শীঘ্রিই মন্ত্রিসভায় ব্যাপক রদবদলের সম্ভাবনা

জাতীয়

ডেস্ক রিপোর্ট :
দলীয় সম্মেলন শেষ করার পর এবার মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাস করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন বছরের শুরুতেই এই পুনর্বিন্যাস হতে পারে। গত ৭ জানুয়ারির মন্ত্রিসভার এক বছর যারা ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারেননি তাদের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন হতে পারে। আ.লীগের মধ্যে ত্যাগী, পরীক্ষিত ও পরিচ্ছন্ন অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন যারা দলের সঙ্কট সময়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন, কিন্তু কাউন্সিলে মূল্যায়ন করা হয়নি, এ রকম দুয়েকজনকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা বা পদোন্নতি দেয়া হতে পারে।

আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নতুন বছরে সরকারের মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাস হতে পারে বলে জানিয়েছেন। তিনি জানান, মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাস একটি রুটিনওয়ার্ক। নতুন বছরে এটা হতে পারে।

দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন কিন্তু সরকারেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন এমন কয়েকজনকে আ.লীগের ঘোষিত আংশিক কমিটিতে রাখা হয়নি। এর মধ্যে নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণমন্ত্রী করা হচ্ছে বলে জোর আলোচনা রয়েছে। রাজধানীর চারপাশে নদী দখল উচ্ছেদ অভিযান সফলভাবে পরিচালনা করে তিনি নদীর জায়গা রক্ষা করেছেন। বিভিন্ন রুটে নতুন করে নৌযান চালু ও সদরঘাটকে আধুনিক করে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে এনেছেন। এছাড়া পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণমন্ত্রী হতে পারেন।

এ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমকে পদোন্নতি দিয়ে প্রতিমন্ত্রী করার সম্ভাবনা রয়েছে। সব ঠিক থাকলে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আ. লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন। বর্তমান ঘোষিত আংশিক কমিটিতে তাদের রাখা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারে তাদের কাজে লাগাতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সূত্রগুলো বলছে, আ.লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি দল ও সরকার আলাদা করার নীতিতে অটল থাকেন তা হলে আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ কয়েকজন মন্ত্রী মন্ত্রিত্ব ছাড়ার চাপে থাকবেন। কারণ দলে তাদের সাংগঠনিক কাজ অনেক। এছাড়া আগামী ১০ মার্চের আগে সারা দেশে আ.লীগের জেলা-উপজেলার সম্মেলন শেষ করার টার্গেট রয়েছে আ. লীগের। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাম্প্রতিক রাজাকার তালিকা নিয়ে সরকারকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিলেন। ভুলে ভরা এই তালিকা নিয়ে খোদ সরকারপ্রধান শেখ হাসিনাকে দুঃখ প্রকাশ করতে হয়েছে। এই মন্ত্রণালয়ে রদবদল না হলেও একজন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করা হতে পারে। তথ্যসূত্র: সময়ের আলো

পেঁয়াজ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যাওয়ায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি খুব চাপে রয়েছেন। এর আগে কোরবানির চামড়া নিয়েও একই রকম চাপে পড়েছিলেন এই মন্ত্রী। আসন্ন রদবদলে টিপু মুনশির দপ্তর রদবদল  হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিংবা এ মন্ত্রণালয়ে নতুন কোনো প্রতিমন্ত্রী যুক্ত হতে পারেন।

এছাড়া পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণমন্ত্রী হতে পারেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।

সরকারের নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, কয়েকজন সিনিয়র সাবেক মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতায় সমালোচনার কারণে বিব্রত সরকার। এজন্য কয়েকজন মন্ত্রীকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে অন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।

ব্যর্থতার দায়ে কেউ মন্ত্রিসভা থেকে বাদও পড়তে পারেন। পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা নিয়ে আ.লীগের ভেতরেও সমালোচনার ঝড় বইছে। রেল মন্ত্রণালয়েও কাজের সমন্বয়হীনতা রয়েছে বলে মূল্যায়নে উঠে এসেছে। চালের দাম বৃদ্ধি ও এর নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে। ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে মন্ত্রিসভায় দুয়েকজনকে আনা হতে পারে।

কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী জানান, সরকার গঠনের এক বছর পূর্তি হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। মন্ত্রিসভার সদস্যদের গত বছরের ‘পারফরম্যান্স’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে। যারা ইতোমধ্যে জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে তাদের হয়তো কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হবে। আর পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে দুয়েকজনের পদোন্নতি হতে পারে।

সূত্র জানায়, রদবদলের অংশ হিসেবে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাককে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দেয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার পেতে পারেন অন্য কোনো মন্ত্রণালয়। ২০০৯ সালে আ.লীগ সরকার গঠন করলে আবদুর রাজ্জাককে খাদ্যমন্ত্রী করা হয়। এখন আবদুর রাজ্জাককে কৃষি থেকে সরিয়ে খাদ্যে নিয়ে আসা হলে কৃষিতে আগের মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে ফের বসানো হতে পারে। কৃষিমন্ত্রী হিসেবে তিনি বেশ সফলতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আ.লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রীকে নিয়ে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা সাজান তিনি।

পাঁচ মাসের মাথায় মন্ত্রিসভায় প্রথম পরিবর্তন করা হয়। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে সরিয়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বদলি করা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বরত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়।

ছোট পরিসরে মন্ত্রিসভায় রদবদল ও সম্প্রসারণে ইমরান আহমেদ পদোন্নতি পেয়ে প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হন। আ.লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ফলে মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীর সংখ্যা বেড়ে হয় ২৫। তবে প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা আগের মতোই ১৯ ও উপমন্ত্রীর সংখ্যা তিনজনেই রয়েছে। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ৪৭ জন। এবার মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাস হয়ে এর সংখ্যা ৫৫ হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.