তাৎক্ষণিক টাকা দিলে রেহাই না দিলে বিভিন্ন ধারায় মামলা
এম শাহীন আলম – (পর্ব -১)
বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রতিটি মোড়ে গাড়ীর কাগজপত্র চেকের নামে চলছে ট্রাফিক পুলিশের বেপরোয়া চাঁদাবাজি,তাৎক্ষণিক চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিলে রেহাই না দিলে বিভিন্ন ধারায় মামলা। তাদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ছোট বড় পরিবহণের মালিক,চালক সহ পরিবহণের সাথে সংশ্লিষ্টরা। রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে টাকা নেয়ার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। দিনে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বিরতিহীন ভাবে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা এবং জানা যায়, প্রতিদিন গাড়ী রিক্যুজেশনের দোহাই দিয়ে কৌশলে বিশেষ করে মাক্রোবাস এবং হাইএক্স প্রাইভেট গাড়ী গুলোতে চলে বেপরোয়া চাঁদাবাজী,
সরেজমিনে গাড়িচালক ও স্থানীয় লোকজনের সূত্রে জানা যায়, সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশের একটি দল,দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত অন্য একটি দল দায়িত্ব পালন কালে গাড়ীর রিক্যুজেশন এবং কাগজপত্র চেকের নামে যানবাহনের সংশ্লিষ্টদের হয়রানি সহ চাহিদা অনুযায়ী চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত থাকে। আবার কিছু কিছু জায়গায় রাত ১০টার পরও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের রাস্তায় অবস্থান নিতে দেখা যায়।
প্রতিটি এলাকার স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান,কর্ণফুলী নতুন ব্রীজ এলাকার উভয় পাশে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে এবং মইজ্জারটেক এলাকায়,শাহ আমানত সেতু, কালুরঘাট, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, টাইগারপাস, অলংকার মোড়, সিটি গেট, সল্টগোলা ক্রসিং ও সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় প্রতিদিন রাত ১০টার পরও নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের রাস্তায় গাড়ী সিগন্যাল দিয়ে দাঁড় করাতে দেখা যায় এবং বেশিরভাগ গাড়ী থেকে মামলার ভয় দেখিয়ে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অহরহ।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে একাধিক সূত্রে আরো জানা যায়,চট্রগ্রামে যারা গাড়ী ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের বেশিরভাগই বর্তমানে নগরীতে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে, এবং চট্রগ্রাম মেট্রো ট্রাফিক প্রশাসনের সাথে যোগসাজশ করে বহু নাম্বার বিহীন সিএনজি চলাচলের সু-ব্যবস্থা করে রেখেছে,এসব নামধারী অপ-সাংবাদিকদের কাজই হলো নিজেদের গাড়ী ট্রাফিক পুলিশ থেকে সেইভ করা আর অন্যের গাড়ী ট্রাফিক পুলিশের কাছ থেকে ছাড়ানোর জন্য নিয়মিত দালালি করা, এসব নামধারী কার্ডধারী হলুদ সাংবাদিকদের এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ট্রাফিক প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে সচেতন মহল,
সরেজমিনে অনুসন্ধানে বিভিন্ন পরিবহণের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়,চট্রগ্রাম মেট্রো এলাকায় সবচেয়ে বেশি অনিয়ম,হয়রানি আর পুলিশের চাঁদাবাজী হয় “চট্রগ্রাম বন্দর ট্রাফিক বিভাগের বেশিরভাগ এলাকায়,বন্দর ট্রাফিক পুলিশের বেশি অনিয়মের কারণ জানতে চাইলে পরিবহণ সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা জানান,বর্তমান টিআই প্রশাসন ফারুক স্যার আসার পর থেকে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজী অনেক বেড়ে গেছে,বন্দর এলাকায় প্রবেশ এবং বাহির হওয়ার মতো বেশ কয়েকটি সংযোগ সড়ক রয়েছে,তার মধ্যে চট্রগ্রাম – কক্সবাজার হাইওয়ে সড়কের কর্ণফুলী নতুন ব্রীজের দক্ষিণপাড় মইজ্জারটেক ট্রাফিক পুলিশ বক্স, চট্রগ্রামের প্রাণ কেন্দ্র আগ্রাবাদ সহ বেশিরভাগ মালামাল এবং পণ্যবাহী গাড়ী গুলো চলাচল করায়,এই বন্দর ট্রাফিক বিভাগের ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি এবং অনিয়মের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে গাড়ী রিক্যুজেশনের নামে ব্যাপক হয়রানি আর ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগও চরমে,এছাড়াও ছোট এবং মাজারী মালামাল ও পণ্য বাহী পরিবহণ সমূহে মাসিক টোকেন সহ নাম্বার বিহীন বিভিন্ন সিএনজিতেও মাসিক টোকেন,এছাড়া পণ্য বাহী সকল ট্রাক কভার ভ্যানে তো নিয়মিত ঘুষ না দিলে বন্দর এলাকায় রাস্তায় চলাচল করাই অসম্ভব বলে জানান ভোক্তভোগী পন্য / মালবাহী ট্রাক,লরী,কভারভ্যানের হেলপার এবং চালকরা, এই ট্রাফিক বিভাগের বিষয়ে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে,আগামী সংখ্যায় আরো তথ্য সহ নিউজের দ্বিতীয় পর্বে প্রকাশ করা হবে,
