রাকিব মাহমুদ ডাবলু :
বগুড়া গাবতলী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা ও প্রদর্শন বন্ধ সহ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কেউ এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তিনি ০১ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থ দণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।
চলতি বছরের ২৪ জানুঃ-২১ইং তারিখে বন বিভাগের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এএসএম জহির উদ্দিন আকন্দ স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে এই নিষেজ্ঞাধার কথা জানানো হয়।
আগামী ০৯ ফেব্রুয়ারী পোড়াদহ মেলা হওয়ার কথা রয়েছে মর্মে চিঠিতে বলা হয়েছে,বগুড়ার বিখ্যাত পোড়াদহ মেলায় প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা হয়,যা বন্য প্রাণী(সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
বাংলাদেশে বাঘাইড় মাছ একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। এজন্য আগামী ০৯ ফেব্রুয়ারী-২১ইং তারিখে পোড়াদহ মেলায় বাঘাইড় মাছ কেনাবেচা ও প্রদর্শন বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানিয়ে বগুড়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার,মৎস্য কর্মকর্তা,বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, র্যাব,ইউএনও,ওসি,মেলা কমিটিসহ ১৬ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জেলা সদর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইছামতি নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় এই মেলা বসে। এজন্য মেলাটি সবার কাছে ‘পোড়াদহ’ মেলা নামেই সর্বাধিক পরিচিত।
যেভাবে গোড়াপত্তন,এই মেলা প্রায় ০৪’শ বছর আগের ঘটনা। মেলা স্থলে ছিল একটি বিশাল বটবৃক্ষ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। এক পর্যায়ে স্থানটি পুণ্যস্থানে পরিণত হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে।
প্রতি বছর মাঘ মাসের শেষ বুধবার ওই স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। সমাগত হন দূর-দূরান্তের ভক্ত বৃন্দরা।
কালের বিবর্তনে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। এভাবে গোড়াপত্তন ঘটে পোড়াদহ মেলার।
ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে সব ধর্মের মানুষের মিলন বন্ধনে পরিণত হয় এই মেলা। মেলাটি এক দিনের,তবে উৎসবের আমেজ থাকে সপ্তাহ ব্যাপী। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনরা মিলে এ উৎসব পালন করেন। মেলায় হরেক রকম মাছের সঙ্গে দৈত্যাকার বাঘাইড় মাছও ওঠে। মেলায় প্রতি বছরই ০২’শ থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘাইড় মাছও পাওয়া যায়।
বন বিভাগের চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রওনক জাহান বলেন,চিঠি পেয়েছি। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বগুড়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরকার আনোয়ারুল কবীর আহম্মেদ বলেন,করোনার বিধি-নিষেধের কারণে সম্ভবত এবার মেলা হচ্ছে না। কারণ এখন পর্যন্ত মেলার অনুমোতি পায়নি কমিটি। তারপরও যদি মেলা হয় তাহলে বাঘাইড় মাছ বিক্রি বন্ধে মাইকিং করা হবে। ব্যবসায়ী ও মৎস্যজীবীদের নিয়ে সচেতনা তৈরির জন্য আলোচনাও করা হবে মর্মে জানান।