নারায়ণগঞ্জ জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এখন অনিয়ম দালাল আর দুর্নীতির আতুঁরঘর

অপরাধ

স্হানীয় প্রত্যেক্ষদর্শীদের দাবি উপপরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান ই দালাল সৃষ্টির মুলহোতা

 

এম শাহীন আলম :
নারায়ণগঞ্জ জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস এখন অনিয়ম, দালাল আর দুর্নীতির আতুঁরঘর। যেখানে দালাল ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়াটা যেন এক স্বপ্ন। দালাল ছাড়া কাগজপত্র নিয়ে গেলেই সেবার নামে গ্রাহকদের কাগজপত্রে ভূল খুঁজে বের করা কিংবা ভূল তৈরি করে আবেদন বাতিল করে গ্রাহকদের হযরানী যেন এই অফিসটির রীতি রেওয়াজ।এই পাসপোর্ট অফিসটিতে একজন গ্রাহক দালাল ছাড়া আসলেই গ্রাহকের ভূলক্রটি আর হয়রানির অন্ত নেই আর যখন গ্রাহকরা দালালের সাথে কন্ট্রাক করে আসেন তখন কোন ভুল কিংবা জবাব দিহিতা ছাড়াই পাচ্ছেন কাঙ্খিত স্বপ্নের পাসপোর্টটি। আর প্রতিটি রেগুলার পাসপোর্টের জন্য গ্রাহকদের গুনতে হয় সর্বনিন্ম সাড়ে ৮ হাজার টাকা থেকে শুরু আর যদি কাগজপত্রে কোন সামান্যতম ক্রুটি থাকে তাহলে তো কথাই নেই। কন্ট্রাকে না আসলে হয়রানি কত প্রকার ও কি কি একজন সেবা গ্রহিতাই বুঝে আর ঘুষ হলে যত বড় সমস্যা হউক না কেন খুব সহজে সমাধান হয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটিতে।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত সময় গুলোতে স্হানীয় জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে দালাল চক্রের সদস্যদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হলেও এসব দালাল চক্রের সাথে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকায় তারা তাদের এসব অনিয়ম অব্যাহত রেখেছেন।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, এই পাসপোর্ট অফিসটিতে দালালের মাধ্যমে ঘুষ না দিলে হয়রানির শেষ নেই। দালালের মাধ্যম ছাড়া গ্রাহকরা আবেদন করবেন কিন্তু মঞ্জুর হওয়াটা তার ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন গ্রাহক সরাসরি দালাল ছাড়া আবেদন করলে তার আবেদনে ভুল ক্রুটির শেষ থাকে না গ্রাহকদের বিভিন্ন অজুহাতে ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। আরো জানা যায়, গ্রাহকের কাগজপত্রে কোন প্রকার সমস্যা না থাকার পরও সরকারি ফি ছাড়াও তাকে দালালের মাধ্যমে অফিস খরচের নামে গুনতে হয় সর্বনিন্ম ১৫ শ টাকা থেকে শুরু করে দালালদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা। দালালদের সাথে কন্ট্রাক না করে অফিস খরচের নামে ঘুষের টাকা না দিলে বিভিন্ন অজুহাতে গ্রাহকদের আবেদন বাতিল করা হচ্ছে বলে গ্রাহকদের এমন অভিযোগ অহরহ।

সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে কথা হয় সোনারগাঁও থেকে আসা মিজান নামের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে আসা এক সেবা গ্রহিতার সাথে। মিজান বলেন,আমি এবার সহ দুইবার আসলাম প্রথমবার নিজেই আবেদন জমা দিয়েছি কিন্তু আমার কাগজপত্রে ক্রুটি দেখিয়ে আমার আবেদনটি বাতিল করেছে।দ্বিতীয়বার আসছি সকাল থেকে ঘুরছি,ঘুরে যা দেখলাম এখানে দালাল ছাড়া আবেদন করে কোন কাজ হবে বলে মনে হয় না। এখন বাধ্য হয়ে রফিক নামের এক দালালের সাথে সাড়ে ৯ হাজার টাকা কন্ট্রাক করেছি। কিছুক্ষন পর দালাল বললে লাইনে দাঁড়িয়ে কাগজপত্র জমা দেবো।

নারায়ণগঞ্জ চাষারা থেকে আসা আলামিনের এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি এর আগে পাসপোর্ট করেছি জন্ম নিবন্ধন দিয়ে এখন আইডিকার্ড দিয়ে স্মার্ট পাসপোর্ট পেতে আবেদন করতে যাই তখন আমার জন্ম নিবন্ধনের সাথে আইডি কার্ডে আমার বাবার নামের একটা অংশ সামান্য ভুল থাকায় আমার আবেদনটি বাতিল করেছে। গেইট দিয়ে বের হতেই আসিফ নামের এক দালাল জানতে চায় আবেদন করেছি কিনা।তার কাছে বিষয়টি খুলে বললে দালাল আসিফ জানান, “এইটা কোন বিষয় হলো এর চেয়ে বড় বড় কাম আমি করি ভিতরের স্যারের সাথে কথা বলে সমাধান করে দেবো তবে এই বিষয়ে কারো সাথে আলাপ করা যাবে না।তবে সরকারি ফি ছাড়া এইডার জন্য বারতি ৫ হাজার টাকা দিতে হবে” আলামিন জানান, পাসপোর্টটা আমার খুব জরুরি তাই বাধ্য হয়ে আসিফ নামের দালালের সাথে সর্বো মোট ১৪ হাজার টাকা কক্ট্রাক করেছি কিছুক্ষণ পর কাগজপত্র জমা দেবো। আলামিন জানান, এখানে যারা পাসপোর্ট করতে আসবে বেশিরভাগ লোকই দালালের মাধ্যমে কাজ করতে হয়। দালাল ছাড়া কাজ করার সুযোগ খুব কম। দালাল ছাড়া গেলে পদে পদে হয়রানি হতে হয়।

নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধির থেকে পাসপোর্ট করতে আসা কাইয়ুম জানান, আমি পেশায় একজন ছাত্র আমি স্টুডেন্ট ভিসায় বিদেশে যাবো আমি আমার এক কাকার মাধ্যমে কথা বলে ১১ হাজার টাকা কন্ট্রাকে আবেদন সহ কাগজপত্র জমা দিয়েছি গত মাসে, আজ এসে পাসপোর্ট হাতে পেয়েছি।দালালের মাধ্যমে কথা বলে কাগজপত্র জমা দেওয়ার কারনে আমার পাসপোর্ট পেতে কোন সমস্যা হয়নি এবং আমাকে শুধু নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম ছাড়া কিছুই জিগাস করেনি।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে এমন আরো বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সাথে কথা হয়,যারা এই অফিসটিতে হয়রানির শিকার হয়েছেন।

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়,নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের আশপাশের প্রতিটি কম্পিউটারের দোকান ই দালাল চক্রের প্রধান আখড়া। প্রতিটি দোকানী এবং তাদের কিছু সাঙ্গ পাঙ্গ দালালির সাথে সরাসরি জড়িত। এসব দালালদের নিয়ন্ত্রণ,নগদ লেনদেন, বিভিন্ন স্তরের গোয়েন্দা সংস্হাও সাংবাদিক ম্যানেজ সহ সার্বিক সহযোগিতা করে প্রতিষ্ঠানটির উপ সহকারি পরিচালক মোঃ রুকুনুজ্জামান ভুইয়া এবং অফিস সহকারি মোঃ কামাল হোসেন।

সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের আশপাশের স্হানীয় লোকজনের সাথে পাসপোর্ট অফিসটির সেবা সম্পর্কে জানতে চাইলে একাধিক স্হানীয় লোকজন ও ভুক্তভোগীরা জানায়, এই পাসপোর্ট অফিসের অনিয়মের শেষ নেই, প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরাও পাসপোর্টের দালালের কাজ করে আর বাহিরের দালাল ছাড়া তো পাসপোর্ট পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার।স্হানীয়রা জানান, বর্তমান যে উপ পরিচালক আছেন তাকে দেখতে খুব ভদ্র লোকের মতো দেখা যায় আর কথাও বলেন সুন্দর করে তিনি আসার পর থেকে এই অফিসটিকে অনিয়ম বেড়ে গেছে এলাকার দালাল শ্রেনীর লোকদের সাথে তার সখ্যতা। এসব দালালরা এলাকার হওয়ায় কেউ সাহস করে প্রতিবাদ করে না। অফিসের ভিতর কেউ কোন অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তাদের হয়রানি করানো সহ বাহিরে আসলে দালাল চক্রের দুষ্টু লোকদের দিয়ে হেনস্তা পর্যন্ত করানো হয়। স্হানীয় সেবা গ্রহিতা ও প্রত্যেক্ষদর্শীদের অভিযোগ একটা অফিসের বড় অফিসার যদি ঠিক থাকে তাহলে কখনো একটা অফিসে অনিয়ম হয় না। বর্তমান উপ পরিচালক আসার পর থেকে যেভাবে গ্রাহক বিভিন্ন অজুহাতে হয়রানি হচ্ছে দালালরা যেভাবে দাপটের সাথে অনিয়ম করে যাচ্ছে তাতে করে তো মনে হচ্ছে দালাল সৃষ্টির মুলহোতা উপ পরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান তিনি নিজেই। স্হানীয় প্রত্যেক্ষদর্শীদের প্রশ্ন এই পাসপোর্ট অফিস থেকে যদি দালালদের সহযোগিতা না করা হতো দালালরা যদি ইনকাম করতে না পারতো তাহলে এখানে কখনো দালাল সৃষ্টি হতো না। সবার একটাই অভিযোগ উপপরিচালক,উপ সহকারি পরিচালক যদি ঘুষখোর না হতো তাহলে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কখনো গ্রাহক হয়রানি,অনিয়ম,দালাল চক্র সৃষ্টি হতো না। সেবা নিতে আসা গ্রাহক সহ স্হানীয়দের দাবি গ্রাহক হয়রানি বন্ধে ,ঘুষ বনিজ্য ও দালাল চক্র নির্মূলে যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহনে পাসপোর্ট এর ডিজি মহোদয়ের দৃষ্টি আর্কষণ করছেন তারা।

নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের উপপরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান এর সাথে তার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে অনিয়মের বিষয় গুলা অবগত করলে তিনি জানান,আমি কোন অনিয়মের বিষয়ে অবগত নই।যেহেতু আপনি অনিয়মের বিষয় গুলা জানিয়েছেন আপনার কাছে কোন অনিয়মের সঠিক তথ্য থাকলে আমাকে দিয়ে সহযোগিতা করলে আমি উপকৃত হবো। তখন উপপরিচালক গাজী মাহমুদুল হাসান কে অনিয়মের কিছু ভিডিও চিত্র দেওয়ার পরও তিনি কোন ব্যবস্হা নেননি বলে পুনরায় অনুসন্ধানে অনিয়ম চলমানের চিত্র দেখা যায়।
সর্বো শেষ অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য চেয়ে তার মুঠো ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন কলটি রিসিভ করেননি।
অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহন না করা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে নিউজ প্রকাশ অব্যাহত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.