এছাড়াও অনুসন্ধানকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণ ও উত্তর পাশ, কালুরঘাট, নতুন রাস্তার মাথা, আক্সিজেন, ২ নম্বর গেট, বহদ্দরহাট, জিওসি, টাইগার পাস, কোতোয়ালি মোড়, সিটি গেট, একে খান, অলংকার, নয়াবাজার, বড়পোল, আগ্রাবাদ, বারেক বিল্ডিং, নিমতলা বিশ্বরোড, সল্টগোলা ক্রসিং, ইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিংসহ প্রায় প্রতিটি মোড়েই নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে গাড়ী রিক্যুজেশনের নামেও প্রকাশ্যে চলছে ট্রাফিক পুলিশের দূরদর্শ বেপরোয়া চাঁদাবাজি, যা ভূক্তভোগী বহু গাড়ীর চালকরা জানান।
সরেজমিনে চট্রগ্রামের প্রতিটি মোড়ে মাত্র কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে নজর করলে চোখে পড়বে ট্রাফিক পুলিশের অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজির দৃশ্য। বৈধ কিংবা অবৈধ যা-ই হোক, সিগন্যাল দিলেই প্রতিটি গাড়ি থেকে দিতে হবে টাকা। তাৎক্ষণিক চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলেই বিভিন্ন ধারায় একাধিক মামলা দেয়ার অভিযোগ ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে।
বন্দর নগরীর নিমতলী এলাকার জসিম নামের এক ট্রাকচালক জানান, ট্রাফিক পুলিশ সিগন্যাল দিলেই বুঝতে হবে তাদের টাকা দিতে হবে।তারা টাকা না পেলে যেকোনো অজুহাতে মামলা দেবেই, তিনি আরো জানান, লজ্জার বিষয় হলো ট্রাফিক পুলিশ ১০-২০ টাকা পর্যন্তও গাড়ীর ড্রাইভারদের কাছ থেকে ঘুষ খায়,ড্রাইভার জসিম বলেন, আমার মনে হয় রাস্তায় চলাচলকারী একটি ট্রাকও ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি এবং চাঁদাবাজী থেকে রেহাই পায় না।
নগরীর কদমতলী এলাকায় ট্রাক স্ট্যান্ডে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ড্রাইভার এবং স্হানীয় লোকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে পতেঙ্গা সিমেন্ট ক্রসিং থেকে নিমতলা বিশ্বরোড পর্যন্ত প্রতিদিনই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় শুধু ট্রাফিক পুলিশ নয়, সাথে আছে সোর্স সিন্ডিকেট। সোর্সরাও সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় ছোট বড় যানবাহন থেকে টাকা নেয়,ট্রাক, কভার ভ্যান এবং লরী ড্রাইভাররা জানান,চট্রগ্রাম সিটি এলাকায় ছোট বড় মালবাহী গাড়ী গুলোর সাথে ট্রাফিক পুলিশের মাসিক টোকেন বাণিজ্য থাকার পরও এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়।
বন্দর এলাকার ছোট বড় পরিবহণের ড্রাইভারদের সাথে কথা বললে তারা আক্ষেপ করে বলেন, যেকোন সময়ে ট্রাফিক বন্দর জোন এলাকায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কোনো গাড়ি যদি রাস্তার আশপাশে দাঁড়ায় সেটি রেকার দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় টাইগার পাস ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে। এসব গাড়ি থেকে ট্রাফিক পুলিশের তাৎক্ষণিক কর্মরতরা স্হানীয় দালাল সোর্সদের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন। এই টাকা থেকে ট্রাফিক বিভাগে সকলস্তরের কর্মকর্তার জন্য ভাগ যায় বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।
চট্রগ্রাম (মেট্রো) ট্রাফিক বিভাগের সার্বিক অনিয়মের বিষয়ে জানাতে এবং বক্তব্য ও মন্তব্য জানতে চট্রগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া ( বিপিএম) কে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি, এই মেট্রোর ট্রাফিক বিভাগের অনুসন্ধান অব্যাহত, অনিয়ম বন্ধ হওয়া না পর্যন্ত ধারাবাহিক এবং বিরতিহীন ভাবে প্রতি সংখ্যায় নতুন নতুন অনিয়মের তথ্য প্রকাশ করা হবে,
তথ্য সূত্র : সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রা