টাকা পাচারকারীদের নাম প্রকাশ করতে হবে : রাজশাহীতে মেনন

রাজনীতি

বিশেষ প্রতিনিধি :
রাজশাহী, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে তাদের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। তাহলে অনেক পরিচিত মুখও দেখা যাবে। শনিবার বিকালে ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। রাশেদ খান মেনন বলেন, যতটাকা পাকিস্তানিরা নিয়ে গেছে, তার চেয়েও বেশি টাকা এই ক’বছরে পাচার হয়ে গেছে। পার্লামেন্টে যখন ঋণখেলাপিদের নাম প্রকাশ করা হয় তখন একইসঙ্গে অবশ্যই টাকা পাচারকারীদের নাম প্রকাশ করতে হবে। তখন আমরা দেখব, অনেক পরিচিত লোক রয়েছেন। অনেক পরিচিত নেতা রয়েছেন, যাদের কথা লুকানোর জন্যই নাম প্রকাশ করা হয় না।

তিনি বলেন, প্রতিদিন ব্যাংক লুট হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক যখন দেওলিয়া হয়ে যাবে, তখন এর দায় নাকি নিতে হবে জনগণকে। কেন জনগণ ব্যাংক ডাকাতদের দায় নেবে? এক টাকা নয় দু’টাকা নয়, ২০১৪ সালে এক বছরে ৭৬ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। আমি বলি, আজকে সেই টাকার পরিমাণ পাঁচ লক্ষ হাজার কোটি টাকার ওপরে। তা দিয়ে একটি বাজেট আমরা তৈরি করতে পারতাম। দুদক সে সম্পর্কে কথা বলে না। দুদকের চেয়ারম্যান সেসব নিয়ে কথা বলেন না।

দেশে এখন উন্নয়ন হলেও বৈষম্য বাড়ছে উল্লেখ করে মেনন বলেন, আজকে উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু বৈষম্য হচ্ছে পাহাড়সমান। আমার মাথাপিঁছু আয় ১৯০৯ ডলার। কিন্তু যারা দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন তাদের দৈনিক মাথাপিঁছু আয় এক ডলারেরও কম। এই বৈষম্য কেবলমাত্র অংকের হিসাবে নয়। ’৭৪ সালে আমাদের ছিলো চারজন কোটিপতি। আর এখন আমাদের কোটিপতির সংখ্যা এক লক্ষ ২২ হাজার। কেবল কোটিপতি নয়, এরা কোটি কোটি কোটিপতি। তাদের জীবনযাপন, তাদের আয়েশ, তাদের বিলাস বাংলাদেশের যুবকদেরকে হতাশ করে।

চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিয়ে তিনি বলেন, যখন কেউ ধরা পড়ে তখন বলেন, দল কোনো দায় নেবে না। তাহলে কে দায় নেবে? বনে থাকলে দাপিয়ে বেড়াবেন। আর বনের মধ্যে যখন অন্যায় করে ধরা পড়ে যাবেন তখন বলবেন, দায় নেব না। এই দায় নিতে হবে। যে সমস্ত ভোগবাদী নীতি আমার দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সেই নীতি বাদ দিয়ে আমরা শ্লোগান তুলেছি ২১ দফার ভিত্তিতে নায্যতা-সমাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার প্রতি আস্থা রাখতে হবে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, সকল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। ২১ দফা দাবি আমরা দিয়েছি। আজ রাজশাহী বিভাগীয় জনসভা হলো। এর আগে আমরা বরিশাল, চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, রংপুরে করেছি। আরও করবো। এগুলো প্রস্তুতি। আমাদের কথা যদি না শোনেন, দাবি যদি না মানেন রাজপথে লড়াইয়ের মাধ্যমেই আমরা দাবি আদায় করব। অবশ্যই আমরা বিজয় অর্জন করব।

তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে সামাজিক ন্যায়বিচার, সমতা, মানবিক মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। আমরা সেই সংবিধানের পথে হাঁটতে চাই, চলতে চাই। দেশ উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হবে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হবে। তখন যেন আবার শ্লোগান দিয়ে বলতে না হয়- কেউ খাবে আর কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না।

জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি জেলা বাজেট প্রণয়নের দাবি জানান। বলেন, এলাকায় এলাকায় যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে তা দূর করতে প্রতিটি জেলার আলাদা বাজেট হওয়া প্রয়োজন। শুধুমাত্র বড় বড় বিল্ডিং উঠে যাওয়া আর প্রশস্ত রাস্তা বাংলাদেশের উন্নয়ন নয়। প্রত্যেকটি মানুষের সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকারই হচ্ছে উন্নয়ন। সে ব্যাপারে আমাদের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সংবিধানেই সামাজিক বৈষম্য রোধ করার কথা লেখা আছে। তাহলে কেন জেলা বাজেট করা হবে না?

বাদশা বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থার ভেতরে এমন উইপোকা ঢুকে পড়েছে যে এখন এই দেশে রাজনীতি করে বাড়িতে টাকার গুদাম তৈরি করা যায়। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নো টলারেন্স বলা হয়েছিল। শুধু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ দেখতে চাই না। নির্দেশ বাস্তবায়ন দেখতে চাই। রাজনৈতিক পরিচয়ে যারা বাড়িতে টাকার গুদাম তৈরি করতে পারে তাদের ব্যাপারে দায় কার? শুধু ব্যক্তির অপরাধ নয়।

তিনি বলেন, আমাদের এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। হাজার হাজার বেকার কর্মসংস্থানের আবেদন করেন। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে নাকি কর্মসংস্থান হবে। যতটুকু শুনেছি, ২৩ হাজার দরিদ্র পরিবারের সন্তান চাকরির জন্য এখানে আবেদন করেছে। শুনেছি ২৩ জন লোকের নাকি চাকরি হবে। ২৩ হাজার আবেদন করে যদি ২৩ জন লোকের চাকরি হয় তাহলে এই চাকরির কী প্রয়োজন আছে! আবেদনের জন্য এই বিজ্ঞপ্তি দেয়ার কী প্রয়োজন আছে আমি জানি না।

জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য মোস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি, মাহমুদুল ইসলাম মানিক ও কামরুল আহসান। সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু। জনসভা পরিচালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি রোধ, কৃষকের নায্যমূল্য নিশ্চিত, দেশে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ও অর্থনৈতিক লুটপাট বন্ধ করা, নারী ও শিশু ধর্ষণ ও সহিংসতা প্রতিরোধ, মাদকাশক্তি নিরোধ এবং সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গি প্রতিরোধসহ সামাজিক ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে দেশের সব বিভাগীয় শহরে জনসভা করছে ওয়ার্কার্স পার্টি। এর অংশ হিসেবেই রাজশাহীতে এ জনসভা হলো। এতে বিভাগের আট জেলা থেকে পার্টির প্রায় লক্ষাধিক নেতাকর্মী যোগ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.