৩১, গাবতলীতে ৩০, দুপচাঁচিয়ায় ৩০, কাহালুতে ২০, শিবগঞ্জে ১৯, নন্দীগ্রামে ১৮, শাজাহানপুরে ১৮, সারিয়াকান্দিতে ১৭ এবং আদমদীঘি উপজেলা থেকে আরও ১২জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে গত আগস্ট মাসে অভিযানকালে ১ হাজার ৮২৪ পিস ইয়াবা, ৪৬৮ পিস নেশা জাতীয় ইঞ্জেকশন, ১১৭ গ্রাম হেরোইন, ৭৬ কেজি গাঁজা, ১৭৭ বোতল ফেন্সিডিল, ৪০ লিটার চোলাই মদ, ১৫০ পিস পেন্টাডল ট্যাবলেট ও ২৬ ক্যান বিয়ার জব্দ করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৩১ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ টাকা বলে জানানো হয়েছে। জেলায় তালিকাভুক্ত ৯৪৫ মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে মাত্র ৩৩১জনকে গ্রেফতারের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তাতে পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানের সফলতা নিয়ে সন্দীহান হয়ে পড়েছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজ। তারা মনে করেন অভিযানটি যে গতিতে চলার কথা সেই অনুযায়ী হচ্ছে না। কারণ ৫১ দিনে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৬১৪ জন বা ৬৫ শতাংশ এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে। সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযানের (সুপ্র) বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কেজিএম ফারুক বলেন, নতুন পুলিশ সুপার যোগদানের পর তিনি বগুড়ায় মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেটি অবশ্যই ইতিবাচক। কিন্তু এখনও বিপুল সংখ্যক মাদক ব্যবসায়ী ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় অভিযানের সফলতার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী হতে পারছি না। আমরা মনে করি অভিযানকে আরও গতিশীল করতে হবে আর তাহলেই জেলাবাসীও উপকৃত হবে। তবে বগুড়ায় পুলিশের মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ জানান, মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে জেলা পুলিশের প্রতিটি ইউনিট রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে। তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না জানিয় তিনি বলেন আমাদের একটাই লক্ষ্য। আর সেটি হলো- বগুড়া থেকে আমরা মাদক নির্মূল করবো। এজন্য জেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.