বগুড়ার বিসিকে দুই নৈশ প্রহরী হত্যার রহস্য উদঘাটন, তিন কর্মচারী ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার

অপরাধ

এস আই সুমন,বগুড়া থেকে :
বগুড়া বিসিক মাছুদ মেটাল ইন্ড্রাষ্টির দুই নৈশপ্রহরী চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় ৭২ ঘন্টার মধ্যে মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটন, ৩ জন আসামী গ্রেফতারসহ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লোহার রড, মুক্তিপন দাবীতে ব্যবহৃত ১টি ও ডিজিস্ট হান্নান এর ব্যবহৃত ১টিসহ সর্বমোট ০২(দুই)টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে জেলা গোয়েন্দা বিভাগ ডিবি পুলিশ।

গত ২৫-০২-২০২২ ইং তারিখ বিকাল ০৩.০০ ঘটিকার সময় বগুড়া সদর থানাধীন ফুলবাড়ী বিসিক এর মাছু মেটাল ইন্ডাষ্ট্রির ভিতরে পিছনে পাঁয়ে হাটা গলির ভিতর বিদ্যুৎ এর খুঁটি সংলগ্ন পানির হাউজের ভিতর মাছু মেটাল ইন্ডাষ্ট্রির নাইট গার্ড হান্নান এবং শামসুলের মরদেহ পাওয়া যায়। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম এর সার্বিক দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আলী হায়দার চৌধুরী বিপিএম এর তত্ত্বাবধানে ইং ২৬/০২/২০২২ বিভিন্ন সময়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি বগুড়া’র ইনচার্জ(ওসি) মোঃ সাইহান ওলিউল্লাহ এর নেতৃত্বে বগুড়া ডিবির একটি চৌকস টিম গাজীপুর জেলাসহ বগুড়া জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ০৩ (তিন) জন আসামী গ্রেফতারসহ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত লোহার রড, মুক্তিপন দাবীতে ব্যবহৃত ০১টি ও ডিজিস্ট হান্নান এর ব্যবহৃত ০১টিসহ সর্বমোট ০২(দুই)টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের নাম ও পরিচয়ঃ
১। মোঃ হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা (৩৪), পিতা মৃত মিসবাহুল মিল্লাত নান্না, সাং চকলোকমান, থানা শাজাহানপুর, জেলা বগুড়া।
২। মোঃ সুমন ব্যাপারী (২৭), পিতা- মোঃ সায়েদ হামান ব্যাপারী,
৩। মোঃ রাহাত (২১), পিতা মোঃ বদিউজ্জামান প্রাং, উভয় সাং নারুলী তালপট্টি, থানা ও জেলা- বগুড়া।

উদ্ধারকৃত আলামতঃ
১। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি লোহার রড।
২। একটি SYMPHONY B67 মডেলের বাটন মোবাইল ফোন যাহা ব্যবহার করে অর্থ দাবী করা হয়েছিল।
৩। ডিজিস্ট হান্নান এর ব্যবহৃত একটি বাটন মোবাইল ফোন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ সুমন ব্যাপারী জানায় যে, গত ২৩/০২/২০২২খ্রিঃ তারিখ বুধবার রাত্রী অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় বগুড়া সদর থানাধীন সাতমাথাস্থ খোকন পার্কে সে ও মোঃ হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা এবং নিনজা এর হেলপার মোঃ রাহাত সহ তারা আড্ডা দিচ্ছিল। এমন সময় আসামী সুমন তার আর্থিক দূর্দশার কথা তাদের জানায় এবং আসামী সুমন মোঃ হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা এর কাছে ১০,০০০/- টাকা ধার চায়। টাকা না দিয়ে মোঃ হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা বলে তাহাদের সাথে একটা কাজ করতে হবে তাহলে এক কাজেই ২,০০,০০০/- টাকা পাবে। উক্ত কাজের বিষয়ে সুমন জানতে চাইলে তাহারা বলে যে, ভোরে ফজরের নামাযের পর তুই বিসিক মাছু মেটালে চলে আয়। তখন আসামী সুমন ব্যপারী বলে যে, আমি মাছু মেটালে ঢুকবো কিভাবে সিকিউরিটি গার্ডরা আমাকে ঢুকতে দিবে না। আমি তো এখন আর মাছু মেটালে কাজ করি না। তখন মোঃ হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা তাহাকে বলে সকালে তার মাল ডেলিভারি আছে। মাছু মেটালের ভিতরে ঢোকার ব্যবস্থা সেই করে দিবে। পূর্ব পারিকল্পনা মোতাবেক গত ২৪/০২/২০২২খ্রিঃ তারিখ ভোর অনুমান ০৫.৩০ ঘটিকার পর উল্লেখিত স্থানে আসামী সুমন উপিস্থিত হয়ে মোঃ হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা, রাহাত আরো দুইজন সহযোগীসহ সর্বমোট ০৫(পাঁচ)জন তাহারা মিলিত হয় এবং মোঃ হোসাইন বিন মিল্লাত ৥ নিনজা এর সহায়তায় তারা মাছু মেটালের ভিতরে প্রবেশ করে। এরপর প্রথমে নাইট গার্ড হান্নানকে কৌশলে পানির হাউজের দিকে নিয়ে লোহার রড দিয়ে মাথার পেছনে সজোরে আঘাত করে মৃত্য নিশ্চিত করে পানির হাউজের ভিতরে ফেলে দেয়। এরপর অপর নাইট গার্ড শামসুলকে ঘুম থেকে ডেকে কৌশলে একই জায়গায় নিয়ে তাকেও লোহার রড দিয়ে মাথার পিছনে সজোরে আঘাত করে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক হত্যা নিশ্চিত করে একই হাউজে ফেলে দেয়। অতঃপর আসামী মোঃ হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজা ডিজিস্ট হান্নানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সিমকার্ডসহ আসামী সুমনকে প্রদান করে এবং বলে তুই গাজীপুর চলে যা এবং ঐখান থেকে ডিজিস্ট হান্নানের সিমকার্ড ব্যবহার করে মুক্তিপন বাবদ ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা দাবি করতে থাক বগুড়া আমি সামলাচ্ছি। এভাবে তারা হত্যা করে অপহরণের নাটক সাজায়। তার পর পরিকল্পনা অনুযায়ী ধৃত আসামী সুমন গাজীপুর পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকে ডিজিস্ট হান্নানের ব্যবহৃত মোবইল সিম ব্যবহার করে সু-কৌশলে টাকা দাবি করতে শুরু করে।

ধৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, দীর্ঘদিন যাবত মাছু মেটালের ড্রাইভার হোসাইন বিন মিল্লাত ৥ নিনজা মাছু মেটাল থেকে বিভিন্ন সময়ে মালামাল চুরি করে বাহিরে বিক্রি করে আসিতেছিল। এই বিষয় নিয়ে নাইট গার্ডদের সাথে বনিবনায় সমস্যা হওয়ায় নাইট গার্ডরা বিষয়টি মালিক পক্ষকে জানিয়ে দিবে বলে হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজাকে বললে হোসাইন বিন মিল্লাত নিনজার চুরি বিষয়টি ধরা পড়ে যাওয়ার আশংকায় নিনজা তার সহযোগীদের সহ সু-কৌশলে নাইট গার্ড হান্নান ও শামসুলকে হত্যা করে এই অপহরণের নাটক সাজায়।

এ বিষয়ে বগুড়া সদর থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হইয়াছে। ধৃত আসমীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হইবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.